অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12
  13. 13
  14. 14
  15. 15
  16. 16
  17. 17
  18. 18
  19. 19
  20. 20
  21. 21
  22. 22
  23. 23
  24. 24

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

২ শামুয়েল 19 Kitabul Mukkadas (MBCL)

1. পরে যোয়াবকে জানানো হল যে, অবশালোমের জন্য বাদশাহ্‌ কাঁদছেন আর শোক করছেন।

2. এই কথা শুনে সেই জয়ের দিনটা সৈন্যদলের কাছে একটা শোকের দিন হয়ে উঠল, কারণ সেই দিনই সৈন্যেরা শুনতে পেল যে, বাদশাহ্‌ তাঁর ছেলের জন্য দুঃখ করছেন।

3. যুদ্ধ থেকে পালিয়ে যাওয়া লোকেরা যেমন লজ্জায় চুপি চুপি ফিরে আসে তেমনি করেই দাউদের সৈন্যেরা সেই দিন চুপি চুপি শহরে গিয়ে ঢুকল।

4. বাদশাহ্‌ তাঁর মুখ ঢেকে এই বলে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন, “হায়, আমার ছেলে অবশালোম! হায়, অবশালোম, আমার ছেলে, আমার ছেলে!”

5. তখন যোয়াব ঘরের ভিতরে গিয়ে বাদশাহ্‌কে বললেন, “যারা আপনার জীবন, আপনার ছেলেমেয়েদের জীবন এবং আপনার স্ত্রী ও উপস্ত্রীদের জীবন রক্ষা করেছে আপনি আজ আপনার সেই সব লোকদের অপমান করলেন।

6. যারা আপনাকে ঘৃণা করে তাদেরই আপনি ভালবাসছেন, আর যারা আপনাকে ভালবাসে তাদের আপনি ঘৃণা করছেন। আজকে আপনি পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সেনাপতিরা ও তাদের লোকেরা আপনার কাছে কিছুই নয়। আমি দেখতে পাচ্ছি, আমরা সবাই মরে গিয়ে যদি অবশালোম বেঁচে থাকত তাহলে আপনি খুশী হতেন।

7. এখন আপনি বাইরে গিয়ে আপনার লোকদের উৎসাহ দিন। আমি মাবুদকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আপনি যদি সৈন্যদের কাছে না যান তবে আজ রাতে একজন লোকও আপনার সংগে থাকবে না। আপনার অল্প বয়স থেকে আজ পর্যন্ত আপনার উপর যত বিপদ ঘটেছে সেগুলোর চেয়ে এটাই হবে বড় বিপদ।”

8. তখন বাদশাহ্‌ উঠে শহরের সদর দরজার কাছে গিয়ে বসলেন। লোকেরা যখন জানতে পারল যে, বাদশাহ্‌ সদর দরজার কাছে বসেছেন তখন সবাই তাঁর কাছে আসল।এদিকে অবশালোমের পক্ষের ইসরাইলীয় সৈন্যেরা যে যার বাড়ীতে পালিয়ে গিয়েছিল।

জেরুজালেমে আবার হযরত দাউদ (আঃ)

9. ইসরাইলের সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্যে লোকেরা তর্কাতর্কি করে বলতে লাগল, “বাদশাহ্‌ শত্রুদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করেছেন; ফিলিস্তিনীদের হাত থেকে তিনিই আমাদের উদ্ধার করেছেন। কিন্তু এখন তিনি অবশালোমের জন্যই দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন।

10. যাঁকে আমরা আমাদের উপরে রাজত্ব করবার জন্য অভিষেক করেছিলাম সেই অবশালোম যুদ্ধে মারা গেছেন। তাহলে বাদশাহ্‌কে ফিরিয়ে আনবার জন্য তোমরা কোন কিছু বলছ না কেন?”

11. গোটা ইসরাইল দেশে যা বলাবলি হচ্ছে তা বাদশাহ্‌র কানে গিয়ে পৌঁছাল। সেইজন্য বাদশাহ্‌ দাউদ ইমাম সাদোক ও অবিয়াথরের কাছে এই কথা বলে পাঠালেন, “আপনারা এহুদার বৃদ্ধ নেতাদের এই কথা জিজ্ঞাসা করুন, ‘কেন আপনারা বাদশাহ্‌কে তাঁর রাজবাড়ীতে ফিরিয়ে আনতে পিছিয়ে রয়েছেন?

12. আপনারা তো তাঁরই ভাই, তাঁর নিজেরই রক্ত-মাংস। তাহলে বাদশাহ্‌কে ফিরিয়ে আনতে কেন আপনারা পিছিয়ে রয়েছেন?’

13. আপনারা আমার হয়ে অমাসাকে এই কথা বলুন, ‘তুমিও কি আমার রক্ত-মাংস নও? এখন থেকে যোয়াবের জায়গায় তুমি যদি আমার সৈন্যদলের সেনাপতি না হও তবে আল্লাহ্‌ যেন আমাকে শাস্তি দেন, আর তা ভীষণভাবেই দেন।’ ”

14. এইভাবে দাউদ এহুদার সমস্ত লোকের মন মাত্র একটি লোকের মনের মত করে জয় করে নিলেন। তারা বাদশাহ্‌কে এই কথা বলে পাঠাল, “আপনি ও আপনার সমস্ত লোক ফিরে আসুন।”

15. তখন বাদশাহ্‌ ফিরবার পথে জর্ডান নদী পর্যন্ত আসলেন।এহুদার লোকেরা বাদশাহ্‌র সংগে দেখা করে তাঁকে জর্ডান নদী পার করে নিয়ে আসবার জন্য গিল্‌গলে এসেছিল।

16. বহুরীম গ্রামের বিন্যামীন-গোষ্ঠীর গেরার ছেলে শিমিয়ি দেরি না করে এহুদার লোকদের সাথে বাদশাহ্‌ দাউদের সংগে দেখা করতে আসল।

17. তার সংগে ছিল বিন্যামীন-গোষ্ঠীর এক হাজার লোক এবং তালুতের পরিবারের চাকর সীবঃ ও তার পনেরজন ছেলে আর বিশজন চাকর। বাদশাহ্‌ জর্ডান নদী পার হওয়ার আগেই তারা তাড়াতাড়ি করে জর্ডান নদীর কাছে গিয়ে উপস্থিত হল।

18. বাদশাহ্‌র পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসবার জন্য এবং বাদশাহ্‌র ইচ্ছামত কাজ করবার জন্য তারা হেঁটে পার হওয়ার জায়গা দিয়ে নদী পার হল।বাদশাহ্‌ যখন জর্ডান নদী পার হবেন ঠিক সেই সময় গেরার ছেলে শিমিয়ি এসে বাদশাহ্‌র সামনে উবুড় হয়ে পড়ে বলল,

19. “হুজুর যেন আমার দোষ না ধরেন। আমার প্রভু মহারাজ যেদিন জেরুজালেম ছেড়ে যান সেই দিন আপনার গোলাম আমি যে অন্যায় করেছিলাম তা যেন আপনি মনে না রাখেন। মহারাজ যেন তাঁর মন থেকে তা দূর করে দেন।

20. আমি জানি যে, আমি গুনাহ্‌ করেছি। সেইজন্য আজ ইউসুফের বংশের মধ্যে আমিই সকলের আগে আমার প্রভু মহারাজের সংগে দেখা করবার জন্য এখানে এসেছি।”

21. তখন সরূয়ার ছেলে অবীশয় বললেন, “মাবুদের অভিষেক-করা বান্দাকে শিমিয়ি বদদোয়া দিয়েছিল বলে কি তাকে হত্যা করা উচিত নয়?”

22. জবাবে দাউদ বললেন, “হে সরূয়ার ছেলেরা, এই বিষয়ে তোমাদের সংগে আমার সম্বন্ধ কি? আজ কেন তোমরা আমার বিরুদ্ধে যাচ্ছ? আজ কি ইসরাইল দেশে কাউকে হত্যা করা উচিত? আমি কি এই কথা জানি না যে, আজও আমি বনি-ইসরাইলদের বাদশাহ্‌?”

23. তারপর বাদশাহ্‌ ওয়াদা করে শিমিয়িকে বললেন, “তোমাকে হত্যা করা হবে না।”

24. এর পর তালুতের নাতি মফীবোশৎ বাদশাহ্‌র সংগে দেখা করবার জন্য আসল। বাদশাহ্‌ চলে যাবার পর থেকে তাঁর নিরাপদে ফিরে আসবার দিন পর্যন্ত সে নিজের পায়ের যত্ন করে নি, দাড়ি ছাঁটে নি এবং কাপড়-চোপড়ও ধোয় নি।

25. বাদশাহ্‌ জেরুজালেমে ফিরে আসলে পর মফীবোশৎ তাঁর সংগে দেখা করবার জন্য আসল। তখন বাদশাহ্‌ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “মফীবোশৎ, তুমি আমার সংগে কেন গেলে না?”

26. সে বলল, “আমার প্রভু মহারাজ, আপনার গোলাম আমি খোঁড়া, তাই বলেছিলাম, ‘আমার গাধার উপর গদি চাপিয়ে আমি তার উপরে চড়ে বাদশাহ্‌র সংগে যাব।’ কিন্তু আমার চাকর সীবঃ আমার সংগে বেঈমানী করেছিল।

27. আমার প্রভু মহারাজের কাছে সে আমার দুর্নাম করেছে। আমার প্রভু মহারাজ আল্লাহ্‌র একজন ফেরেশতার মত; তাই আমার উপর আপনার যা খুশী তা-ই করুন।

28. আমার দাদার বংশধরেরা আমার প্রভু মহারাজের কাছে মৃত্যুর উপযুক্ত, কিন্তু তবুও আপনার যে লোকেরা আপনার টেবিলে খেতে বসে আপনি আপনার এই গোলামকেও তাদের মধ্যে একটা জায়গা দিয়েছিলেন। তাহলে মহারাজের কাছে আর অনুরোধ করবার আমার কি অধিকার আছে?”

29. বাদশাহ্‌ তাকে বললেন, “তোমার আর কিছু বলবার দরকার নেই। তুমি আর সীবঃ জমাজমি ভাগ করে নাও।”

30. মফীবোশৎ বাদশাহ্‌কে বলল, “সে-ই সব কিছু নিক। আমার প্রভু মহারাজ নিরাপদে বাড়ী ফিরে এসেছেন সেটাই আমার পক্ষে যথেষ্ট।”

31. বাদশাহ্‌ জেরুজালেমে ফিরে আসবার আগে গিলিয়দীয় বর্সিল্লয় রোগলীম থেকে এসে বাদশাহ্‌কে বিদায় দেবার জন্য তাঁর সংগে জর্ডান নদীর পারে এসেছিলেন।

32. বর্সিল্লয় খুব বুড়ো হয়ে গিয়েছিলেন; তাঁর বয়স ছিল আশি বছর। বাদশাহ্‌ যখন মহনয়িমে ছিলেন তখন তিনিই তাঁর জন্য খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন, কারণ তিনি খুব ধনী লোক ছিলেন।

33. বাদশাহ্‌ বর্সিল্লয়কে বললেন, “আমার সংগে পার হয়ে এসে জেরুজালেমে আমার কাছে থাকুন। আমিই আপনাকে পালন করব।”

34. কিন্তু জবাবে বর্সিল্লয় বাদশাহ্‌কে বললেন, “আমি আর কয় বছরই বা বাঁচব যে, আমি বাদশাহ্‌র সংগে জেরুজালেমে যাব?

35. আমার বয়স এখন আশি বছর। কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ তা কি এখন আর আমি বলতে পারি? আপনার গোলাম আমি এখন যা খাই তার স্বাদ কি আমি বুঝতে পারি? গায়ক-গায়িকাদের গান কি আমি এখনও শুনতে পাই? আপনার এই গোলাম কেন আমার প্রভু মহারাজের একটা বাড়তি বোঝা হবে?

36. মহারাজ কেন আমাকে এইভাবে পুরস্কার দেবেন? না, না, আমি মাত্র আপনার সংগে জর্ডান পার হয়ে যাব,

37. তারপর আমাকে ফিরে যেতে দিন যাতে আমি নিজের বাড়ীতে আমার মা-বাবার কবরের কাছে মরতে পারি। এই দেখুন, আপনার গোলাম কিম্‌হম; সে-ই আপনার সংগে জর্ডান নদী পার হয়ে যাক। আপনার যা ভাল বলে মনে হয় তার প্রতি আপনি তা-ই করবেন।”

38. বাদশাহ্‌ বললেন, “ঠিক আছে, কিম্‌হম আমার সংগে নদী পার হয়ে যাবে, আর আপনি যা চান আমি তার প্রতি তা-ই করব। এছাড়া আপনি আমার কাছ থেকে যা চান আপনার জন্য আমি তা-ই করব।”

39. এর পর সমস্ত লোক নদী পার হয়ে গেল, তারপর বাদশাহ্‌ নদী পার হলেন। বাদশাহ্‌ বর্সিল্লয়কে চুম্বন করে দোয়া করলেন আর বর্সিল্লয় আবার নদী পার হয়ে নিজের বাড়ীতে ফিরে গেলেন।

40. এইভাবে এহুদার সমস্ত লোক এবং ইসরাইলের কিছু লোক বাদশাহ্‌কে নদী পার করে নিয়ে আসল। তারপর বাদশাহ্‌ গিল্‌গলে গেলেন আর কিম্‌হমও তাঁর সংগে গেল।

41. ইসরাইলের বাকী লোকেরা বাদশাহ্‌র কাছে এসে বলল, “কেন আমাদের ভাই এহুদার লোকেরা আপনাকে চুরি করে নিয়ে আসল? তারা আপনাকে, আপনার পরিবার ও আপনার সংগের সব লোকদের নদী পার করে নিয়ে আসল কেন?”

42. জবাবে এহুদার সব লোকেরা ইসরাইলের লোকদের বলল, “বাদশাহ্‌র সংগে আমাদের নিকট সম্বন্ধ রয়েছে বলে আমরা তা করেছি। তোমরা কেন এতে রাগ করছ? আমরা কি বাদশাহ্‌র কোন খাবার থেকে কিছু খেয়েছি? নাকি তিনি আমাদের কিছু উপহার দিয়েছেন?”

43. জবাবে ইসরাইলের লোকেরা এহুদার লোকদের বলল, “আমরা দশ গোষ্ঠী বলে বাদশাহ্‌ দাউদের উপরে তোমাদের চেয়ে আমাদের অধিকার বেশী। কাজেই তোমরা কেন আমাদের এইভাবে তুচ্ছ করছ? আমাদের বাদশাহ্‌কে ফিরিয়ে আনবার কথা কি আমরাই প্রথমে বলি নি?”কিন্তু ইসরাইলের লোকদের চেয়ে এহুদার লোকদের কথা বেশী কড়া বলে মনে হল।