অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12
  13. 13
  14. 14
  15. 15
  16. 16
  17. 17
  18. 18
  19. 19
  20. 20
  21. 21
  22. 22
  23. 23
  24. 24
  25. 25
  26. 26
  27. 27
  28. 28
  29. 29
  30. 30
  31. 31
  32. 32
  33. 33
  34. 34
  35. 35
  36. 36
  37. 37
  38. 38
  39. 39
  40. 40
  41. 41
  42. 42
  43. 43
  44. 44
  45. 45
  46. 46
  47. 47
  48. 48
  49. 49
  50. 50

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

পয়দায়েশ 31 Kitabul Mukkadas (MBCL)

হযরত ইয়াকুব (আঃ)-এর পালিয়ে যাওয়া

1. ইয়াকুব শুনলেন লাবনের ছেলেরা এই সব কথা বলে বেড়াচ্ছে যে, ইয়াকুব তাদের পিতার সব কিছু নিয়ে নিয়েছে এবং তাদের পিতার সম্পত্তি দিয়েই সে তার এই সব সম্পত্তি করেছে।

2. ইয়াকুব এ-ও লক্ষ্য করলেন যে, তাঁর প্রতি লাবনের আগের সেই মনোভাব আর নেই।

3. তখন মাবুদ ইয়াকুবকে বললেন, “তুমি তোমার পূর্বপুরুষদের দেশে নিজের লোকদের কাছে ফিরে যাও। আমি তোমার সংগে সংগে আছি।”

4. তখন ইয়াকুব লোক পাঠিয়ে মাঠে যেখানে তাঁর পশুপাল ছিল সেখানে রাহেলা ও লেয়াকে ডেকে আনালেন।

5. তারপর তিনি তাঁদের বললেন, “আমি লক্ষ্য করেছি আমার প্রতি তোমাদের বাবার আগের সেই মনোভাব আর নেই, কিন্তু আমার বাবার আল্লাহ্‌ আমার সংগে সংগে আছেন।

6. তোমরা তো জান যে, আমি আমার সমস্ত শক্তি দিয়েই তোমাদের বাবার কাজ করেছি,

7. অথচ তিনি আমাকে ঠকিয়েছেন এবং দশ-দশবার আমার বেতন বদল করেছেন। যাহোক, আল্লাহ্‌ তাঁকে আমার কোন ক্ষতি করতে দেন নি।

8. যখন তোমাদের বাবা বলেছেন, ‘তোমার বেতন হবে এমন সব পশু যাদের গায়ে ছোট ছোট ছাপ আছে,’ তখন পালের সব পশুগুলোই সেই রকম বাচ্চা দিয়েছে। আবার যখন তিনি বলেছেন, ‘তোমার বেতন হবে ডোরাকাটা পশু,’ তখন পালের সব পশুগুলোই ডোরাকাটা বাচ্চা দিয়েছে।

9. আল্লাহ্‌ এইভাবে তোমাদের বাবার পালের পশু নিয়ে আমাকে দিয়েছেন।

10. “একবার পশুগুলো মিলিত হবার সময় আমি একটা স্বপ্ন দেখলাম। চারদিকে তাকিয়ে আমি যেন দেখলাম, ছাগীদের উপর যে সব ছাগলগুলো উঠছে সেগুলো ডোরাকাটা এবং বড় বড় ও ছোট ছোট ছাপের।

11. স্বপ্নের মধ্যে আল্লাহ্‌র ফেরেশতা আমাকে ডাকলেন, ‘ইয়াকুব।’ আমি বললাম, ‘এই যে আমি।’

12. তিনি বললেন, ‘তুমি চোখ তুলে দেখ, ছাগীদের উপর যে সব ছাগলগুলো উঠছে সেগুলো ডোরাকাটা এবং বড় বড় ও ছোট ছোট ছাপের। লাবন তোমার প্রতি যা করেছে তা সবই আমি দেখেছি।

13. আমি সেই বেথেলের আল্লাহ্‌ যেখানে তুমি থামের উপর তেল ঢেলে দিয়ে আমার কাছে কসম খেয়েছিলে। এখন এই দেশ ছেড়ে তোমার জন্মস্থানে ফিরে যাও।’ ”

14. এই কথা শুনে রাহেলা ও লেয়া বললেন, “বাবার সম্পত্তির কোন অংশ আমাদের এখনও নেই আর পরেও থাকবে না।

15. তিনি তো আমাদের বাইরের লোক বলেই মনে করেন, কারণ তিনি আমাদের বিক্রি করে দিয়েছেন এবং যা পেয়েছেন তা খেয়ে বসে আছেন।

16. সেইজন্য আমাদের বাবার সম্পত্তি থেকে আল্লাহ্‌ যা নিয়েছেন সেগুলো নিশ্চয়ই এখন আমাদের এবং আমাদের ছেলেমেয়েদের। কাজেই আল্লাহ্‌ তোমাকে যা বলেছেন তুমি এখন তা-ই কর।”

17-18. এর পর ইয়াকুব তাঁর ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীদের উটের পিঠে তুলে দিয়ে কেনান দেশে তাঁর পিতা ইসহাকের কাছে রওনা হলেন। যে সব পশুপাল এবং অন্যান্য ধন-সম্পত্তি তিনি পদ্দন-ইরামে লাভ করেছিলেন সেগুলোও তিনি সংগে নিলেন।

19. এই সময় লাবন তাঁর ভেড়াগুলোর লোম কাটবার জন্য গিয়েছিলেন, আর এই সুযোগে রাহেলা তাঁর পিতার পারিবারিক দেবমূর্তিগুলো চুরি করে নিলেন।

20. ইয়াকুব তাঁর যাওয়ার কথা সিরীয় লাবনকে না জানিয়ে তাঁর উপর একটা চালাকি খাটালেন।

21. এইভাবে ইয়াকুব তাঁর নিজের সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে গেলেন। তিনি ফোরাত নদী পার হয়ে গিলিয়দ এলাকার পাহাড়ী অঞ্চলের দিকে যেতে লাগলেন।

হযরত ইয়াকুব (আঃ)-এর তালাশে লাবন

22. এর তিন দিনের দিন লাবন জানতে পারলেন যে, ইয়াকুব পালিয়েছেন।

23. তখন তিনি তাঁর আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে ইয়াকুবের পিছনে ধাওয়া করে সাত দিনের পথ গেলেন, আর গিলিয়দের পাহাড়ী অঞ্চলে গিয়ে তাঁর নাগাল পেলেন।

24. কিন্তু আল্লাহ্‌ রাতের বেলা স্বপ্নে সিরীয় লাবনের কাছে এসে বললেন, “সাবধান! ইয়াকুবকে ভাল-মন্দ কিছুই বোলো না।”

25. ইয়াকুব পাহাড়ের উপর তাম্বু ফেলেছিলেন, আর সেখানেই লাবন গিয়ে তাঁকে ধরলেন। লাবন ও তাঁর আত্মীয়-স্বজনেরাও গিলিয়দের সেই একই পাহাড়ে তাঁদের তাম্বু ফেললেন।

26. পরে লাবন ইয়াকুবকে বললেন, “তুমি এ কি করলে? কেন আমাকে ঠকালে আর আমার মেয়েদের যুদ্ধে বন্দীর মত করে নিয়ে আসলে?

27. কেন তুমি চালাকি করে আমাকে না বলে গোপনে পালিয়ে আসলে? আমাকে বললে তো আমি আনন্দের সংগে, গান করে, খঞ্জনি ও বীণা বাজিয়ে তোমাকে বিদায় দিতাম।

28. তুমি আমার মেয়েদের ও নাতি-নাত্‌নীদের চুম্বন করতেও আমাকে দিলে না; তুমি বোকার মত কাজ করেছ।

29. তোমাদের ক্ষতি করবার ক্ষমতা যে আমার হাতে নেই, তা নয়। কিন্তু তোমাদের পূর্বপুরুষদের আল্লাহ্‌ গত রাতে আমাকে বলেছেন, ‘সাবধান! ইয়াকুবকে ভাল-মন্দ কিছুই বোলো না।’

30. বেশ, তোমার বাবার বাড়ী যাবার জন্যই না হয় তোমার প্রাণ কাঁদছিল আর তাই তুমি বেরিয়ে পড়েছ, কিন্তু আমার পারিবারিক দেবতাগুলো চুরি করে এনেছ কেন?”

31. ইয়াকুব জবাবে তাঁকে বললেন, “আমার ভয় হয়েছিল, কারণ আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো জোর করে আপনার মেয়েদের আমার কাছ থেকে কেড়ে রেখে দেবেন। তাই আমি পালিয়ে এসেছি।

32. আপনি যার কাছে আপনার ঐ দেবতাগুলো পাবেন তাকে হত্যা করা হবে। আমার সমস্ত জিনিসপত্রের মধ্যে যদি আপনার কোন কিছু থেকে থাকে তবে আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের সামনে তা তালাশ করে নিয়ে নিন।” সেই দেবমূর্তিগুলো যে রাহেলাই চুরি করে এনেছেন তা ইয়াকুব জানতেন না।

33. তখন লাবন একে একে ইয়াকুব, লেয়া ও দুই বাঁদীর তাম্বুতে ঢুকলেন কিন্তু সেখানে তিনি সেগুলো পেলেন না। পরে তিনি লেয়ার তাম্বু থেকে বের হয়ে রাহেলার তাম্বুতে গিয়ে ঢুকলেন।

34. রাহেলা কিন্তু সেই দেবমূর্তিগুলো নিয়ে উটের গদির নীচে রেখেছিলেন এবং সেই সময় তিনি সেই গদির উপরে বসে ছিলেন। লাবন তাঁর তাম্বুর সব জায়গায় হাত্‌ড়ে দেখলেন কিন্তু সেখানেও সেগুলো পেলেন না।

35. শেষে রাহেলা তাঁর পিতাকে বললেন, “দেখুন, আমি উঠে দাঁড়াতে পারছি না বলে আপনি বিরক্ত হবেন না, কারণ এখন আমার মাসিকের সময়।” কাজেই লাবন তালাশ করেও সেই দেবমূর্তিগুলো পেলেন না।

36. তখন ইয়াকুব রেগে গিয়ে ঝগড়ার সুরে লাবনকে বললেন, “আমার অপরাধ কোথায়, আর আমার অন্যায়ই বা কোথায় যে, আপনি এমনি করে আমার পিছনে তাড়া করে এসেছেন?

37. আমার সমস্ত জিনিসপত্র হাত্‌ড়ে দেখে আপনার সংসারের কোন্‌ জিনিসটা পেলেন? পেয়ে থাকলে তা আমার ও আপনার আত্মীয়-স্বজনদের সামনে রাখুন যাতে তাঁরা আমাদের দুই পক্ষেরই বিচার করতে পারেন।

38. আমি এই বিশ বছর আপনার সংগে কাটিয়েছি। এর মধ্যে আপনার কোন ভেড়ী বা ছাগীর গর্ভ নষ্ট হয় নি, কিংবা আপনার পালের কোন ভেড়াও আমি মেরে খাই নি।

39. এমন কি, বুনো জন্তুর মেরে ফেলা কোন পশুও আমি আপনার কাছে নিয়ে যাই নি। সেই ক্ষতি আমি নিজেই বহন করেছি। কোন পশু চুরি হয়ে গেলে- তা দিনে হোক বা রাতে হোক- আপনি আমার কাছ থেকে তার ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন।

40. আমি দিনে পুড়েছি গরমে আর রাতে কেঁপেছি ঠাণ্ডায়, আমার চোখে ঘুম ছিল না। এ-ই ছিল আমার অবস্থা।

41. যে বিশ বছর আমি আপনার বাড়ীতে ছিলাম তার চৌদ্দ বছর আমি আপনার কাজ করেছি আপনার দুই মেয়ের জন্য, আর ছয় বছর কেটেছে আপনার পশুপালের পিছনে। এর মধ্যে আপনি দশ-দশবার আমার বেতন বদল করেছেন।

42. আমার বাবার আল্লাহ্‌, যিনি ইব্রাহিমের আল্লাহ্‌ এবং ইসহাকের ভয়ের পাত্র, তিনি যদি আমার সংগে না থাকতেন তবে নিশ্চয়ই আপনি এখন আমাকে খালি হাতেই বিদায় করতেন। আল্লাহ্‌ আমার কষ্ট ও কঠিন পরিশ্রম দেখেছেন। সেইজন্যই তিনি গত রাতে এর সুবিচার করেছেন।”

হযরত ইয়াকুব ও লাবনের মধ্যে চুক্তি

43. এই কথার জবাবে লাবন ইয়াকুবকে বললেন, “এই মেয়েরা আমারই মেয়ে, এই ছেলেমেয়েরা আমারই নাতি-নাত্‌নী, আর এই সব পশুর পালও আমার। তুমি এখানে যা কিছু দেখছ তা সবই আমার; তবু আজকে আমার এই মেয়েদের বা তাদের ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে আমার করবার কিছু নেই।

44. তার চেয়ে এস, আমরা দু’জনে একটা চুক্তি করি যা তোমার ও আমার মধ্যে সাক্ষী হয়ে থাকবে।”

45-46. তখন ইয়াকুব একটা পাথর নিয়ে থামের মত করে দাঁড় করালেন আর তাঁর আত্মীয়দের বললেন, “আপনারা কিছু পাথর এনে জড়ো করুন।” তখন তারা পাথর এনে জড়ো করে একটা ঢিবি করল আর সকলেই তার পাশে খাওয়া-দাওয়া করল।

47. লাবন সেই ঢিবির নাম রাখলেন যিগর্‌-সাহদূথা (যার মানে “সাক্ষ্য-ঢিবি”), কিন্তু ইয়াকুব তাঁর নিজের ভাষায় তার নাম দিলেন গল্‌-এদ (যার মানেও “সাক্ষ্য-ঢিবি”)।

48. লাবন বললেন, “এই ঢিবিটাই আজ তোমার ও আমার মধ্যে সাক্ষী হয়ে রইল।” এইজন্য এই ঢিবিটার নাম দেওয়া হয়েছিল গল্‌-এদ।

49. তা ছাড়া এর আর একটা নাম দেওয়া হয়েছিল মিসপা (যার মানে “পাহারা-স্থান”), কারণ লাবন বলেছিলেন, “আমরা যখন আর একে অন্যকে দেখব না তখন মাবুদই যেন আমার ও তোমার উপর চোখ রাখেন।

50. যদি তুমি আমার মেয়েদের সংগে খারাপ ব্যবহার কর, কিংবা আমার মেয়েরা থাকতেও অন্য স্ত্রী গ্রহণ কর, তবে আর কেউ আমাদের সংগে না থাকলেও মনে রেখো, আল্লাহ্‌ আমাদের সাক্ষী হয়ে রইলেন।”

51. লাবন ইয়াকুবকে আরও বললেন, “এই ঢিবির দিকে চেয়ে দেখ, আর এই যে থামটা আমি আমার ও তোমার মধ্যে রেখেছি সেটার দিকেও চেয়ে দেখ।

52. এই ঢিবি আর থাম দু’টাই এই কথার সাক্ষী হয়ে রইল যে, এই ঢিবি পার হয়ে আমি তোমার ক্ষতি করতে যাব না, আর তুমিও এই ঢিবি কিংবা থাম পার হয়ে আমার ক্ষতি করতে আসবে না।

53. তা করলে ইব্রাহিমের আল্লাহ্‌ এবং নাহুর ও তাঁদের বাবার দেবতারাই যেন আমাদের বিচার করেন।” ইয়াকুব কিন্তু তাঁরই নামে কসম খেলেন যিনি তাঁর পিতা ইসহাকের ভয়ের পাত্র ছিলেন।

54. এর পর ইয়াকুব সেই পাহাড়ে পশু-কোরবানী দিলেন এবং তাঁর আত্মীয়দের খাওয়া-দাওয়া করতে ডাকলেন। খাওয়া-দাওয়ার পর সেই পাহাড়ের উপরেই তাঁরা রাতটা কাটালেন।

55. পরদিন খুব ভোরে উঠে লাবন তাঁর মেয়েদের ও নাতি-নাত্‌নীদের চুম্বন ও দোয়া করলেন। তারপর বিদায় নিয়ে তিনি তাঁর বাড়ীর দিকে ফিরে চললেন।