অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12
  13. 13
  14. 14
  15. 15
  16. 16
  17. 17
  18. 18
  19. 19
  20. 20
  21. 21
  22. 22
  23. 23
  24. 24

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

লূক 1 কিতাবুল মোকাদ্দস (BACIB)

উৎসর্গ

1. প্রথম থেকে যাঁরা স্বচক্ষে দেখেছেন এবং কালামের সেবা করে এসেছেন, তাঁরা আমাদের কাছে সবকিছু যেমন জানিয়েছেন,

2. সেই অনুসারে অনেকেই আমাদের মধ্যে সমপূর্ণভাবে গৃহীত বিষয়াবলির বিবরণ লিপিবদ্ধ করতে আরম্ভ করেছেন,

3. সেজন্য আমিও প্রথম থেকে সকল বিষয় সবিশেষ অনুসন্ধান করেছি বলে, হে মহামহিম থিয়ফিল, আপনাকে সুবিন্যস্ত একটি বিবরণ লেখা ভাল মনে করলাম;

4. যেন, আপনি যেসব বিষয় শিক্ষা পেয়েছেন, সেসব সত্যি কি না তা জানতে পারেন।

বাপ্তিস্মদাতা ইয়াহিয়ার জন্মের আগাম-সংবাদ

5. এহুদিয়ার বাদশাহ্‌ হেরোদের সময়ে অবিয়ের পালার মধ্যে জাকারিয়া নামে এক জন ইমাম ছিলেন; তাঁর স্ত্রী হারুন-বংশীয়া, তাঁর নাম এলিজাবেত।

6. তাঁরা দু’জন আল্লাহ্‌র সাক্ষাতে ধার্মিক ছিলেন, প্রভুর সমস্ত হুকুম ও নিয়ম অনুসারে নির্দোষভাবে চলতেন।

7. তাঁদের কোন সন্তান ছিল না, কেননা এলিজাবেত বন্ধ্যা ছিলেন এবং দু’জনেরই অধিক বয়স হয়েছিল।

8. একদিন যখন জাকারিয়া নিজের পালা অনুসারে আল্লাহ্‌র সাক্ষাতে ইমামীয় দায়িত্ব পালন করছিলেন,

9. তখন ইমামীয় কাজের প্রথানুসারে গুলিবাঁট ক্রমে তাঁকে প্রভুর পবিত্র স্থানে প্রবেশ করে ধূপ জ্বালাতে হল।

10. সেই ধূপ জ্বালাবার সময়ে সমস্ত লোক বাইরে থেকে মুনাজাত করছিল।

11. তখন প্রভুর এক জন ফেরেশতা ধূপ-গাহের ডান পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে দর্শন দিলেন।

12. তাঁকে দেখে জাকারিয়ার মন অস্থির হয়ে উঠলো, ভীষণ ভয় তাঁকে পেয়ে বসলো।

13. কিন্তু ফেরেশতা তাঁকে বললেন, জাকারিয়া, ভয় করো না, কেননা তোমার ফরিয়াদ গ্রাহ্য হয়েছে, তোমার স্ত্রী এলিজাবেত তোমার জন্য পুত্র প্রসব করবেন ও তুমি তার নাম ইয়াহিয়া রাখবে।

14. আর তোমার আনন্দ ও উল্লাস হবে এবং তার জন্মে অনেকে আনন্দিত হবে।

15. কারণ সে প্রভুর সম্মুখে মহান হবে এবং আঙ্গুর-রস বা সুরা কিছুই পান করবে না; আর সে মায়ের গর্ভ থেকেই পাক-রূহে পরিপূর্ণ হবে;

16. এবং বনি-ইসরাইলদের মধ্যে অনেককে তাদের আল্লাহ্‌ মালিকের প্রতি ফিরাবে।

17. সে তাঁর সম্মুখে ইলিয়াসের রূহে ও পরাক্রমে গমন করবে, যেন পিতাদের অন্তর সন্তানদের প্রতি ও অবাধ্যদেরকে ধার্মিকদের বিজ্ঞতায় চলবার জন্য ফিরাতে পারে, প্রভুর জন্য সুসজ্জিত এক দল লোককে প্রস্তুত করতে পারে।

18. তখন জাকারিয়া ফেরেশতাকে বললেন, কেমন করে আমি তা জানতে পারব? কেননা আমি বৃদ্ধ এবং আমার স্ত্রীরও অনেক বয়স হয়েছে।

19. ফেরেশতা জবাবে তাঁকে বললেন, আমি জিবরাইল, আল্লাহ্‌র সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকি, তোমার সঙ্গে কথা বলবার ও তোমাকে এসব বিষয়ের সুখবর দেবার জন্য প্রেরিত হয়েছি।

20. আর দেখ, এসব যেদিন ঘটবে, সেদিন পর্যন্ত তুমি নীরব থাকবে, কথা বলতে পারবে না; যেহেতু আমার এই সকল বাক্য যা যথাসময়ে সফল হবে, তাতে তুমি বিশ্বাস করলে না।

21. আর লোকেরা জাকারিয়ার অপেক্ষা করছিল এবং বায়তুল-মোকাদ্দসের মধ্যে তাঁর বিলম্ব হওয়াতে তারা আশ্চর্য জ্ঞান করতে লাগল।

22. পরে তিনি বাইরে এসে তাদের কাছে কথা বলতে পারলেন না; তখন তারা বুঝলো যে, বায়তুল-মোকাদ্দসের মধ্যে তিনি কোন দর্শন পেয়েছেন; আর তিনি তাদের কাছে নানা সঙ্কেত করতে থাকলেন এবং বোবা হয়ে রইলেন।

23. পরে তাঁর এবাদতের সময় পূর্ণ হলে তিনি নিজের বাড়িতে চলে গেলেন।

24. এই সময়ের পরে তাঁর স্ত্রী এলিজাবেত গর্ভবতী হলেন; আর তিনি পাঁচ মাস নিজেকে সঙ্গোপনে রাখলেন, বললেন,

25. লোকদের মধ্যে আমার অপযশ খণ্ডাবার জন্য এই সময়ে দৃষ্টিপাত করে প্রভু আমার প্রতি এরকম ব্যবহার করেছেন।

ঈসা মসীহের জন্মের আগাম সংবাদ

26. পরে ষষ্ঠ মাসে জিবরাইল ফেরেশতা আল্লাহ্‌র কাছ থেকে গালীল দেশের নাসরত নামক নগরে এক জন কুমারীর কাছে প্রেরিত হলেন,

27. তিনি দাউদ-কুলের ইউসুফ নামক এক জন পুরুষের বাগ্‌দত্তা ছিলেন; সেই কুমারীর নাম মরিয়ম।

28. ফেরেশতা গৃহের মধ্যে তাঁর কাছে এসে বললেন,আস্‌সালামো আলাইকুম!তুমি মহা অনুগ্রহ লাভ করেছ;প্রভু তোমার সহবর্তী।

29. কিন্তু তিনি সেই কথায় ভীষণ অস্থির হয়ে উঠলেন, আর মনে মনে ভাবতে লাগলেন, এ কেমন সালাম?

30. ফেরেশতা তাঁকে বললেন, মরিয়ম, ভয় করো না, কেননা তুমি আল্লাহ্‌র কাছ থেকে রহমত লাভ করেছ।

31. আর দেখ, তুমি গর্ভবতী হয়ে পুত্র প্রসব করবে ও তাঁর নাম ঈসা রাখবে।

32. তিনি মহান হবেন, আর তাঁকে ইবনুল্লাহ্‌ বলা হবে; আর প্রভু আল্লাহ্‌ তাঁর পিতা দাউদের সিংহাসন তাঁকে দেবেন;

33. তিনি ইয়াকুব-কুলের উপরে যুগে যুগে রাজত্ব করবেন ও তাঁর রাজ্যের শেষ হবে না।

34. তখন মরিয়ম ফেরেশতাকে বললেন, এটি কিভাবে হবে, কেননা আমি তো এক জন কুমারী?

35. ফেরেশতা জবাবে তাঁকে বললেন, পাক-রূহ্‌ তোমার উপরে আসবেন এবং সর্বশক্তিমানের শক্তি তোমার উপরে ছায়া করবে; এই কারণ যে পবিত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবেন, তাঁকে ইবনুল্লাহ্‌ বলা হবে।

36. আর দেখ, তোমার জ্ঞাতি যে এলিজাবেত, তিনিও বৃদ্ধ বয়সে পুত্র-সন্তান গর্ভে ধারণ করেছেন; লোকে যাঁকে বন্ধ্যা বলতো, কিন্তু এখন তাঁর ছয় মাস চলছে।

37. কেননা আল্লাহ্‌র কোন কালাম শক্তিহীন হবে না।

38. তখন মরিয়ম বললেন, দেখুন, আমি প্রভুর বাঁদী; আপনার কথা অনুসারে আমার প্রতি ঘটুক। পরে ফেরেশতা তাঁর কাছ থেকে চলে গেলেন।

বিবি এলিজাবেতের বাড়িতে মরিয়ম

39. সেই সময়ে মরিয়ম উঠে তাড়াতাড়ি পাহাড়ী অঞ্চলে এহুদার একটি নগরে গেলেন,

40. এবং জাকারিয়ার বাড়িতে প্রবেশ করে এলিজাবেতকে সালাম জানালেন।

41. আর এরকম হল, যখন এলিজাবেত মরিয়মের সালাম শুনলেন, তখন তাঁর গর্ভে শিশুটি নেচে উঠলো; আর এলিজাবেত পাক-রূহে পূর্ণ হলেন এবং উচ্চরবে বললেন,

42. নারীদের মধ্যে তুমি ধন্য এবং ধন্য তোমার গর্ভের ফল।

43. আর আমার প্রভুর মা আমার কাছে আসবেন, আমার এমন সৌভাগ্য কোথা থেকে হল?

44. কেননা দেখ, তোমার সালামের আওয়াজ আমার কানে প্রবেশ করা মাত্র শিশুটি আমার জঠরে উল্লাসে নেচে উঠলো।

45. আর তুমি ধন্যা, কেননা তুমি ঈমান আনলে, কারণ প্রভু তাঁকে যা যা বলেছেন সেসব সিদ্ধ হবে।

মরিয়মের প্রশংসা গজল

46. তখন মরিয়ম বললেন,আমার প্রাণ প্রভুর মহিমা ঘোষণা করছে,

47. আমার রূহ্‌ আমার নাজাতদাতাআল্লাহ্‌তে উল্লসিত হয়েছে।

48. কারণ তিনি তাঁর বাঁদীর নিচ অবস্থারপ্রতি দৃষ্টিপাত করেছেন;কেননা দেখ, এখন থেকে পুরুষপরমপরাসকলে আমাকে ধন্যা বলবে।

49. কারণ যিনি পরাক্রমী, তিনি আমারজন্য মহৎ মহৎ কাজ করেছেন;এবং তাঁর নাম পবিত্র।

50. আর যারা তাঁকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে,তাঁর করুণা তাদের পুরুষপরমপরায়বর্তে।

51. তিনি আপন বাহু দ্বারা বিক্রমের কাজকরেছেন;যারা নিজেদের হৃদয়ের কল্পনায়অহঙ্কারী,তাদেরকে ছিন্নভিন্ন করেছেন।

52. তিনি বিক্রমীদেরকে সিংহাসন থেকেনামিয়ে দিয়েছেন ও নিচদেরকেউন্নত করেছেন।

53. তিনি ক্ষুধার্তদেরকে উত্তম উত্তমদ্রব্যে পরিপূর্ণ করেছেন,এবং ধনবানদেরকে শূন্য হাতেবিদায় করেছেন।

54. তিনি তাঁর গোলাম ইসরাইলেরউপকার করেছেন,যেন আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছেবলা তাঁর করুণা অনুসারে,

55. ইব্রাহিম ও তার বংশের প্রতি চিরতরেকরুণা স্মরণ করেন।

56. আর মরিয়ম মাস তিনেক এলিজাবেতের কাছে রইলেন, পরে নিজের বাড়িতে ফিরে গেলেন।

হযরত ইয়াহিয়ার জন্ম

57. পরে এলিজাবেতের প্রসবকাল সমপূর্ণ হলে তিনি পুত্র প্রসব করলেন।

58. তখন তাঁর প্রতিবেশী ও আত্মীয়রা শুনতে পেল যে, প্রভু তাঁর প্রতি মহা করুণা করেছেন, আর তারা তাঁর সঙ্গে আনন্দ করতে লাগল।

59. পরে তারা অষ্টম দিনে বালকটির খৎনা করতে আসল, আর তার পিতার নাম অনুসারে তার নাম জাকারিয়া রাখতে চাইল।

60. কিন্তু তার মা জবাবে বললেন, তা নয়, এর নাম ইয়াহিয়া রাখা হবে।

61. তারা তাঁকে বললো, আপনার গোষ্ঠীর মধ্যে এই নামে তো কাউকেও ডাকা হয় না।

62. পরে তারা তার পিতাকে ইশারায় জিজ্ঞাসা করলো, আপনার ইচ্ছা কি? এর কি নাম রাখা যাবে?

63. তিনি একখানি লিপিফলক চেয়ে নিয়ে লিখলেন, এর নাম ইয়াহিয়া। তাতে সকলে আশ্চর্য জ্ঞান করলো।

64. আর তখনই তাঁর মুখ ও তাঁর জিহ্বা খুলে গেল, আর তিনি কথা বললেন, আল্লাহ্‌র প্রশংসা করতে লাগলেন।

65. এতে চারদিকের প্রতিবেশীরা সকলে ভয় পেল, আর এহুদিয়ার পাহাড়ী অঞ্চলের সর্বত্র লোকে এ সব কথা বলাবলি করতে লাগল।

66. আর যত লোক এই কথা শুনলো, সকলে তা মনে গেঁথে রেখে বলতে লাগল, এই বালকটি তবে কি হবে? কারণ প্রভুর হাত তাঁর সহবর্তী ছিল।

হযরত জাকারিয়ার ভবিষ্যদ্বাণী

67. তখন তার পিতা জাকারিয়া পাক-রূহে পরিপূর্ণ হলেন এবং ভবিষ্যদ্বাণী বললেন; তিনি বললেন,

68. ইসরাইলের আল্লাহ্‌ প্রভু ধন্য হোন;কেননা তিনি তত্ত্বাবধান করেছেন,তাঁর লোকদের জন্য মুক্তি সাধনকরেছেন,

69. আর আমাদের জন্য তাঁর গোলামদাউদের কুলে নাজাতের এক শৃঙ্গউঠিয়েছেন,

70. —যেমন তিনি পুরাকাল থেকে তাঁরসেই পবিত্র নবীদের মুখ দ্বারা বলেএসেছেন—

71. আমাদের দুশমনদের হাত থেকে ওযারা আমাদেরকে ঘৃণা করে,তাদের সকলের হাত থেকে রক্ষাকরেছেন।

72. আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি করুণাকরার জন্য,তাঁর পবিত্র নিয়ম স্মরণ করার জন্য।

73. এই সেই কসম, যা তিনি আমাদেরপূর্বপুরুষ ইব্রাহিমের কাছে শপথকরেছিলেন,

74. আমাদেরকে এই বর দেবার জন্যযে আমরা দুশমনদের হাতথেকে নিস্তার পেয়ে,নির্ভয়ে পবিত্রভাবে ও ধার্মিকতায়তাঁর এবাদত করতে পারবো।

75. তাঁর সাক্ষাতে সারা জীবন করতেপারবো।

76. আর, হে বালক, তুমি সর্বশক্তিমানেরনবী বলে আখ্যাত হবে,কারণ তুমি প্রভুর সম্মুখে চলবে,তাঁর পথ প্রস্তুত করার জন্য;

77. তাঁর লোকেরা গুনাহ্‌ মাফের মধ্যদিয়ে যে নাজাত লাভ করবে সেইবিষয়ে জ্ঞান দেবার জন্য।

78. তা আমাদের আল্লাহ্‌র সেইকরুণাযুক্ত স্নেহহেতু হবে,যার দ্বারা ঊর্ধ্ব থেকে ঊষা আমাদেরতত্ত্বাবধান করবে,

79. যারা অন্ধকারে ও মৃত্যুচ্ছায়ায় বসেআছে,তাদের উপরে আলো দেবার জন্য, আমাদের চরণ শান্তির পথে চালাবার জন্য।

80. পরে বালকটি বেড়ে উঠতে এবং রূহে বলবান হতে লাগলেন; আর তিনি যত দিন ইসরাইলের কাছে প্রকাশিত না হলেন, তত দিন মরুভূমিতে ছিলেন।