অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12
  13. 13
  14. 14
  15. 15
  16. 16
  17. 17
  18. 18
  19. 19
  20. 20
  21. 21
  22. 22
  23. 23
  24. 24
  25. 25
  26. 26
  27. 27
  28. 28
  29. 29
  30. 30
  31. 31
  32. 32
  33. 33
  34. 34
  35. 35
  36. 36
  37. 37
  38. 38
  39. 39
  40. 40
  41. 41
  42. 42
  43. 43
  44. 44
  45. 45
  46. 46
  47. 47
  48. 48
  49. 49
  50. 50

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

পয়দায়েশ 24 কিতাবুল মোকাদ্দস (BACIB)

হযরত ইস্‌হাক ও বিবি রেবেকার বিয়ে

1. সেই সময় ইব্রাহিম বৃদ্ধ ও অনেক বয়স্ক ছিলেন এবং মাবুদ ইব্রাহিমকে সমস্ত বিষয়ে দোয়া করেছিলেন।

2. তখন ইব্রাহিম তাঁর গোলামকে, তাঁর সমস্ত বিষয়ের ভার যার উপর রয়েছে বাড়ির সেই প্রাচীনকে বললেন, সবিনয়ে বলি, তুমি আমার ঊরুর নিচে হাত দাও;

3. আমি তোমাকে বেহেশত ও দুনিয়ার আল্লাহ্‌ মাবুদের নামে এই কসম করাই, যে কেনানীয় লোকদের মধ্যে আমি বাস করছি, তুমি আমার পুত্রের বিয়ের জন্য তাদের কোন কন্যা গ্রহণ করবে না,

4. কিন্তু আমার দেশে, আমার জ্ঞাতিদের কাছে গিয়ে আমার পুত্র ইস্‌হাকের জন্য একটি কন্যা আনবে।

5. তখন সেই গোলাম তাঁকে বললেন, কি জানি, আমার সঙ্গে এই দেশে আসতে কোন কন্যা সম্মত হবে কি না; আপনি যে দেশ ছেড়ে এসেছেন, আপনার পুত্রকে কি আবার সেই দেশে নিয়ে যাব?

6. তখন ইব্রাহিম তাঁকে বললেন, সাবধান, কোনক্রমে আমার পুত্রকে আবার সেখানে নিয়ে যেও না।

7. মাবুদ, বেহেশতের আল্লাহ্‌, যিনি আমাকে পিতার বাড়ি-ঘর ও জন্মভূমি থেকে বের করে এনেছেন, আমার সঙ্গে আলাপ করেছেন এবং এমন কসম খেয়েছেন যে, আমি তোমার বংশকে এই দেশ দেব, তিনিই তোমার আগে তাঁর ফেরেশতা পাঠিয়ে দেবেন; তাতে তুমি আমার পুত্রের জন্য সেখান থেকে একটি কন্যা আনতে পারবে।

8. যদি কোন কন্যা তোমার সঙ্গে আসতে সম্মত না হয়, তবে তুমি আমার এই কসম থেকে মুক্ত হবে; কিন্তু কোনক্রমে আমার পুত্রকে আবার সেই দেশে নিয়ে যেও না।

9. তাতে সেই গোলাম তাঁর মালিক ইব্রাহিমের ঊরুর নিচে হাত দিয়ে সেই বিষয়ে কসম করলেন।

10. পরে সেই গোলাম তাঁর মালিকের উটগুলোর মধ্য থেকে দশটা উট ও তাঁর মালিকের সব রকম উত্তম দ্রব্য হাতে নিয়ে প্রস্থান করলেন, অরাম-নহরয়িম দেশে, নাহোরের নগরে যাত্রা করলেন।

11. সন্ধ্যাকালে যে সময়ে স্ত্রীলোকেরা পানি তুলতে বের হয়, সেই সময় তিনি নগরের বাইরে পানিপূর্ণ কূপের কাছে উটগুলোকে বসিয়ে রাখলেন,

12. এবং বললেন, হে মাবুদ, আমার মালিক ইব্রাহিমের আল্লাহ্‌, বিনয় সহকারে বলি, আজ আমার সম্মুখে শুভফল উপস্থিত করো, আমার মালিক ইব্রাহিমের প্রতি তোমার অটল মহব্বত প্রকাশ কর।

13. দেখ, আমি এই পানিপূর্ণ কূপের কাছে দাঁড়িয়ে আছি এবং এই নগরবাসীদের কন্যারা পানি তুলতে বাইরে আসছে;

14. অতএব যে কন্যাকে আমি বলবো, আপনার কলসী নামিয়ে আমাকে পানি পান করান, সে যদি বলে, পান করুন, আপনার উটগুলোকেও পান করাব, তবে তোমার গোলাম ইস্‌হাকের জন্য তোমার নিরূপিত কন্যা সে-ই হোক; এতে আমি জানবো যে, তুমি আমার মালিকের প্রতি অটল মহব্বত প্রকাশ করলে।

15. এই কথা বলতে না বলতে, দেখ, রেবেকা কলসী কাঁধে বাইরে এলেন। তিনি ইব্রাহিমের নাহোর নামক ভাইয়ের স্ত্রী মিল্কার পুত্র বথূয়েলের কন্যা।

16. সেই কন্যা দেখতে বড়ই সুন্দরী এবং অবিবাহিতা ও কুমারী ছিলেন। তিনি কূপে নেমে কলসী পূর্ণ করে উঠে আসছেন,

17. এমন সময়ে সেই গোলাম দৌড়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললেন, আরজ করি, আপনার কলসী থেকে আমাকে কিঞ্চিৎ পানি পান করতে দিন।

18. তিনি বললেন, জনাব, পান করুন। এই বলে তিনি শীঘ্র কলসীটা হাতের উপরে নামিয়ে তাঁকে পান করতে দিলেন।

19. আর তাঁকে পান করাবার পর বললেন, যতক্ষণ আপনার উটগুলোর পানি পান সমাপ্ত না হয়, ততক্ষণ আমি ওদের জন্যও পানি তুলবো।

20. পরে তিনি শীঘ্র চৌবাচ্চায় কলসীর পানি ঢেলে পুনরায় পানি তুলতে কূপের কাছে দৌড়ে গিয়ে তাঁর উটগুলোর জন্য পানি তুললেন।

21. তাতে সেই পুরুষ তাঁর প্রতি একদৃষ্টে চেয়ে, মাবুদ তাঁর যাত্রা সফল করেন কি না, তা জানবার জন্য নীরব রইলেন।

22. উটগুলোকে পানি পান করানো হলে পর সেই পুরুষ অর্ধেক তোলা পরিমিত স্ব্বর্ণের নথ এবং দশ তোলা পরিমিত দুই হাতের সোনার বালা নিয়ে বললেন, আপনি কার কন্যা?

23. অনুগ্রহ করে আমাকে বলুন, আপনার পিতার বাড়িতে কি আমাদের রাত্রি যাপনের স্থান আছে?

24. তিনি জবাবে বললেন, আমি সেই বথূয়েলের কন্যা, যিনি মিল্কার পুত্র, যাঁকে তিনি নাহোরের জন্য প্রসব করেছিলেন।

25. তিনি আরও বললেন, খড় ও ভুষি আমাদের কাছে যথেষ্ট আছে এবং রাত্রি যাপনের স্থানও আছে।

26. তখন সেই ব্যক্তি ভূমিতে মাথা ঠেকিয়ে মাবুদকে সেজ্‌দা করে বললেন,

27. আমার মালিক ইব্রাহিমের আল্লাহ্‌ মাবুদ ধন্য হোন, তিনি আমার মালিকের সঙ্গে তাঁর অটল মহব্বত প্রকাশ করতে ও বিশ্বস্ততা দেখাতে নিবৃত্ত হন নি; মাবুদ আমাকেও পথ দেখিয়ে আমার মালিকের জ্ঞাতিদের বাড়িতে আনলেন।

28. পরে সেই কন্যা দৌড়ে গিয়ে তাঁর মায়ের বাড়ির লোকদেরকে এসব কথা জানালেন।

29. রেবেকার লাবন নামে এক ভাই ছিলেন; তিনি বাইরে ঐ ব্যক্তির উদ্দেশে কূপের কাছে দৌড়ে গেলেন।

30. নথ ও বোনের হাতে বালা দেখে এবং সেই ব্যক্তি আমাকে এই এই কথা বললেন, আপন বোন রেবেকার মুখে এই কথা শুনে, তিনি সেই পুরুষের কাছে গেলেন, আর দেখ, তিনি কূপের কাছে উটগুলোর কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

31. তখন লাবন বললেন, হে মাবুদের দোয়ার পাত্র, আসুন, কেন বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন? আমি তো আপনাদের ঘর এবং উটগুলোর জন্যও স্থান প্রস্তুত করেছি।

32. তখন ঐ ব্যক্তি বাড়িতে প্রবেশ করে উটগুলোর আচ্ছাদন খুলে তিনি উটগুলোর জন্য পোয়াল ও কলাই দিলেন এবং তাঁর ও তাঁর সঙ্গী লোকদের পা ধোবার পানি দিলেন।

33. পরে তাঁর সম্মুখে খাদ্যদ্রব্য রাখা হল, কিন্তু তিনি বললেন, আমার কথা না বলে আমি আহার করবো না। লাবন বললেন, বলুন।

34. তখন তিনি বলতে লাগলেন, আমি ইব্রাহিমের গোলাম;

35. মাবুদ আমার মালিককে অনেক দোয়া করেছেন, এতে তিনি ধনবান হয়েছেন এবং মাবুদ তাঁকে ছাগল-ভেড়া ও গরুর পাল এবং রূপা ও সোনা, গোলাম ও বাঁদী, উট ও গাধা দিয়েছেন।

36. আমার মালিকের স্ত্রী সারা বৃদ্ধকালে তাঁর জন্য একটি পুত্র প্রসব করেছেন, তাঁকেই তিনি তাঁর সর্বস্ব দিয়েছেন।

37. আমার মালিক আমাকে কসম করিয়ে বললেন, আমি যাদের দেশে বাস করছি, তুমি আমার পুত্রের জন্য সেই কেনানীয়দের কোন কন্যা এনো না;

38. কিন্তু আমার পিতৃকুলের ও আমার গোষ্ঠীর কাছে গিয়ে আমার পুত্রের জন্য কন্যা এনো।

39. তখন আমি মালিককে বললাম, কি জানি, কোন কন্যা আমার সঙ্গে আসবে কিনা।

40. তিনি বললেন, আমি যাঁর সাক্ষাতে গমনাগমন করি, সেই মাবুদ তোমার সঙ্গে তাঁর ফেরেশতা পাঠিয়ে তোমার যাত্রা সফল করবেন। তুমি আমার গোষ্ঠী ও আমার পিতৃকুল থেকে আমার পুত্রের জন্য কন্যা আনবে।

41. তা করলে এই কসম থেকে মুক্ত হবে; আমার গোষ্ঠীর কাছে গেলে যদি তারা কন্যা না দেয়, তবে তুমি এই কসম থেকে মুক্ত হবে।

42. আর আজ আমি ঐ কূপের কাছে উপস্থিত হয়ে বললাম, হে মাবুদ, আমার মালিক ইব্রাহিমের আল্লাহ্‌, তুমি যদি আমার এই যাত্রা সফল করো,

43. তবে দেখ, আমি এই পানিপূর্ণ কূপের কাছে দাঁড়িয়ে আছি, অতএব পানি তুলবার জন্য আগত যে কন্যাকে আমি বলবো, আপনার কলসী থেকে আমাকে কিঞ্চিৎ পানি পান করতে দেন,

44. তিনি যদি বলেন, আপনিও পান করুন এবং আপনার উটগুলোর জন্যও আমি পানি তুলে দেব; তবে তিনি সেই কন্যা হোন, যাঁকে মাবুদ আমার মালিকের পুত্রের জন্য মনোনীত করেছেন।

45. এই কথা আমি মনে মনে বলতে না বলতে, দেখ, রেবেকা কলসী কাঁধে বাইরে এলেন; পরে তিনি কূপে নেমে পানি তুললে আমি বললাম, আরজ করি, আমাকে পানি পান করান।

46. তখন তিনি শীঘ্র কাঁধ থেকে কলসী নামিয়ে বললেন, পান করুন, আমি আপনার উটগুলোকেও পান করাবো। তখন আমি পান করলাম; আর তিনি উটগুলোকেও পান করালেন।

47. পরে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কার কন্যা? তিনি বললেন, আমি বথূয়েলের কন্যা, তিনি নাহোরের পুত্র, যাঁকে মিল্কা তাঁর জন্য প্রসব করেছিলেন। তখন আমি তাঁর নাকে নথ ও হাতে বালা পরিয়ে দিলাম।

48. আর মস্তক নত করে মাবুদের উদ্দেশ্যে সেজ্‌দা করলাম এবং যিনি আমার মালিকের পুত্রের জন্য তাঁর ভাইয়ের কন্যাকে গ্রহণ করার জন্য আমাকে সঠিক পথে আনলেন, আমার মালিক ইব্রাহিমের আল্লাহ্‌ সেই মাবুদের প্রশংসা করলাম।

49. অতএব আপনারা যদি এখন আমার মালিকের সঙ্গে দয়া ও সত্য ব্যবহার করতে সম্মত হন, তা বলুন; আর যদি না হন, তাও বলুন; তাতে আমি অন্য কোথাও চেষ্টা করতে পারবো।

50. তখন লাবন ও বথূয়েল জবাবে বললেন, মাবুদ থেকে এই ঘটনা হল, আমরা ভাল-মন্দ কিছুই বলতে পারি না।

51. ঐ দেখুন, রেবেকা আপনার সামনেই আছে; ওকে নিয়ে প্রস্থান করুন; এই আপনার মালিকের পুত্রের স্ত্রী হোক, যেমন মাবুদ বলেছেন।

52. তাঁদের কথা শুনে ইব্রাহিমের গোলাম মাবুদের উদ্দেশে ভূমিতে সেজ্‌দা করলেন।

53. পরে সেই গোলাম রূপার ও সোনার অলংকার ও কাপড় বের করে রেবেকাকে দিলেন এবং তাঁর ভাই ও মাকে বহুমূল্য দ্রব্য দিলেন।

54. আর তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা ভোজন পান করে সেখানে রাত্রিবাস করলেন; পরে তাঁরা প্রাতঃকালে উঠলে তিনি বললেন, আমার মালিকের কাছে যেতে আমাকে বিদায় দিন।

55. তাতে রেবেকার ভাই ও মা বললেন, কন্যাটি আমাদের কাছে কিছুদিন থাকুক, কমপক্ষে দশ দিন থাকুক, পরে যাবে।

56. কিন্তু তিনি তাঁদের বললেন, আমাকে বিলম্ব করাবেন না, কেননা মাবুদ আমার যাত্রা সফল করলেন; আমাকে বিদায় দিন; আমি নিজের মালিকের কাছে যাই।

57. তাতে তাঁরা বললেন, আমরা কন্যাকে ডেকে তার সাক্ষাতেই জিজ্ঞাসা করি।

58. পরে তাঁরা রেবেকাকে ডেকে বললেন, তুমি কি এই ব্যক্তির সঙ্গে যাবে? তিনি বললেন, যাব।

59. তখন তাঁরা তাঁদের বোন রেবেকা ও তাঁর ধাত্রীকে এবং ইব্রাহিমের গোলামকে ও তাঁর লোকদেরকে বিদায় দিলেন।

60. আর রেবেকাকে দোয়া করে বললেন,তুমি আমাদের বোন,হাজার হাজার ও লক্ষ লক্ষসন্তানের মা হও;তোমার বংশ তার দুশমনদেরনগর অধিকার করুক।

61. পরে রেবেকা ও তাঁর বাঁদীরা উঠলেন এবং উটে চড়ে সেই মানুষটির সঙ্গে যাত্রা করলেন। এভাবে সেই গোলাম রেবেকাকে নিয়ে প্রস্থান করলেন।

62. আর ইস্‌হাক বের্‌-লহয়্‌-রোয়ী নামক স্থানে গিয়ে ফিরে এসেছিলেন, কেননা তিনি দক্ষিণ দেশে বাস করছিলেন।

63. ইস্‌হাক সন্ধ্যাকালে ধ্যান করতে মাঠে গিয়েছিলেন, পরে চোখ তুলে চাইলেন, আর দেখ, কতগুলো উট আসছে।

64. রেবেকা চোখ তুলে যখন ইস্‌হাককে দেখলেন তখন উট থেকে নামলেন এবং সেই গোলামকে জিজ্ঞাসা করলেন,

65. আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ক্ষেতের মধ্য দিয়ে আসছেন, উনি কে? গোলাম বললেন, উনি আমার মালিক। তখন রেবেকা চাদর নিয়ে নিজেকে আচ্ছাদন করলেন।

66. পরে সেই গোলাম যা যা করে এসেছেন সেই সব কাজের বিবরণ ইস্‌হাককে দিলেন।

67. তখন ইস্‌হাক রেবেকাকে গ্রহণ করে তাঁর মা সারার তাঁবুতে নিয়ে গিয়ে তাঁকে বিয়ে করলেন এবং তাঁকে মহব্বত করলেন। তাতে ইস্‌হাক মাতৃবিয়োগের শোক থেকে সান্ত্বনা পেলেন।