অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12
  13. 13
  14. 14
  15. 15
  16. 16
  17. 17
  18. 18
  19. 19
  20. 20
  21. 21
  22. 22
  23. 23
  24. 24
  25. 25
  26. 26
  27. 27
  28. 28

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

মথি 26 Kitabul Mukkadas (MBCL)

হযরত ঈসা মসীহ্‌কে হত্যা করবার ষড়যন্ত্র

1. এই সব কথার শেষে ঈসা তাঁর সাহাবীদের বললেন,

2. “তোমরা তো জান আর দুই দিন পরেই উদ্ধার-ঈদ, আর ইব্‌ন্তেআদমকে ক্রুশের উপরে হত্যা করবার জন্য ধরিয়ে দেওয়া হবে।”

3-4. সেই সময়ে মহা-ইমাম কাইয়াফার বাড়ীতে প্রধান ইমামেরা ও ইহুদীদের বৃদ্ধ নেতারা একত্র হলেন এবং ঈসাকে গোপনে ধরে এনে হত্যা করবার ষড়যন্ত্র করলেন।

5. তবে তাঁরা বললেন, “ঈদের সময়ে নয়; তাতে লোকদের মধ্যে হয়তো গোলমাল শুরু হবে।”

হযরত ঈসা মসীহের মাথায় আতর ঢালা

6. ঈসা যখন বেথানিয়াতে চর্মরোগী শিমোনের বাড়ীতে ছিলেন তখন একজন স্ত্রীলোক তাঁর কাছে আসল।

7. সেই স্ত্রীলোকটি একটা সাদা পাথরের পাত্রে করে খুব দামী আতর এনেছিল। ঈসা যখন খেতে বসলেন তখন সে তাঁর মাথায় সেই আতর ঢেলে দিল।

8. সাহাবীরা তা দেখে বিরক্ত হয়ে বললেন, “এই দামী জিনিসটা কেন নষ্ট করা হচ্ছে?

9. এটা তো অনেক দামে বিক্রি করে টাকাটা গরীবদের দেওয়া যেত।”

10. ঈসা এই কথা বুঝতে পেরে সাহাবীদের বললেন, “তোমরা এই স্ত্রীলোকটিকে দুঃখ দিচ্ছ কেন? সে তো আমার প্রতি ভাল কাজই করেছে।

11. গরীবেরা তো সব সময় তোমাদের মধ্যে আছে, কিন্তু আমাকে তোমরা সব সময় পাবে না।

12. সে আমার গায়ের উপর এই আতর ঢেলে দিয়ে আমাকে কবরের জন্য প্রস্তুত করেছে।

13. আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, দুনিয়ার যে কোন জায়গায় সুসংবাদ তবলিগ করা হবে সেখানে এই স্ত্রীলোকটির কথা মনে করিয়ে দেবার জন্য তার এই কাজের কথাও বলা হবে।”

ত্রিশটা টাকার লোভে

14. তখন সেই বারোজন সাহাবীদের মধ্যে এহুদা ইষ্কারিয়োৎ নামে সাহাবীটি প্রধান ইমামদের কাছে গিয়ে বলল,

15. “ঈসাকে আপনাদের হাতে ধরিয়ে দিলে আপনারা আমাকে কি দেবেন?”প্রধান ইমামেরা ত্রিশটা রূপার টাকা গুণে তাকে দিলেন।

16. তার পর থেকেই এহুদা ঈসাকে ধরিয়ে দেবার জন্য সুযোগ খুঁজতে লাগল।

শেষ উদ্ধার-ঈদের মেজবানী

17. খামিহীন রুটির ঈদের প্রথম দিনে সাহাবীরা ঈসার কাছে এসে বললেন, “আপনার জন্য উদ্ধার-ঈদের মেজবানী আমাদের কোথায় প্রস্তুত করতে বলেন?”

18. ঈসা বললেন, “শহরের মধ্যে গিয়ে ঐ লোককে বল যে, হুজুর বলছেন, ‘আমার সময় কাছে এসে গেছে। আমার সাহাবীদের সংগে আমি তোমার বাড়ীতেই উদ্ধার-ঈদ পালন করব।’ ”

19. ঈসা সাহাবীদের যে হুকুম দিয়েছিলেন সাহাবীরা সেইভাবেই উদ্ধার-ঈদের মেজবানী প্রস্তুত করলেন।

20. পরে সন্ধ্যা হলে ঈসা সেই বারোজন সাহাবীকে নিয়ে খেতে বসলেন।

21. খাবার সময়ে তিনি বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমাদের মধ্যে একজন আমাকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেবে।”

22. এতে সাহাবীরা খুব দুঃখিত হয়ে একজনের পর একজন ঈসাকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, “সে কি আমি, হুজুর?”

23. জবাবে তিনি তাঁদের বললেন, “যে আমার সংগে পাত্রের মধ্যে হাত দিচ্ছে সে-ই আমাকে ধরিয়ে দেবে।

24. ইব্‌ন্তেআদমের বিষয়ে পাক-কিতাবে যেভাবে লেখা আছে ঠিক সেইভাবে তিনি মারা যাবেন বটে, কিন্তু হায় সেই লোক, যে ইব্‌ন্তেআদমকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেয়! সেই মানুষের জন্ম না হলেই বরং তার পক্ষে ভাল হত।”

25. যে ঈসাকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দিতে যাচ্ছিল সেই এহুদা বলল, “হুজুর, সে কি আমি?”ঈসা তাকে বললেন, “তুমি ঠিক কথাই বললে।”

26. খাওয়া-দাওয়া চলছে, এমন সময় ঈসা রুটি নিয়ে আল্লাহ্‌কে শুকরিয়া জানালেন। পরে তিনি সেই রুটি টুকরা টুকরা করলেন এবং সাহাবীদের দিয়ে বললেন, “এই নাও, খাও; এ আমার শরীর।”

27. এর পরে তিনি পেয়ালা নিয়ে আল্লাহ্‌কে শুকরিয়া জানালেন ও সেটা সাহাবীদের দিয়ে বললেন, “পেয়ালার এই আংগুর-রস তোমরা সবাই খাও,

28. কারণ এ আমার রক্ত যা অনেকের গুনাহের ক্ষমার জন্য দেওয়া হবে। মানুষের জন্য আল্লাহ্‌র নতুন ব্যবস্থা আমার এই রক্তের দ্বারাই বহাল করা হবে।

29. আমি তোমাদের বলছি, এখন থেকে যতদিন আমি আমার পিতার রাজ্যে তোমাদের সংগে আংগুর ফলের রস নতুন ভাবে না খাই ততদিন পর্যন্ত আমি আর তা খাব না।”

30. পরে তাঁরা একটা কাওয়ালী গেয়ে বের হয়ে জৈতুন পাহাড়ে গেলেন।

হযরত পিতরের অস্বীকার করবার কথা

31. পরে ঈসা তাঁর সাহাবীদের বললেন, “আজ রাতে আমাকে নিয়ে তোমাদের সকলের মনে বাধা আসবে। পাক-কিতাবে লেখা আছে, ‘আমি রাখালকে মেরে ফেলব, তাতে পালের মেষগুলো ছড়িয়ে পড়বে।’

32. কিন্তু আমাকে মৃত্যু থেকে জীবিত করা হলে পর আমি তোমাদের আগেই গালীলে যাব।”

33. তখন পিতর তাঁকে বললেন, “আপনাকে নিয়ে সবার মনে বাধা আসলেও আমার মনে কখনও বাধা আসবে না।”

34. ঈসা তাঁকে বললেন, “কিন্তু আমি তোমাকে সত্যিই বলছি, আজ শেষ রাতে মোরগ ডাকবার আগেই তুমি তিন বার বলবে যে, তুমি আমাকে চেনো না।”

35. পিতর ঈসাকে বললেন, “আমাকে যদি আপনার সংগে মরতেও হয় তবুও আমি কখনও বলব না, আমি আপনাকে চিনি না।” অন্য সাহাবীরা সবাই সেই একই কথা বললেন।

গেৎশিমানী বাগানে

36. পরে ঈসা সাহাবীদের সংগে গেৎশিমানী নামে একটা জায়গায় গেলেন এবং সাহাবীদের বললেন, “আমি ওখানে গিয়ে যতক্ষণ মুনাজাত করি ততক্ষণ তোমরা এখানে বসে থাক।”

37. এই বলে তিনি পিতর আর সিবদিয়ের দুই ছেলেকে সংগে নিয়ে গেলেন। তাঁর মন দুঃখে ও কষ্টে ভরে উঠতে লাগল।

38. তিনি তাঁদের বললেন, “দুঃখে যেন আমার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। তোমরা এখানেই থাক আর আমার সংগে জেগে থাক।”

39. পরে তিনি কিছু দূরে গিয়ে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়লেন এবং মুনাজাত করে বললেন, “আমার পিতা, যদি সম্ভব হয় তবে এই দুঃখের পেয়ালা আমার কাছ থেকে দূরে যাক। তবুও আমার ইচ্ছামত না হোক, তোমার ইচ্ছামতই হোক।”

40. এর পরে তিনি সাহাবীদের কাছে এসে দেখলেন তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তিনি পিতরকে বললেন, “এ কি! আমার সংগে এক ঘণ্টাও কি তোমরা জেগে থাকতে পারলে না?

41. জেগে থাক ও মুনাজাত কর যেন পরীক্ষায় না পড়। দিলে ইচ্ছা আছে বটে, কিন্তু শরীর দুর্বল।”

42. তিনি ফিরে গিয়ে দ্বিতীয় বার মুনাজাত করে বললেন, “পিতা আমার, আমি গ্রহণ না করলে যদি এই দুঃখের পেয়ালা দূর না হয় তবে তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক।”

43. তিনি ফিরে এসে দেখলেন তাঁরা আবার ঘুমিয়ে পড়েছেন, কারণ তাঁদের চোখ ঘুমে ভারী হয়ে গিয়েছিল।

44. তিনি আবার তাঁদের ছেড়ে গিয়ে তৃতীয় বার সেই একই কথা বলে মুনাজাত করলেন।

45. পরে তিনি সাহাবীদের কাছে এসে বললেন, “এখনও তোমরা ঘুমা"ছ আর বিশ্রাম করছ? দেখ, সময় এসে পড়েছে, ইব্‌ন্তেআদমকে গুনাহ্‌গারদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে।

46. ওঠো, চল, আমরা যাই। দেখ, যে আমাকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেবে সে এসে পড়েছে।”

শত্রুদের হাতে হযরত ঈসা মসীহ্‌

47. ঈসা তখনও কথা বলছেন, এমন সময় এহুদা সেখানে আসল। সে সেই বারোজন সাহাবীদের মধ্যে একজন ছিল। তার সংগে অনেক লোক ছোরা ও লাঠি নিয়ে আসল। প্রধান ইমামেরা ও বৃদ্ধ নেতারা এদের পাঠিয়েছিলেন।

48. ঈসাকে শত্রুদের হাতে যে ধরিয়ে দিয়েছিল সেই এহুদা ঐ লোকদের সংগে একটা চিহ্ন ঠিক করেছিল; সে বলেছিল, “যাকে আমি চুমু দেব সে-ই সেই লোক; তোমরা তাকে ধরবে।”

49. তাই এহুদা সোজা ঈসার কাছে গিয়ে বলল, “আস্‌সালামু আলাইকুম, হুজুর।” এই কথা বলেই সে ঈসাকে চুমু দিল।

50. ঈসা তাকে বললেন, “বন্ধু, যা করতে এসেছ, কর।”সংগে সংগেই লোকেরা এসে ঈসাকে ধরল।

51. যাঁরা ঈসার সংগে ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন তাঁর ছোরা বের করলেন এবং তার আঘাতে মহা-ইমামের গোলামের একটা কান কেটে ফেললেন।

52. তখন ঈসা তাঁকে বললেন, “তোমার ছোরা খাপে রাখ। ছোরা যারা ধরে তারা ছোরার আঘাতেই মরে।

53. তুমি কি মনে কর যে, আমি আমার পিতাকে ডাকলে তিনি এখনই আমাকে হাজার হাজার ফেরেশতা পাঠিয়ে দেবেন না? কিন্তু তাহলে পাক-কিতাবের কথা কিভাবে পূর্ণ হবে?

54. কিতাবে তো লেখা আছে এই সব এভাবেই ঘটবে।”

55. পরে ঈসা লোকদের বললেন, “আমি কি ডাকাত যে, আপনারা ছোরা ও লাঠি নিয়ে আমাকে ধরতে এসেছেন? আমি প্রত্যেক দিনই বায়তুল-মোকাদ্দসে বসে শিক্ষা দিতাম, আর তখন তো আপনারা আমাকে ধরেন নি।

56. কিন্তু এই সব ঘটল যাতে পাক-কিতাবে নবীরা যা লিখেছেন তা পূর্ণ হয়।” সাহাবীরা সবাই তখন ঈসাকে ফেলে পালিয়ে গেলেন।

মহাসভার সামনে হযরত ঈসা মসীহ্‌

57. যারা ঈসাকে ধরেছিল তারা তাকে মহা-ইমাম কাইয়াফার কাছে নিয়ে গেল। সেখানে আলেমেরা ও বৃদ্ধ নেতারা একসংগে জমায়েত হয়েছিলেন।

58. পিতর দূরে থেকে ঈসার পিছনে পিছনে মহা-ইমামের উঠান পর্যন্ত গেলেন এবং শেষে কি হয় তা দেখবার জন্য ভিতরে ঢুকে রক্ষীদের সংগে বসলেন।

59. ঈসাকে হত্যা করবার উদ্দেশ্যে প্রধান ইমামেরা এবং মহাসভার সমস্ত লোকেরা মিথ্যা সাক্ষ্যের খোঁজ করছিলেন।

60. অনেক মিথ্যা সাক্ষী উপস্থিতও হয়েছিল, তবুও তাঁরা ঠিকমত কোন সাক্ষ্যই পেলেন না। শেষে দু’জন লোক এগিয়ে এসে বলল,

61. “এই লোকটা বলেছিল, সে আল্লাহ্‌র ঘরটা ভেংগে ফেলে তিন দিনের মধ্যে আবার তা তৈরী করে দিতে পারে।”

62. তখন মহা-ইমাম উঠে দাঁড়িয়ে ঈসাকে বললেন, “তুমি কি কোন জবাব দেবে না? এরা তোমার বিরুদ্ধে এই সব কি সাক্ষ্য দিচ্ছে?”

63. ঈসা কিন্তু চুপ করেই রইলেন।মহা-ইমাম আবার তাঁকে বললেন, “তুমি আল্লাহ্‌র কসম খেয়ে আমাদের বল যে, তুমি সেই মসীহ্‌ ইব্‌নুল্লাহ্‌ কি না।”

64. তখন ঈসা তাঁকে বললেন, “জ্বী, আপনি ঠিক কথাই বলেছেন। তবে আমি আপনাদের এটাও বলছি, এর পরে আপনারা ইব্‌ন্তেআদমকে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌র ডান পাশে বসে থাকতে এবং মেঘে করে আসতে দেখবেন।”

65. তখন মহা-ইমাম তাঁর কাপড় ছিঁড়ে ফেলে বললেন, “এ কুফরী করল। আমাদের আর সাক্ষীর কি দরকার? এখনই তো আপনারা শুনলেন, সে কুফরী করল।

66. আপনারা কি মনে করেন?”তাঁরা জবাব দিলেন, “এ মৃত্যুর উপযুক্ত।”

67. তখন লোকেরা ঈসার মুখে থুথু দিল এবং ঘুষি ও চড় মারল।

68. তারা বলল, “এই মসীহ্‌, বল্‌ তো দেখি, কে তোকে মারল?”

হযরত পিতরের অস্বীকার

69. সেই সময় পিতর বাইরের উঠানে বসে ছিলেন। একজন চাকরাণী তাঁর কাছে এসে বলল, “গালীলের ঈসার সংগে তো আপনিও ছিলেন।”

70. কিন্তু পিতর সকলের সামনে অস্বীকার করে বললেন, “তুমি কি বলছ তা আমি জানি না।”

71. এর পরে পিতর বাইরে দরজার কাছে গেলেন। তাঁকে দেখে আর একজন চাকরাণী সেখানকার লোকদের বলল, “এই লোকটা নাসরতের ঈসার সংগে ছিল।”

72. তখন পিতর কসম খেয়ে আবার অস্বীকার করে বললেন, “আমি ঐ লোকটাকে চিনি না।”

73. যে লোকেরা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল তারা কিছুক্ষণ পরে পিতরকে এসে বলল, “নিশ্চয়ই তুমি ওদের একজন; তোমার ভাষাই তোমাকে ধরিয়ে দিচ্ছে।”

74. তখন পিতর নিজেকে বদদোয়া দিলেন এবং কসম খেয়ে বলতে লাগলেন, “আমি ঐ লোকটাকে মোটেই চিনি না।” আর তখনই একটা মোরগ ডেকে উঠল।

75. তখন পিতরের মনে পড়ল ঈসা বলেছিলেন, “মোরগ ডাকবার আগে তুমি তিন বার বলবে যে, তুমি আমাকে চেনো না।” আর পিতর বাইরে গিয়ে খুব কাঁদতে লাগলেন।