অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12
  13. 13
  14. 14
  15. 15
  16. 16
  17. 17
  18. 18
  19. 19
  20. 20
  21. 21
  22. 22
  23. 23
  24. 24
  25. 25
  26. 26
  27. 27
  28. 28
  29. 29
  30. 30
  31. 31
  32. 32
  33. 33
  34. 34

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

দ্বিতীয় বিবরণ 4 কিতাবুল মোকাদ্দস (BACIB)

বাধ্যতা সম্বন্ধে হযরত মূসার হুকুম

1. এখন, হে ইসরাইল, আমি যে যে বিধি ও অনুশাসন পালন করতে তোমাদেরকে শিক্ষা দেই, তা শোন; যেন তোমরা বাঁচতে পার এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদের আল্লাহ্‌ মাবুদ তোমাদেরকে যে দেশ দিচ্ছেন, তার মধ্যে প্রবেশ করে তা অধিকার করতে পার।

2. আমি তোমাদেরকে যা হুকুম করি, সেই কালামের সঙ্গে তোমরা আর কিছু যোগ করবে না এবং তার কিছু বাদ দেবে না। আমি তোমাদের যা যা হুকুম করছি, তোমাদের আল্লাহ্‌ মাবুদের সেসব হুকুম পালন করবে।

3. বাল-পিয়োরের বিষয়ে মাবুদ যা করেছিলেন তা তোমরা স্বচক্ষে দেখেছ; ফলত তোমার আল্লাহ্‌ মাবুদ বাল-পিয়োরের অনুগামী প্রত্যেক জনকে তোমার মধ্য থেকে বিনষ্ট করেছিলেন;

4. কিন্তু তোমরা যত লোক তোমাদের আল্লাহ্‌ মাবুদের প্রতি আসক্ত ছিলে, সকলেই এখনও জীবিত আছ।

5. দেখ, আমার আল্লাহ্‌ মাবুদ আমাকে যেরকম হুকুম করেছিলেন, আমি তোমাদেরকে ঠিক সেরকম বিধি ও অনুশাসন শিক্ষা দিয়েছি, যেন তোমরা যে দেশ অধিকার করতে যাচ্ছ, সেই দেশের মধ্যে তা পালন কর।

6. অতএব তোমরা সেসব মান্য ও পালন করো; কেননা জাতিদের সম্মুখে তা-ই তোমাদের জ্ঞান ও বুদ্ধিস্বরূপ হবে; এসব বিধি শুনে তারা বলবে, সত্যিই, এই মহাজাতি জ্ঞানবান ও বুদ্ধিমান জাতি;

7. কেননা কোন্‌ বড় জাতির এমন নিকটবর্তী আল্লাহ্‌ আছেন, যেমন আমাদের আল্লাহ্‌ মাবুদ? যখনই আমরা তাঁকে ডাকি, তিনি নিকটবর্তী।

8. আর আমি আজ তোমাদের সাক্ষাতে যে সমস্ত শরীয়ত দিচ্ছি, তার মত যথার্থ বিধি ও অনুশাসন কোন্‌ বড় জাতির আছে?

9. কিন্তু তুমি নিজের বিষয়ে সাবধান, তোমার প্রাণের বিষয়ে অতি সাবধান থাক; পাছে তুমি যেসব ব্যাপার স্বচক্ষে দেখেছো, তা ভুলে যাও; আর পাছে জীবন থাকতে তোমার অন্তর থেকে তা মুছে যায়; তুমি তোমার পুত্র পৌত্রদেরকে তা শিক্ষা দাও।

10. সেদিন, যেদিন তুমি হোরেবে তোমার আল্লাহ্‌ মাবুদের সম্মুখে দাঁড়িয়েছিলে, সেদিন মাবুদ আমাকে বললেন, তুমি আমার কাছে লোকদের একত্র কর, আমি আমার সমস্ত কালাম তাদের শোনাবো; তারা দুনিয়াতে যত দিন জীবিত থাকে, তত দিন যেন আমাকে ভয় করে, এই বিষয় তারা নিজেরা শিখবে এবং নিজেদের সন্তানদেরকে ও অন্যদের শেখাবে।

11. তাতে তোমরা এগিয়ে এসে পর্বতের তলে দাঁড়িয়েছিলে; আর সেই পর্বত গগনের অভ্যন্তর পর্যন্ত আগুনে জ্বলছিল, কালো মেঘে ও ঘোর অন্ধকারে ঢাকা ছিল।

12. তখন আগুনের মধ্য থেকে মাবুদ তোমাদের কাছে কথা বললেন; তোমরা তাঁর কালামের আওয়াজ শুনছিলে, কিন্তু কোন মূর্তি দেখতে পেলে না, কেবল আওয়াজ হচ্ছিল।

13. আর তিনি তাঁর যে নিয়ম পালন করতে তোমাদেরকে হুকুম করলেন, সেই নিয়ম অর্থাৎ দশটি হুকুম তোমাদেরকে মেনে চলতে হুকুম দিলেন এবং দু’টি পাথরের ফলকে লিখে দিলেন।

14. তোমরা যে দেশ অধিকার করতে পার হয়ে যাচ্ছ, সেই দেশে তোমাদের পালনীয় বিধি ও সমস্ত অনুশাসন তোমাদেরকে শিক্ষা দিতে মাবুদ সেই সময়ে আমাকে হুকুম করলেন।

15. যেদিন মাবুদ হোরেবে আগুনের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, সেদিন তোমরা কোন মূর্তি দেখ নি; অতএব নিজ নিজ প্রাণের বিষয়ে অতিশয় সাবধান হও;

16. পাছে তোমরা ভ্রষ্ট হয়ে নিজেদের জন্য কোন আকারের মূর্তির মত খোদাই-করা মূর্তি তৈরি কর;

17. পাছে পুরুষ বা স্ত্রীর প্রতিকৃতি, দুনিয়ার কোন পশুর প্রতিকৃতি, আসমানে উড়ে বেড়ানো কোন পাখির প্রতিকৃতি, ভূচর কোন সরীসৃপের প্রতিকৃতি,

18. অথবা ভূমির নিচস্থ জলচর কোন জন্তুর প্রতিকৃতি তৈরি কর;

19. আর আসমানের প্রতি চোখ তুলে সূর্য, চন্দ্র ও তারা, আসমানের সমস্ত বিদ্যমান বস্তু দেখলে, তোমার আল্লাহ্‌ মাবুদ যাদেরকে সমস্ত আসমানের নিচে অবস্থিত সমস্ত জাতির জন্য বণ্টন করেছেন, পাছে ভ্রান্ত হয়ে তাদের কাছে সেজ্‌দা ও তাদের সেবা কর।

20. কিন্তু মাবুদ তোমাদের গ্রহণ করেছেন, লোহা গলানো হাফরের মধ্য থেকে, মিসর দেশ থেকে তোমাদেরকে বের করে এনেছেন, যেন তোমরা তাঁর অধীনস্থ লোক হও, যেমন আজ আছ।

21. আর তোমাদের জন্য মাবুদ আমার প্রতিও ক্রুদ্ধ হয়ে এই কসম খেয়েছেন যে, তিনি আমাকে জর্ডান পার হতে দেবেন না এবং তোমাদের আল্লাহ্‌ মাবুদ তোমাদের যে দেশ অধিকার হিসেবে দিচ্ছেন, সেই উত্তম দেশে আমাকে প্রবেশ করতে দেবেন না।

22. বাস্তবিক এই দেশেই আমাকে ইন্তেকাল করতে হবে; আমি জর্ডান পার হয়ে যেতে পারব না; কিন্তু তোমরা পার হয়ে সেই উত্তম দেশ অধিকার করবে।

23. তোমরা নিজেদের বিষয়ে সাবধান থেকো, তোমাদের আল্লাহ্‌ মাবুদ তোমাদের জন্য যে নিয়ম স্থির করেছেন, তা ভুলে যেও না, কোন বস্তুর মূর্তিবিশিষ্ট খোদাই-করা মূর্তি তৈরি করো না; তা তোমার আল্লাহ্‌ মাবুদের নিষিদ্ধ।

24. কেননা তোমার আল্লাহ্‌ মাবুদ গ্রাসকারী আগুনের মত; তিনি স্বগৌরব রক্ষণে উদ্যোগী আল্লাহ্‌।

25. সেই দেশে পুত্র পৌত্রদের জন্ম দিয়ে বহুকাল বাস করলে পর যদি তোমরা ভ্রষ্ট হও ও কোন বস্তুর মূর্তি বিশিষ্ট খোদাই-করা মূর্তি তৈরি কর এবং তোমার আল্লাহ্‌ মাবুদের দৃষ্টিতে যা মন্দ, তা করে তাঁকে অসন্তুষ্ট কর;

26. তবে, আমি আজ তোমাদের বিরুদ্ধে বেহেশত ও দুনিয়াকে সাক্ষী মেনে বলছি, তোমরা যে দেশ অধিকার করতে জর্ডান পার হয়ে যাচ্ছ, সেই দেশ থেকে শীঘ্র বিনষ্ট হবে, সেখানে বহুকাল বাস করতে পারবে না, কিন্তু সম্পূর্ণরূপে উচ্ছিন্ন হবে।

27. আর মাবুদ নানা জাতির মধ্যে তোমাদের ছিন্ন ভিন্ন করবেন; যেখানে মাবুদ তোমাদের নিয়ে যাবেন, সেই জাতিদের মধ্যে তোমরা অল্পসংখ্যক হয়ে অবশিষ্ট থাকবে।

28. আর তোমরা সেখানে মানুষের হাতের তৈরি দেবতাদের— যারা দেখতে, শুনতে, ভোজন করতে ও ঘ্রাণ নিতে পারে না এমন কাঠ ও পাথরের তৈরি— তাদের সেবা করবে।

29. কিন্তু সেখানে থেকে যদি তোমরা তোমাদের আল্লাহ্‌ মাবুদের খোঁজ কর, তবে তাঁর উদ্দেশ পাবে; সমস্ত অন্তর ও সমস্ত প্রাণের সঙ্গে তাঁর খোঁজ করলে পাবে।

30. যখন তোমার সঙ্কট উপস্থিত হয় এবং এসব তোমার প্রতি ঘটে, তখন সেই ভাবী কালে তুমি তোমার আল্লাহ্‌ মাবুদের প্রতি ফিরবে ও তাঁর বাধ্য হয়ে চলবে।

31. কারণ তোমার আল্লাহ্‌ মাবুদ কৃপাময় আল্লাহ্‌; তিনি তোমাকে ত্যাগ করবেন না, তোমাকে বিনাশ করবেন না এবং কসম দ্বারা তোমার পূর্বপুরুষদের কাছে যে নিয়ম করেছেন তা ভুলে যাবেন না।

32. কারণ, দুনিয়াতে আল্লাহ্‌ কর্তৃক মানুষের সৃষ্টিদিন থেকে শুরু করে তোমার আগে যে কাল গেছে, সেই পুরানো কাল এবং আসমানের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তকে জিজ্ঞাসা কর, এই রকম মহৎ কাজের মত কাজ কি আর কখনও হয়েছে? কিংবা এমন কি শোনা গেছে?

33. তোমার মত কি আর কোন জাতি আগুনের মধ্য থেকে যাঁর বাণী নিঃসৃত হত সেই আল্লাহ্‌র বাণী শুনে বেঁচে আছে?

34. কিংবা তোমাদের আল্লাহ্‌ মাবুদ মিসরে তোমাদের সাক্ষাতে যেসব কাজ করেছেন, আল্লাহ্‌ কি সেই অনুসারে গিয়ে পরীক্ষাসিদ্ধ প্রমাণ, চিহ্ন, অদ্ভুত লক্ষণ, যুদ্ধ, শক্তিশালী হাত, বাড়িয়ে দেওয়া বাহু ও ভয়ঙ্কর মহৎ মহৎ কাজ দ্বারা অন্য জাতির মধ্য থেকে নিজের জন্য এক জাতি গ্রহণ করতে চেষ্টা করেছেন?

35. মাবুদই আল্লাহ্‌, তিনি ছাড়া আর কেউ নেই, তা যেন তুমি জানতে পার, সেজন্য ঐ সমস্ত তোমাকেই দেখানো হল।

36. উপদেশ দেবার জন্য তিনি বেহেশত থেকে তোমাকে তাঁর বাণী শোনালেন ও দুনিয়াতে তোমাকে তাঁর মহা আগুন দেখালেন এবং তুমি আগুনের মধ্য থেকে তাঁর কথা শুনতে পেলে।

37. তিনি তোমার পূর্বপুরুষদেরকে মহব্বত করতেন, তাই তাঁদের পরে তাঁদের বংশকেও মনোনীত করলেন এবং তাঁর উপস্থিতি ও মহাপরাক্রম দ্বারা তোমাকে মিসর দেশ থেকে বের করে আনলেন;

38. যেন তোমার চেয়ে মহান ও বিক্রমী জাতিদেরকে তোমার সম্মুখ থেকে দূর করে তাদের দেশে তোমাকে প্রবেশ করান ও অধিকার হিসেবে তোমাকে সেই দেশ দেন, যেমন আজ দেখছো।

39. অতএব আজ জেনে রাখ ও অন্তরে গেঁথে রাখ যে, উপরিস্থ বেহেশত ও নিচস্থ দুনিয়াতে মাবুদই আল্লাহ্‌, আর তিনি ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই।

40. আর তোমার মঙ্গল ও তোমার ভাবী সন্তানদের মঙ্গল যেন হয় এবং তোমার আল্লাহ্‌ মাবুদ তোমাকে যে ভূমি চিরকালের জন্য দিচ্ছেন, তার উপরে যেন তোমার দীর্ঘ পরমায়ু হয়, এজন্য আমি তাঁর যেসব বিধি ও হুকুম আজ তোমাকে নির্দেশ করলাম তা পালন করো।

জর্ডানের পূর্ব পারে আশ্রয়-নগর

41. সেই সময় মূসা জর্ডানের পারে সূর্যোদয়ের দিকে তিনটি নগর পৃথক করলেন,

42. যেন নরহন্তা সেখানে পালাতে পারে। যে কেউ তার প্রতিবেশীকে আগে হিংসা না করে অজ্ঞানতাবশত হত্যা করে, সে যেন এই সব নগরের কোন একটির মধ্যে পালিয়ে বাঁচতে পারে।

43. সেই নগর তিনটি হল রূবেণীয়দের জন্য সমভূমিতে মরুভূমিস্থ বেৎসর, গাদীয়দের জন্য গিলিয়দ-স্থিত রামোৎ এবং মানশাদের জন্য বাশন-স্থিত গোলান।

হযরত মূসার দ্বিতীয় বক্তৃতা

44. মূসা বনি-ইসরাইলদের সম্মুখে এই শরীয়ত স্থাপন করেছিলেন;

45. মিসর থেকে বের হয়ে এসে মূসা জর্ডানের পূর্বপারে, বৈৎ-পিয়োরের সম্মুখস্থ উপত্যকাতে, হিষ্‌বোন-নিবাসী আমোরীয় বাদশাহ্‌ সীহোনের দেশে বনি-ইসরাইলদের কাছে এসব নির্দেশ, বিধি ও অনুশাসন বর্ণনা করেছিলেন।

46. মিসর থেকে বের হয়ে এসে মূসা ও বনি-ইসরাইল সেই বাদশাহ্‌কে আঘাত করেছিলেন;

47. এবং তাঁর ও বাশনের বাদশাহ্‌ উজের দেশ, জর্ডানের পূর্বপারে সূর্যোদয়ের দিকে আমোরীয়দের এই দুই বাদশাহ্‌র দেশ,

48. অর্ণোন উপত্যকার সীমাস্থ অরোয়ের থেকে সীওন পর্বত

49. অর্থাৎ হর্মোণ পর্যন্ত সমস্ত দেশ এবং পিস্‌গা পাহাড়শ্রেণীর ঢালু অংশের নিচে অরাবা উপত্যকার সমুদ্র পর্যন্ত জর্ডানের পূর্বপারস্থ সমস্ত অরাবা উপত্যকা অধিকার করেছিলেন।