অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12
  13. 13
  14. 14
  15. 15
  16. 16
  17. 17
  18. 18
  19. 19
  20. 20
  21. 21
  22. 22
  23. 23
  24. 24

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

লূক 22 কিতাবুল মোকাদ্দস (BACIB)

ঈসা মসীহ্‌কে হত্যা করবার ষড়যন্ত্র

1. তখন খামিহীন রুটির ঈদ নিকটবর্তী হচ্ছিল। এই ঈদকে ঈদুল ফেসাখও বলা হয়।

2. আর প্রধান ইমামেরা ও আলেমেরা কিভাবে তাঁকে হত্যা করতে পারে, তারই চেষ্টা করছিল; কেননা তারা লোকদেরকে ভয় করতো।

ঈষ্করিয়োতীয় এহুদার বেইমানী

3. আর শয়তান ঈষ্করিয়োতীয় এহুদা, বারো জনের এক জন, তার ভিতরে প্রবেশ করলো।

4. তখন সে গিয়ে কিভাবে ঈসাকে তাদের হাতে তুলে দিতে পারবে সেই ব্যাপারে প্রধান ইমামদের ও সেনাপতিদের সঙ্গে কথাবার্তা বললো।

5. এতে তারা আনন্দিত হয়ে তাকে টাকা দিতে ওয়াদা করলো।

6. তাতে এহুদা সম্মত হল এবং জনতার অগোচরে তাঁকে তাদের হাতে ধরিয়ে দেবার সুযোগ খুঁজতে লাগল।

ঈদুল ফেসাখের প্রস্তুতি

7. পরে খামিহীন রুটির দিন, অর্থাৎ যেদিন ঈদুল ফেসাখের ভেড়ার বাচ্চা কোরবানী করতে হত, সেই দিন আসল।

8. তখন তিনি পিতর ও ইউহোন্নাকে প্রেরণ করে বললেন, তোমরা গিয়ে আমাদের জন্য ঈদুল ফেসাখের মেজবানী প্রস্তুত কর, আমরা ভোজন করবো।

9. তাঁরা বললেন, কোথায় প্রস্তুত করবো? আপনার ইচ্ছা কি?

10. তিনি তাঁদেরকে বললেন, দেখ, তোমরা নগরে প্রবেশ করলে এমন এক ব্যক্তি তোমাদের সম্মুখে পড়বে, যে ব্যক্তি এক কলসী পানি নিয়ে আসছে; তোমরা তার পিছন পিছন যে বাড়িতে সে প্রবেশ করবে সেখানে যাবে।

11. আর তোমরা বাড়ির মালিককে বলবে, হুজুর আপনাকে বলছেন, যেখানে আমি আমার সাহাবীদের সঙ্গে ঈদুল ফেসাখের মেজবানীর ভোজন করতে পারি, সেই মেহমানশালা কোথায়?

12. তাতে সে তোমাদেরকে সাজানো একটি উপরের বড় কুঠরী দেখিয়ে দেবে; সেই স্থানে মেজবানী প্রস্তুত করো।

13. তাঁরা গিয়ে তিনি যেমন বলেছিলেন, তেমনই দেখতে পেলেন; আর ঈদুল ফেসাখের মেজবানীর প্রস্তুত করলেন।

প্রভুর মেজবানী স্থাপন

14. পরে সময় উপস্থিত হলে তিনি ও তাঁর সঙ্গে প্রেরিতেরা ভোজনে বসলেন।

15. তখন তিনি তাঁদেরকে বললেন, আমার দুঃখ-ভোগের আগে তোমাদের সঙ্গে আমি এই ঈদুল ফেসাখের মেজবানীর ভোজন করতে একান্তই বাঞ্ছা করেছি;

16. কেননা আমি তোমাদেরকে বলছি, যে পর্যন্ত আল্লাহ্‌র রাজ্যে এর উদ্দেশ্য পূর্ণ না হয়, সেই পর্যন্ত আমি তা আর ভোজন করবো না।

17. পরে তিনি পানপাত্র গ্রহণ করে শুকরিয়াপূর্বক বললেন, এই নাও এবং নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নাও;

18. কেননা আমি তোমাদেরকে বলছি, যে পর্যন্ত আল্লাহ্‌র রাজ্যের আগমন না হয়, এখন থেকে সেই পর্যন্ত আমি আঙ্গুর ফলের রস আর পান করবো না।

19. পরে তিনি রুটি নিয়ে শুকরিয়াপূর্বক ভাঙ্গলেন এবং তাঁদেরকে দিলেন, বললেন, এ আমার শরীর, যা তোমাদের জন্য দেওয়া যাচ্ছে, আমার স্মরণার্থে এরকম করো।

20. আর সেভাবে তিনি ভোজন শেষ হলে পানপাত্রটি নিয়ে বললেন, এই পানপাত্র আমার রক্তে নতুন নিয়ম, যে রক্ত তোমাদের জন্য ঢেলে দেওয়া হচ্ছে।

21. কিন্তু দেখ, যে ব্যক্তি আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে, তার হাত আমার সঙ্গে টেবিলের উপরে রয়েছে।

22. কেননা যেমন নির্ধারিত হয়েছে, সেই অনুসারে ইবনুল-ইনসান যাচ্ছেন, কিন্তু ধিক্‌ সেই ব্যক্তিকে, যে ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে।

23. তখন তাঁরা পরস্পর জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, তবে আমাদের মধ্যে এই কাজ কে করবে?

শ্রেষ্ঠ কে তা নিয়ে বিতর্ক

24. আর তাঁদের মধ্যে এই বিবাদও উৎপন্ন হল যে, তাঁদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য?

25. কিন্তু তিনি তাঁদেরকে বললেন, জাতিদের বাদশাহ্‌রাই তাদের উপরে প্রভুত্ব করে এবং তাদের শাসনকর্তারাই ‘হিতকারী’ বলে আখ্যাত হয়।

26. কিন্তু তোমরা সেরকম হয়ো না; বরং তোমাদের মধ্যে যে শ্রেষ্ঠ, সে কনিষ্ঠের মত হোক এবং যে প্রধান, সে পরিচারকের মত হোক।

27. কারণ কে শ্রেষ্ঠ? যে ভোজনে বসে, না যে পরিচর্যা করে? যে ভোজনে বসে, সেই কি নয়? কিন্তু আমি তোমাদের মধ্যে পরিচারকের মত রয়েছি।

28. তোমরাই আমার সকল পরীক্ষার মধ্যে আমার সঙ্গে সঙ্গে বরাবর রয়েছ;

29. আর আমার পিতা যেমন আমার জন্য নির্ধারণ করেছেন, আমিও তেমনি তোমাদের জন্য একটি রাজ্য নির্ধারণ করছি,

30. যেন তোমরা আমার রাজ্যে আমার মেঝে ভোজন পান কর; আর তোমরা সিংহাসনে বসে ইসরাইলের বারো বংশের বিচার করবে।

পিতরের অস্বীকার করার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী

31. শিমোন, শিমোন, দেখ, শয়তান তোমাদেরকে গমের মত চালবার জন্য দাবী করছে;

32. কিন্তু আমি তোমার জন্য ফরিয়াদ করেছি, যেন তোমার নিজের ঈমান ব্যর্থ না হয়; আর তুমিও একবার ফিরলে পর তোমার ভাইদেরকে সুস্থির করো।

33. তিনি তাঁকে বললেন, প্রভু, আপনার সঙ্গে আমি কারাগারে যেতে এবং মরতেও প্রস্তুত আছি।

34. তিনি বললেন, পিতর, আমি তোমাকে বলছি, যে পর্যন্ত তুমি আমাকে চিন না বলে তিন বার অস্বীকার না করবে, সেই পর্যন্ত আজ মোরগ ডাকবে না।

থলি, ঝুলি ও তলোয়ার

35. আর তিনি তাঁদেরকে বললেন, আমি যখন থলি, ঝুলি ও জুতা ছাড়া তোমাদেরকে পাঠিয়েছিলাম, তখন তোমাদের কি কিছুর অভাব হয়েছিল? তাঁরা বললেন, কিছুরই নয়।

36. তখন তিনি তাঁদেরকে বললেন, কিন্তু এখন যার থলি আছে, সে তা গ্রহণ করুক, একই ভাবে ঝুলিও গ্রহণ করুক এবং যার নেই, সে তার কোর্তা বিক্রি করে তলোয়ার ক্রয় করুক।

37. কেননা আমি তোমাদেরকে বলছি, এই যে কালাম লেখা আছে, “আর তিনি অধর্মীদের সঙ্গে গণিত হলেন,” তা আমার মধ্যে পূর্ণ হতে হবে; কারণ আমার সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তা পূর্ণ হচ্ছে।

38. তখন তাঁরা বললেন, প্রভু, দেখুন, দু’খানি তলোয়ার আছে। তিনি তাদেরকে বললেন, এই যথেষ্ট।

গেৎশিমানী বাগানে ঈসা মসীহের মুনাজাত

39. পরে তিনি বের হয়ে আপন রীতি অনুসারে জৈতুন পর্বতে গেলেন এবং সাহাবীরাও তাঁর পিছন পিছন চললেন।

40. সেই স্থানে উপস্থিত হলে পর তিনি তাঁদেরকে বললেন, তোমরা মুনাজাত কর, যেন পরীক্ষায় না পড়।

41. পরে তিনি তাদের থেকে কমবেশ এক ঢেলার পথ দূরে গেলেন এবং জানু পেতে মুনাজাত করতে লাগলেন,

42. বললেন, পিতা, যদি তোমার অভিমত হয়, আমার কাছ থেকে এই পানপাত্র দূর কর; তবুও আমার ইচ্ছা নয়, তোমারই ইচ্ছা পূর্ণ হোক;

43. তখন বেহেশত থেকে এক জন ফেরেশতা দেখা দিয়ে তাঁকে সবল করলেন।

44. পরে তিনি মর্মভেদী দুঃখে মগ্ন হয়ে আরও একাগ্রভাবে মুনাজাত করলেন; আর তাঁর শরীরের ঘাম যেন রক্তের ঘনীভূত বড় বড় ফোঁটা হয়ে ভূমিতে পড়তে লাগল।

45. পরে তিনি মুনাজাত করে উঠলে পর সাহাবীদের কাছে এসে দেখলেন, তাঁরা মনের দুঃখের কারণে ঘুমিয়ে পড়েছেন,

46. আর তাঁদেরকে বললেন, কেন ঘুমাচ্ছো? উঠ, মুনাজাত কর, যেন পরীক্ষায় না পড়।

দুশমনদের হাতে ঈসা মসীহ্‌

47. তিনি কথা বলছেন, এমন সময়ে দেখ, অনেক লোক এবং যার নাম এহুদা— সেই বারো জনের মধ্যে এক জন— সে তাদের আগে আগে আসছে; সে ঈসাকে চুম্বন করার জন্য তাঁর কাছে আসল।

48. কিন্তু ঈসা তাঁকে বললেন, এহুদা, চুম্বন দ্বারা কি ইবনুল-ইনসানকে ধরিয়ে দিচ্ছ?

49. তখন কি কি ঘটবে, তা দেখে যাঁরা তাঁর কাছে ছিলেন, তাঁরা বললেন, প্রভু, আমরা কি তলোয়ার দ্বারা আঘাত করবো?

50. আর তাঁদের মধ্যে এক ব্যক্তি মহা-ইমামের গোলামকে আঘাত করে তার ডান কান কেটে ফেললেন।

51. কিন্তু জবাবে ঈসা বললেন, এই পর্যন্ত ক্ষান্ত হও। পরে তিনি তার কান স্পর্শ করে তাকে সুস্থ করলেন।

52. আর তাঁর বিরুদ্ধে যে প্রধান ইমামেরা, বায়তুল-মোকাদ্দসের সেনাপতিরা ও প্রাচীনবর্গরা এসেছিল, ঈসা তাদেরকে বললেন, লোকে যেমন দস্যুর বিরুদ্ধে যায়, তেমনি তলোয়ার ও লাঠি নিয়ে কি তোমরা আসলে?

53. আমি যখন প্রতিদিন বায়তুল-মোকাদ্দসে তোমাদের সঙ্গে ছিলাম, তখন তো আমার উপর তোমরা হাত তোল নি; কিন্তু এখন তোমাদের সময় এবং অন্ধকারের অধিকার।

হযরত পিতরের অস্বীকার

54. পরে তারা তাঁকে ধরে নিয়ে গেল এবং মহা-ইমামের বাড়িতে আনলো; আর পিতর দূরে থেকে পিছন পিছন চললেন।

55. পরে লোকেরা প্রাঙ্গণের মধ্যে আগুন জ্বেলে একত্রে বসলে পিতর তাদের মধ্যে বসলেন।

56. তিনি সেই আলোর কাছে বসলে এক জন বাঁদী তাঁকে দেখে তাঁর দিকে একদৃষ্টে চেয়ে বললো, এই ব্যক্তিও ওর সঙ্গে ছিল।

57. কিন্তু তিনি অস্বীকার করে বললেন, হে নারী, আমি তাঁকে চিনি না।

58. একটু পরে আর এক জন তাঁকে দেখে বললো, তুমিও তাদের এক জন। পিতর বললেন, ওহে, আমি নই।

59. ঘণ্টা খানেক পরে আর এক জন দৃঢ়ভাবে বললো, সত্যি, এই ব্যক্তিও তার সঙ্গে ছিল, কেননা এ গালীলীয় লোক।

60. তখন পিতর বললেন, ওহে, তুমি কি বলছো আমি বুঝতে পারছি না। তিনি কথা বলছিলেন, আর অমনি মোরগ ডেকে উঠলো।

61. আর প্রভু মুখ ফিরিয়ে পিতরের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন; তাতে প্রভু এই যে কালাম বলেছিলেন, ‘আজ মোরগ ডাকবার আগে তুমি তিন বার আমাকে অস্বীকার করবে,’ তা পিতরের মনে পড়লো।

62. আর তিনি বাইরে গিয়ে ভীষণভাবে কান্নাকাটি করলেন।

ঈসা মসীহ্‌কে প্রহার ও বিদ্রুপ করা

63. আর যে লোকেরা ঈসাকে ধরেছিল, তারা তাঁকে বিদ্রূপ ও প্রহার করতে লাগল।

64. আর তাঁর চোখ ঢেকে জিজ্ঞাসা করলো, ভবিষ্যদ্বাণী বল্‌ দেখি, কে তোকে মারলো?

65. আর তারা নিন্দা করে তাঁর বিরুদ্ধে আরও অনেক কথা বলতে লাগল।

মহাসভার সম্মুখে ঈসা মসীহ্‌

66. যখন দিন হল, তখন লোকদের প্রাচীনদের সমাজ, প্রধান ইমামেরা আলেমরা একত্র হল এবং তাদের মাহ্‌ফিলের মধ্যে তাঁকে আনালো, আর বললো, তুমি যদি সেই মসীহ্‌ হও, তবে আমাদেরকে বল।

67. তিনি তাদেরকে বললেন, যদি তোমাদেরকে বলি, তোমরা বিশ্বাস করবে না;

68. আর যদি তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করি, কোন উত্তর দেবে না;

69. কিন্তু এখন থেকে ইবনুল-ইনসান আল্লাহ্‌র পরাক্রমের ডান পাশে উপবিষ্ট থাকবেন।

70. তখন সকলে বললো, তবে তুমি কি আল্লাহ্‌র পুত্র? তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরাই বলছো যে, আমি সেই।

71. তখন তারা বললো, আর সাক্ষ্যে আমাদের কি প্রয়োজন? আমরা নিজেরাই তো এর মুখে শুনলাম।