অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12
  13. 13
  14. 14
  15. 15
  16. 16
  17. 17
  18. 18
  19. 19
  20. 20
  21. 21
  22. 22
  23. 23
  24. 24
  25. 25
  26. 26
  27. 27
  28. 28

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

মথি 27 Kitabul Mukkadas (MBCL)

পীলাতের সামনে হযরত ঈসা মসীহ্‌

1. খুব ভোরে প্রধান ইমামেরা ও বৃদ্ধ নেতারা সবাই ঈসাকে হত্যা করবার কথাই ঠিক করলেন।

2. তাঁরা ঈসাকে বেঁধে নিয়ে গিয়ে রোমীয় প্রধান শাসনকর্তা পীলাতের হাতে দিলেন।

এহুদার মৃত্যু

3. ঈসাকে শত্রুদের হাতে যে ধরিয়ে দিয়েছিল সেই এহুদা যখন দেখল ঈসাকে বিচারে দোষী বলে ঠিক করা হয়েছে তখন তার মনে খুব দুঃখ হল। সে প্রধান ইমামদের ও বৃদ্ধ নেতাদের কাছে সেই ত্রিশটা রূপার টাকা ফিরিয়ে দিয়ে বলল,

4. “আমি নির্দোষীকে মেরে ফেলবার জন্য ধরিয়ে দিয়ে গুনাহ্‌ করেছি।”তাঁরা বললেন, “তাতে আমাদের কি? তুমিই তা বুঝবে।”

5. তখন এহুদা সেই রূপার টাকাগুলো নিয়ে বায়তুল-মোকাদ্দসের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেল এবং গলায় দড়ি দিয়ে মরল।

6. প্রধান ইমামেরা সেই রূপার টাকাগুলো নিয়ে বললেন, “এই টাকা বায়তুল-মোকাদ্দসের তহবিলে রাখা ঠিক নয়, কারণ এটা রক্তের দাম।”

7. পরে তাঁরা পরামর্শ করে সেই টাকা দিয়ে বিদেশীদের একটা কবরস্থানের জন্য কুমারের জমি কিনলেন।

8. সেইজন্য সেই জমিকে আজও ‘রক্তের জমি’ বলা হয়।

9. এতে নবী ইয়ারমিয়ার মধ্য দিয়ে যে কথা বলা হয়েছিল তা পূর্ণ হল: “তারা ত্রিশটা রূপার টাকা নিল। এই টাকা তাঁর দাম। বনি-ইসরাইলরা তাঁর জন্য এই দাম ঠিক করেছিল।

10. মাবুদ যেমন আমাকে হুকুম দিয়েছিলেন সেইমতই তারা কুমারের জমির জন্য এই টাকাগুলো দিল।”

হযরত ঈসা মসীহের বিচার

11. এদিকে ঈসা তখন প্রধান শাসনকর্তা পীলাতের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শাসনকর্তা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি ইহুদীদের বাদশাহ্‌?”ঈসা জবাব দিলেন, “আপনি ঠিকই বলছেন।”

12. প্রধান ইমামেরা এবং বৃদ্ধ নেতারা ঈসাকে অনেক দোষ দিলেন কিন্তু তিনি কোন জবাব দিলেন না।

13. তখন পীলাত ঈসাকে বললেন, “ওরা তোমাকে কত দোষ দিচ্ছে তা কি তুমি শুনতে পাচ্ছ না?”

14. ঈসা কিন্তু একটা কথারও জবাব দিলেন না। এতে সেই শাসনকর্তা খুব আশ্চর্য হয়ে গেলেন।

15. প্রত্যেক উদ্ধার-ঈদের সময় প্রধান শাসনকর্তা লোকদের পছন্দ করা একজন কয়েদীকে ছেড়ে দিতেন। এটাই ছিল তাঁর নিয়ম।

16. সেই সময় বারাব্বা নামে একজন কুখ্যাত কয়েদী ছিল।

17. লোকেরা একসংগে জমায়েত হলে পর পীলাত তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কি চাও? তোমাদের কাছে আমি কাকে ছেড়ে দেব, বারাব্বাকে, না যাকে মসীহ্‌ বলে সেই ঈসাকে?”

18. পীলাত জানতেন, লোকেরা হিংসা করেই ঈসাকে ধরিয়ে দিয়েছে।

19. পীলাত যখন বিচারের আসনে বসে ছিলেন তখন তাঁর স্ত্রী তাঁকে বলে পাঠালেন, “ঐ নির্দোষ লোকটিকে তুমি কিছু কোরো না, কারণ আজ স্বপ্নে আমি তাঁর দরুন অনেক কষ্ট পেয়েছি।”

20. কিন্তু প্রধান ইমামেরা এবং বৃদ্ধ নেতারা লোকদের উস্‌কিয়ে দিলেন যেন তারা বারাব্বাকে চেয়ে নেয় এবং ঈসাকে হত্যা করবার কথা বলে।

21. পরে প্রধান শাসনকর্তা লোকদের জিজ্ঞাসা করলেন, “এই দু’জনের মধ্যে আমি তোমাদের কাছে কাকে ছেড়ে দেব?”তারা বলল, “বারাব্বাকে।”

22. তখন পীলাত তাদের বললেন, “তাহলে যাকে মসীহ্‌ বলে সেই ঈসাকে নিয়ে আমি কি করব?”তারা সবাই বলল, “ওকে ক্রুশে দেওয়া হোক।”

23. পীলাত বললেন, “কেন, সে কি দোষ করেছে?”এতে তারা আরও বেশী চেঁচিয়ে বলতে লাগল, “ওকে ক্রুশে দেওয়া হোক।”

24. পীলাত যখন দেখলেন তিনি কিছুই করতে পারছেন না বরং আরও গোলমাল হচ্ছে, তখন তিনি পানি নিয়ে লোকদের সামনে হাত ধুয়ে বললেন, “এই লোকের রক্তের জন্য আমি দায়ী নই; তোমরাই তা বুঝবে।”

25. জবাবে লোকেরা সবাই বলল, “আমরা এবং আমাদের সন্তানেরা ওর রক্তের দায়ী হব।”

26. তখন পীলাত বারাব্বাকে লোকদের কাছে ছেড়ে দিলেন, কিন্তু ঈসাকে ভীষণভাবে চাবুক মারবার হুকুম দিয়ে ক্রুশের উপরে হত্যা করবার জন্য দিলেন।

সৈন্যদের ঠাট্টা-তামাশা

27. তখন প্রধান শাসনকর্তা পীলাতের সৈন্যেরা ঈসাকে নিয়ে তাঁর বাড়ীর ভিতরে গেল এবং সমস্ত সৈন্যদলকে ঈসার চারদিকে জড়ো করল।

28. তারা ঈসার কাপড়-চোপড় খুলে নিয়ে তাঁকে লাল রংয়ের পোশাক পরাল।

29. পরে তারা কাঁটা-লতা দিয়ে একটা তাজ গেঁথে তাঁর মাথায় পরিয়ে দিল, আর তাঁর ডান হাতে একটা লাঠি দিল। তার পরে তাঁর সামনে হাঁটু পেতে তাঁকে তামাশা করে বলল, “মারহাবা, ইহুদীদের বাদশাহ্‌!”

30. তখন তাঁর গায়ে তারা থুথু দিল এবং সেই লাঠি দিয়ে তাঁর মাথায় বারবার আঘাত করল।

31. তাঁকে তামাশা করবার পর তারা সেই পোশাক খুলে নিল এবং তাঁর নিজের কাপড়-চোপড় পরিয়ে তাঁকে ক্রুশের উপরে হত্যা করবার জন্য নিয়ে চলল।

ক্রুশের উপরে হযরত ঈসা মসীহ্‌

32. সেখান থেকে বের হয়ে যাবার সময় সৈন্যেরা কুরীণী শহরের শিমোন নামে একজন লোকের দেখা পেল। সৈন্যেরা তাকে ঈসার ক্রুশ বয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করল।

33-34. পরে তারা ‘গল্‌গথা,’ অর্থাৎ ‘মাথার খুলির স্থান’ নামে একটা জায়গায় এসে ঈসাকে তেতো মিশানো সিরকা খেতে দিল। তিনি তা মুখে দিয়ে আর খেতে চাইলেন না।

35. ঈসাকে ক্রুশে দেবার পর সৈন্যেরা গুলিবাঁট করে তাঁর কাপড়-চোপড় নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিল।

36. পরে তারা সেখানে বসে তাঁকে পাহারা দিতে লাগল।

37. তারা ক্রুশে ঈসার মাথার উপরের দিকে এই দোষ-নামা লাগিয়ে দিল, “এ ঈসা, ইহুদীদের বাদশাহ্‌।”

38. তারা দু’জন ডাকাতকেও ঈসার সংগে ক্রুশে দিল, একজনকে ডান দিকে আর অন্যজনকে বাঁ দিকে।

39. যে সব লোক সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল তারা মাথা নেড়ে ঈসাকে ঠাট্টা করে বলল,

40. “তুমি না বায়তুল-মোকাদ্দস ভেংগে আবার তিন দিনের মধ্যে তৈরী করতে পার! তাহলে এখন নিজেকে রক্ষা কর। যদি তুমি ইব্‌নুল্লাহ্‌ হও তবে ক্রুশ থেকে নেমে এস।”

41. প্রধান ইমামেরা ও আলেমেরা এবং বৃদ্ধ নেতারাও তাঁকে ঠাট্টা করে বললেন,

42. “ও অন্যদের রক্ষা করত, নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। ও তো ইসরাইলের বাদশাহ্‌! এখন ক্রুশ থেকে ও নেমে আসুক। তাহলে আমরা ওর উপর ঈমান আনব।

43. ও আল্লাহ্‌র উপর ভরসা করে; এখন আল্লাহ্‌ যদি ওর উপর খুশী থাকেন তবে ওকে তিনি উদ্ধার করুন। ও তো নিজেকে ইব্‌নুল্লাহ্‌ বলত।”

44. যে ডাকাতদের তাঁর সংগে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল তারাও সেই একই কথা বলে তাঁকে টিট্‌কারি দিল।

হযরত ঈসা মসীহের মৃত্যু

45. সেই দিন দুপুর বারোটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত সমস্ত দেশ অন্ধকার হয়ে রইল।

46. প্রায় তিনটার সময় ঈসা জোরে চিৎকার করে বললেন, “ইলী, ইলী, লামা শবক্তানী,” অর্থাৎ “আল্লাহ্‌ আমার, আল্লাহ্‌ আমার, কেন তুমি আমাকে ত্যাগ করেছ?”

47. যারা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের মধ্যে কয়েকজন এই কথা শুনে বলল, “ও নবী ইলিয়াসকে ডাকছে।”

48. তাদের মধ্যে একজন তখনই দৌড়ে গিয়ে সিরকায় পূর্ণ একটা সপঞ্জ নিল এবং একটা লাঠির মাথায় সেটা লাগিয়ে ঈসাকে খেতে দিল।

49. অন্যেরা বলল, “থাক্‌, দেখি নবী ইলিয়াস ওকে রক্ষা করতে আসেন কি না।”

50. ঈসা আবার জোরে চিৎকার করবার পরে প্রাণত্যাগ করলেন।

51. তখন বায়তুল-মোকাদ্দসের পর্দাটা উপর থেকে নীচ পর্যন্ত চিরে দু’ভাগ হয়ে গেল; আর ভূমিকমপ হল ও বড় বড় পাথর ফেটে গেল।

52. কতগুলো কবর খুলে গেল এবং আল্লাহ্‌র যে বান্দারা ইন্তেকাল করেছিলেন তাঁদের অনেকের দেহ জীবিত হয়ে উঠল।

53. তাঁরা কবর থেকে বের হয়ে আসলেন এবং ঈসা মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠলে পর পবিত্র শহরের মধ্যে গেলেন। তাঁরা সেখানে অনেককে দেখা দিলেন।

54. সেনাপতি ও তাঁর সংগে যারা ঈসাকে পাহারা দিচ্ছিল তারা ভূমিকমপ ও অন্য সব ঘটনা দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে বলল, “সত্যিই উনি ইব্‌নুল্লাহ্‌ ছিলেন।”

55. অনেক স্ত্রীলোকও সেখানে দূরে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখছিলেন। ঈসার সেবা করবার জন্য তাঁরা গালীল থেকে তাঁর সংগে সংগে এসেছিলেন।

56. তাঁদের মধ্যে ছিলেন মগ্‌দলীনী মরিয়ম, ইয়াকুব ও ইউসুফের মা মরিয়ম এবং সিবদিয়ের ছেলে ইয়াকুব ও ইউহোন্নার মা।

হযরত ঈসা মসীহের কবর

57. সন্ধ্যা হলে পর অরিমাথিয়া গ্রামের ইউসুফ নামে একজন ধনী লোক সেখানে আসলেন। ইনি ঈসার উম্মত হয়েছিলেন।

58. পীলাতের কাছে গিয়ে তিনি ঈসার লাশটা চাইলেন। তখন পীলাত তাঁকে সেই লাশটা দিতে হুকুম দিলেন।

59. ইউসুফ ঈসার লাশটা নিয়ে গিয়ে পরিষ্কার কাপড়ে জড়ালেন,

60. আর যে নতুন কবর তিনি নিজের জন্য পাহাড়ের মধ্যে কেটে রেখেছিলেন সেখানে সেই লাশটা দাফন করলেন। পরে সেই কবরের মুখে বড় একটা পাথর গড়িয়ে দিয়ে তিনি চলে গেলেন।

61. কিন্তু মগ্‌দলীনী মরিয়ম ও সেই অন্য মরিয়ম সেখানে সেই কবরের সামনে বসে রইলেন।

62. পরের দিন, অর্থাৎ আয়োজন্তদিনের পরের দিন প্রধান ইমামেরা এবং ফরীশীরা পীলাতের কাছে জমায়েত হয়ে বললেন,

63. “হুজুর, আমাদের মনে পড়েছে, সেই ঠগটা বেঁচে থাকতে বলেছিল, ‘আমি তিন দিন পরে বেঁচে উঠব।’

64. সেইজন্য হুকুম দিন যেন তিন দিন পর্যন্ত কবরটা পাহারা দেওয়া হয়। না হলে তাঁর সাহাবীরা হয়তো এসে তাঁর লাশটা চুরি করে নিয়ে গিয়ে লোকদের বলবে, ‘তিনি মৃত্যু থেকে বেঁচে উঠেছেন।’ তাহলে প্রথম ছলনার চেয়ে শেষ ছলনাটা আরও খারাপ হবে।”

65. তখন পীলাত তাঁদের বললেন, “পাহারাদারদের নিয়ে গিয়ে আপনারা যেভাবে পারেন সেইভাবে পাহারা দেবার ব্যবস্থা করুন।”

66. তখন তাঁরা গিয়ে পাথরের উপরে সীলমোহর করলেন এবং পাহারাদারদের সেখানে রেখে কবরটা কড়াকড়িভাবে পাহারা দেবার ব্যবস্থা করলেন।