1. নদীতে মাবুদ আঘাত করার পর সাত দিন গত হল। পরে মাবুদ মূসাকে বললেন, তুমি ফেরাউনের কাছে যাও, তাকে বল, মাবুদ এই কথা বলেন, আমার সেবা করার জন্য আমার লোকদেরকে ছেড়ে দাও।
2. যদি ছেড়ে দিতে অসম্মত হও, তবে দেখ, আমি ব্যাঙ দ্বারা তোমার সমস্ত প্রদেশকে আঘাত করবো।
3. নদী ব্যাঙে পরিপূর্ণ হবে; সেসব ব্যাঙ উঠে তোমার বাড়িতে, শয়নাগারে ও বিছানায় এবং তোমার কর্মকর্তাদের বাড়িতে, তোমার লোকদের মধ্যে, তোমার তুন্দুরে ও তোমার আটা মাখবার পাত্রে প্রবেশ করবে;
4. আর তোমার, তোমার লোকদের ও তোমার সমস্ত কর্মকর্তাদের উপরে ব্যাঙ উঠবে।
5. পরে মাবুদ মূসাকে বললেন, হারুনকে বল, তুমি সমস্ত নদী, খাল ও বিলের উপরে লাঠিসুদ্ধ হাত বাড়িয়ে মিসর দেশের উপরে ব্যাঙ আনাও।
6. তাতে হারুন মিসরের সমস্ত পানির উপরে তাঁর হাত বাড়িয়ে দিলে পর ব্যাঙেরা উঠে এসে মিসর দেশ ছেয়ে ফেললো।
7. আর জাদুকরেরাও জাদুমন্ত্রের জোরে সেই একই কাজ করে মিসর দেশের উপরে ব্যাঙ আনলো।
8. পরে ফেরাউন মূসা ও হারুনকে ডেকে বললেন, মাবুদের কাছে ফরিয়াদ কর, যেন তিনি আমার কাছ থেকে ও আমার লোকদের কাছ থেকে এসব ব্যাঙ দূর করে দেন, তাতে আমি লোকদেরকে ছেড়ে দেব, যেন তারা মাবুদের উদ্দেশে পশু-কোরবানী করতে পারে।
9. তখন মূসা ফেরাউনকে বললেন, মেহেরবানী করে আমাকে বলুন, আপনার ও আপনার কর্মকর্তাদের ও লোকদের জন্য কখন আমি মুনাজাত করবো যাতে সমস্ত ব্যাঙ আপনার কাছ থেকে ও আপনার সমস্ত ঘর-বাড়ি থেকে উচ্ছিন্ন হয়ে কেবল নদীতে থাকে।
10. তিনি বললেন, আগামীকাল। তখন মূসা বললেন, আপনার কথা অনুসারেই হোক, যেন আপনি জানতে পারেন যে, আমাদের আল্লাহ্ মাবুদের মত আর কেউ নেই;
11. ব্যাঙগুলো আপনার কাছ থেকে ও আপনার বাড়ি-ঘর, কর্মকর্তাদের ও লোকদের কাছ থেকে দূর হয়ে কেবল নদীতেই থাকবে।
12. পরে মূসা ও হারুন ফেরাউনের কাছ থেকে বাইরে গেলেন এবং মূসা ফেরাউনের বিরুদ্ধে যেসব ব্যাঙ এনেছিলেন, সেসব বিষয়ে মাবুদের কাছে ফরিয়াদ জানালেন।
13. আর মাবুদ মূসার কথা অনুসারে করলেন, তাতে বাড়িতে, প্রাঙ্গণে ও ক্ষেতে সমস্ত ব্যাঙ মারা গেল।
14. তখন লোকেরা সেসব একত্র করে ঢিবি করলে দেশে দুর্গন্ধ হল।
15. কিন্তু ফেরাউন যখন দেখলেন, ব্যাঙের উৎপাত আর নেই, তখন তাঁর অন্তর কঠিন করলেন, তাঁদের কথায় মনোযোগ দিলেন না। মাবুদ যেমন বলেছিলেন তেমনি হল।
16. পরে মাবুদ মূসাকে বললেন, হারুনকে বল, তুমি তোমার লাঠি তুলে ভূমির ধূলিতে প্রহার কর, তাতে সেই ধূলি মশায় পরিণত হয়ে সারা মিসর দেশ ছেয়ে ফেলবে।
17. তখন তাঁরা তা-ই করলেন; হারুন তাঁর লাঠি সহ হাত বাড়িয়ে ভূমির ধূলিতে প্রহার করলেন, তাতে মানুষের ও পশুর উপর মশার উৎপাত দেখা দিল, মিসর দেশের সর্বত্র ভূমির সমস্ত ধূলি মশায় পরিণত হয়ে গেল।
18. তখন জাদুকরেরা তাদের জাদু-মন্ত্রের জোরে মশা উৎপন্ন করার জন্য সেরকম করলো বটে কিন্তু পারল না, আর মানুষ ও পশুর উপর মশার উৎপাত হতে লাগল।
19. তখন জাদুকরেরা ফেরাউনকে বললো, এতে আল্লাহ্র আঙ্গুলের ইশারা আছে। তবুও ফেরাউনের অন্তর কঠিন হল, তিনি তাঁদের কথায় মনোযোগ দিলেন না; যেমন মাবুদ বলেছিলেন।
20. আর মাবুদ মূসাকে বললেন, তুমি খুব ভোরে উঠে গিয়ে ফেরাউনের সম্মুখে দাঁড়াও; দেখ, সে পানির কাছে আসবে; তুমি তাকে এই কথা বল, মাবুদ এই কথা বলেন, আমার সেবা করার জন্য আমার লোকদেরকে ছেড়ে দাও।
21. যদি আমার লোকদেরকে ছেড়ে না দাও, তবে দেখ, আমি তোমার উপর, তোমার কর্মকর্তাদের উপর, লোকদের ও সমস্ত বাড়ি-ঘরের উপর ডাঁশ মাছির ঝাঁক প্রেরণ করবো; মিসরীয়দের বাড়ি-ঘরগুলো, এমন কি, তাদের বাসভূমিও ডাঁশ মাছিতে পরিপূর্ণ হবে।
22. কিন্তু আমি সেদিন আমার লোকদের নিবাসস্থান গোশন প্রদেশ পৃথক করবো; সেই স্থানে ডাঁশ মাছি থাকবে না; যেন তুমি জানতে পার যে, দুনিয়ার মধ্যে আমিই মাবুদ।
23. আমি আমার লোক ও তোমার লোকদের মধ্যে প্রভেদ করবো; আগামীকাল এই চিহ্ন হবে।
24. পরে মাবুদ সেরকম করলেন, ফেরাউন ও তাঁর কর্মকর্তাদের বাড়িতে ডাঁশ মাছির বড় বড় ঝাঁক উপস্থিত হল; তাতে সমস্ত মিসর দেশে ডাঁশ মাছির ঝাঁক হেতু দেশটার সর্বনাশ হতে লাগল।
25. তখন ফেরাউন মূসা ও হারুনকে ডেকে এনে বললেন, তোমরা যাও দেশের মধ্যে তোমাদের আল্লাহ্র উদ্দেশে কোরবানী কর।
26. মূসা বললেন, তা করা উচিত হবে না, কেননা আমাদের আল্লাহ্ মাবুদের উদ্দেশে মিসরীয়দের ঘৃণাজনক কোরবানী করতে হবে; দেখুন, মিসরীয়দের সাক্ষাতে তাদের ঘৃণাজনক কোরবানী করলে তারা কি আমাদেরকে পাথরের আঘাতে হত্যা করবে না?
27. আমরা তিন দিনের পথ মরুভূমিতে গিয়ে, আমাদের আল্লাহ্ মাবুদ যে হুকুম দেবেন, সেই অনুসারে তাঁর উদ্দেশে কোরবানী করবো।
28. ফেরাউন বললেন, আমি তোমাদের ছেড়ে দিচ্ছি, তোমরা মরুভূমিতে গিয়ে তোমাদের আল্লাহ্ মাবুদের উদ্দেশে কোরবানী কর; কিন্তু অনেক দূরে যেও না; তোমরা আমার জন্য মিনতি কর।
29. তখন মূসা বললেন, দেখুন, আমি আপনার কাছ থেকে গিয়ে মাবুদের কাছে মিনতি করবো, তাতে ফেরাউন, তাঁর কর্মকর্তাদের ও তাঁর লোকদের কাছ থেকে আগামীকাল ডাঁশ মাছির ঝাঁকগুলো দূরে যাবে; কিন্তু মাবুদের উদ্দেশে কোরবানী করার জন্য লোকদেরকে ছেড়ে দেবার বিষয়ে ফেরাউন পুনর্বার যেন প্রবঞ্চনা না করেন।
30. পরে মূসা ফেরাউনের কাছ থেকে বাইরে গিয়ে মাবুদের কাছে ফরিয়াদ জানালেন।
31. তখন মাবুদ মূসার কথা অনুসারে কাজ করলেন; ফেরাউন, তাঁর কর্মকর্তাদের ও লোকদের কাছ থেকে ডাঁশ মাছির সমস্ত ঝাঁক দূর করলেন; একটিও অবশিষ্ট রইলো না।
32. কিন্তু এবারও ফেরাউন তাঁর অন্তর কঠিন করলেন, লোকদের ছেড়ে দিলেন না।