অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12
  13. 13
  14. 14
  15. 15
  16. 16

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

মার্ক 14 পবিত্র বাইবেল (SBCL)

যীশুর মাথায় আতর ঢালা

1. উদ্ধার-পর্ব ও খামিহীন রুটির পর্বের তখন মাত্র আর দু’দিন বাকী। প্রধান পুরোহিতেরা ও ধর্ম-শিক্ষকেরা গোপনে যীশুকে ধরে মেরে ফেলবার উপায় খুঁজছিলেন।

2. তাঁরা বললেন, “পর্বের সময়ে নয়; লোকদের মধ্যে গোলমাল হতে পারে।”

3. যীশু তখন বৈথনিয়াতে চর্মরোগী শিমোনের বাড়ীতে ছিলেন। তিনি যখন খাচ্ছিলেন তখন একজন স্ত্রীলোক একটা সাদা পাথরের পাত্রে করে খুব দামী ও খাঁটি আতর আনল। পাত্রটা ভেংগে সে যীশুর মাথায় সেই আতর ঢেলে দিল।

4. সেখানে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁদের মধ্যে কয়েকজন বিরক্ত হয়ে একে অন্যকে বলতে লাগলেন, “এইভাবে আতরটা নষ্ট করা হল কেন?

5. এটা বিক্রি করলে তো তিনশো দীনারেরও বেশী হত এবং তা গরীবদের দেওয়া যেত।” এই বলে তাঁরা স্ত্রীলোকটিকে বকাবকি করতে লাগলেন।

6. তখন যীশু বললেন, “থাম, কেন তোমরা ওকে দুঃখ দিচ্ছ? ও তো আমার জন্য ভাল কাজই করেছে।

7. গরীবেরা সব সময় তোমাদের মধ্যে আছে, আর যখন ইচ্ছা তখনই তোমরা তাদের সাহায্য করতে পার, কিন্তু আমাকে তোমরা সব সময় পাবে না।

8. ও যা পেরেছে তা করেছে। আমাকে কবরের জন্য প্রস্তুত করতে ও আগেই আমার দেহের উপর আতর ঢেলে দিয়েছে।

9. আমি তোমাদের সত্যি বলছি, জগতের যে কোন জায়গায় ঈশ্বরের দেওয়া সুখবর প্রচার করা হবে, সেখানে এই স্ত্রীলোকটির কথা মনে করিয়ে দেবার জন্য ওর এই কাজের কথাও বলা হবে।”

10. এর পর যিহূদা ইষ্কারিয়োৎ নামে সেই বারোজন শিষ্যের মধ্যে একজন যীশুকে ধরিয়ে দেবার জন্য প্রধান পুরোহিতদের কাছে গেল।

11. পুরোহিতেরা যিহূদার কথা শুনে খুশী হলেন এবং তাকে টাকা দেবেন বলে কথা দিলেন। তখন যিহূদা যীশুকে ধরিয়ে দেবার জন্য সুযোগ খুঁজতে লাগল।

শেষ উদ্ধার-পর্বের ভোজ

12. খামিহীন রুটির পর্বের প্রথম দিনে উদ্ধার-পর্বের ভোজের জন্য ভেড়ার বাচ্চা কাটা হত। তাই শিষ্যেরা যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার জন্য উদ্ধার-পর্বের ভোজ কোথায় গিয়ে আমাদের প্রস্তুত করতে বলেন?”

13. তখন যীশু তাঁর দু’জন শিষ্যকে এই বলে পাঠিয়ে দিলেন, “তোমরা শহরে যাও। সেখানে এমন একজন পুরুষ লোকের দেখা পাবে, যে একটা কলসীতে করে জল নিয়ে যাচ্ছে। তোমরা তার পিছনে পিছনে যেয়ো।

14. সে যে বাড়ীতে ঢুকবে সেই বাড়ীর কর্তাকে বোলো, ‘গুরু বলছেন, শিষ্যদের সংগে যেখানে আমি উদ্ধার-পর্বের ভোজ খেতে পারি আমার সেই অতিথি-ঘরটা কোথায়?’

15. এতে সে তোমাদের উপরতলার একটা সাজানো বড় ঘর দেখিয়ে দেবে। সব কিছু সেখানেই প্রস্তুত কোরো।”

16. তখন শিষ্যেরা গিয়ে শহরে ঢুকলেন, আর যীশু যেমন বলেছিলেন সব কিছু তেমনই দেখতে পেলেন এবং উদ্ধার-পর্বের ভোজ প্রস্তুত করলেন।

17. সন্ধ্যা হলে পর যীশু সেই বারোজনকে নিয়ে সেখানে গেলেন।

18. তাঁরা যখন বসে খাচ্ছিলেন তখন যীশু বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমাদের মধ্যে একজন আমাকে ধরিয়ে দেবে, আর সে আমার সংগে খাচ্ছে।”

19. শিষ্যেরা দুঃখিত হলেন এবং একজনের পরে আর একজন বলতে লাগলেন, “সে কি আমি, প্রভু?”

20. যীশু তাঁদের বললেন, “সে এই বারোজনের মধ্যে একজন, যে আমার সংগে পাত্রের মধ্যে রুটি ডুবাচ্ছে।

21. মনুষ্যপুত্রের মৃত্যুর বিষয়ে পবিত্র শাস্ত্রে যা লেখা আছে তিনি সেভাবেই মারা যাবেন বটে, কিন্তু হায় সেই লোক, যে তাঁকে ধরিয়ে দেয়! সেই লোকের জন্ম না হলেই বরং তার পক্ষে ভাল হত।”

22. খাওয়া-দাওয়া চলছে, এমন সময় যীশু রুটি নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন এবং তা টুকরা টুকরা করে শিষ্যদের হাতে দিয়ে বললেন, “এই নাও, এটা আমার দেহ।”

23. তারপর তিনি পেয়ালা নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন এবং শিষ্যদের দিলেন। তাঁরা সবাই সেই পেয়ালা থেকে খেলেন।

24. তখন যীশু তাঁদের বললেন, “এ আমার রক্ত যা অনেকের জন্য দেওয়া হবে। মানুষের জন্য ঈশ্বরের নতুন ব্যবস্থা আমার এই রক্তের দ্বারাই বহাল করা হবে।

25. তোমাদের সত্যি বলছি, যতদিন আমি ঈশ্বরের রাজ্যে আংগুর ফলের রস আবার নতুন ভাবে না খাই ততদিন পর্যন্ত আর আমি তা খাব না।”

26. এর পরে তাঁরা একটা গান গেয়ে বের হয়ে জৈতুন পাহাড়ে গেলেন।

পিতরের অস্বীকার করবার কথা

27. যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “আমাকে নিয়ে তোমাদের সকলের মনে বাধা আসবে। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, ‘আমি পালককে মেরে ফেলব, তাতে মেষগুলো ছড়িয়ে পড়বে।’

28. তবে আমাকে মৃত্যু থেকে জীবিত করা হলে পর আমি তোমাদের আগেই গালীলে যাব।”

29. তখন পিতর বললেন, “সবার মনে বাধা আসলেও আমার মনে বাধা আসবে না।”

30. যীশু তাঁকে বললেন, “আমি তোমাকে সত্যিই বলছি, আজ ভোর রাতে মোরগ দু’বার ডাকবার আগেই তুমি তিন বার বলবে যে, তুমি আমাকে চেনো না।”

31. কিন্তু পিতর আরও জোর দিয়ে বললেন, “যদি আমাকে আপনার সংগে মরতেও হয় তবুও আমি কখনও বলব না যে, আমি আপনাকে চিনি না।” শিষ্যেরা সবাই সেই একই কথা বললেন।

গেৎশিমানী বাগানে যীশু

32. এর পরে যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা গেৎশিমানী নামে একটা জায়গায় গেলেন। সেখানে যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “আমি যতক্ষণ প্রার্থনা করি ততক্ষণ তোমরা এখানে বসে থাক।”

33. এই বলে তিনি পিতর, যাকোব ও যোহনকে নিজের সংগে নিলেন এবং মনে খুব ব্যথা ও কষ্ট পেতে লাগলেন।

34. তিনি তাঁদের বললেন, “দুঃখে যেন আমার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। তোমরা এখানে জেগে থাক।”

35. তার পরে তিনি কিছু দূরে গিয়ে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে প্রার্থনা করলেন যেন সম্ভব হলে এই দুঃখের সময়টা তাঁর কাছ থেকে দূর হয়।

36. তিনি বললেন, “আব্বা, পিতা, তোমার কাছে তো সবই সম্ভব। এই দুঃখের পেয়ালা আমার কাছ থেকে তুমি নিয়ে যাও। তবুও আমার ইচ্ছামত না হোক, কিন্তু তোমার ইচ্ছামত হোক।”

37. এর পরে তিনি শিষ্যদের কাছে ফিরে এসে দেখলেন তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তিনি পিতরকে বললেন, “শিমোন, তুমি ঘুমাচ্ছ? এক ঘণ্টাও কি জেগে থাকতে পার নি?

38. জেগে থাক ও প্রার্থনা কর যেন পরীক্ষায় না পড়। অন্তরের ইচ্ছা আছে বটে, কিন্তু দেহ দুর্বল।”

39. পরে যীশু আবার গিয়ে সেই একই প্রার্থনা করলেন।

40. ফিরে এসে তিনি দেখলেন আবার তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন, কারণ তাঁদের চোখ ঘুমে ভারী হয়ে গিয়েছিল। শিষ্যেরা যীশুকে কি উত্তর দেবেন বুঝলেন না।

41. তৃতীয় বার ফিরে এসে তিনি তাঁদের বললেন, “এখনও তোমরা ঘুমাচ্ছ আর বিশ্রাম করছ? যথেষ্ট হয়েছে। সময় এসে পড়েছে। দেখ, মনুষ্যপুত্রকে এখন পাপীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

42. ওঠো, চল আমরা যাই। যে আমাকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেবে সে এসে পড়েছে।”

শত্রুদের হাতে প্রভু যীশু

43. যীশু তখনও কথা বলছেন, এমন সময় যিহূদা সেখানে আসল। সে সেই বারোজন শিষ্যের মধ্যে একজন ছিল। তার সংগে অনেক লোক ছোরা ও লাঠি নিয়ে আসল। প্রধান পুরোহিতেরা, ধর্ম-শিক্ষকেরা ও বৃদ্ধ নেতারা এই লোকদের পাঠিয়েছিলেন।

44. যীশুকে যে ধরিয়ে দিয়েছিল সে ঐ লোকদের সংগে একটা চিহ্ন ঠিক করেছিল। সে বলেছিল, “যাকে আমি চুমু দেব, সে-ই সেই লোক। তোমরা তাকেই ধোরো এবং পাহারা দিয়ে নিয়ে যেয়ো।”

45. তাই যিহূদা সোজা যীশুর কাছে গিয়ে বলল, “গুরু!” এই কথা বলেই সে তাঁকে চুমু দিল।

46. তখন সেই লোকেরা যীশুকে ধরল।

47. যাঁরা যীশুর কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন তাঁর ছোরা বের করলেন এবং মহাপুরোহিতের দাসকে আঘাত করে তার একটা কান কেটে ফেললেন।

48. যীশু সেই লোকদের বললেন, “আমি কি ডাকাত যে, আপনারা ছোরা ও লাঠি নিয়ে আমাকে ধরতে এসেছেন?

49. আমি তো প্রত্যেক দিনই আপনাদের মধ্যে থেকে উপাসনা-ঘরে শিক্ষা দিতাম, কিন্তু তখন তো আপনারা আমাকে ধরেন নি। অবশ্য শাস্ত্রের কথা পূর্ণ হতে হবে।”

50. সেই সময় শিষ্যেরা সবাই তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে গেলেন।

51. একজন যুবক কেবল একটা চাদর পরে যীশুর পিছনে পিছনে যাচ্ছিল।

52. লোকেরা যখন তাকে ধরল তখন সে চাদরখানা ছেড়ে দিয়ে উলংগ অবস্থায় পালিয়ে গেল।

মহাসভার সামনে যীশু

53. সেই লোকেরা যীশুকে নিয়ে মহাপুরোহিতের কাছে গেল। সেখানে প্রধান পুরোহিতেরা, বৃদ্ধ নেতারা ও ধর্ম-শিক্ষকেরা একসংগে জড়ো হলেন।

54. পিতর দূরে দূরে থেকে যীশুর পিছনে যেতে যেতে মহাপুরোহিতের উঠানে গিয়ে ঢুকলেন। সেখানে রক্ষীদের সংগে বসে তিনি আগুন পোহাতে লাগলেন।

55. প্রধান পুরোহিতেরা এবং মহাসভার সমস্ত লোকেরা যীশুকে মেরে ফেলবার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্যের খোঁজ করছিলেন, কিন্তু কোন সাক্ষ্যই তাঁরা পেলেন না।

56. যীশুর বিরুদ্ধে অনেকেই মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছিল কিন্তু তাদের সাক্ষ্য মিলল না।

57. তখন কয়েকজন উঠে তাঁর বিরুদ্ধে এই মিথ্যা সাক্ষ্য দিল,

58. “আমরা ওকে বলতে শুনেছি, ‘মানুষের তৈরী এই উপাসনা-ঘর আমি ভেংগে ফেলব এবং তিন দিনের মধ্যে এমন একটা উপাসনা-ঘর তৈরী করব যা মানুষের তৈরী নয়।’ ”

59. কিন্তু তবুও তাদের সাক্ষ্য মিলল না।

60. তখন মহাপুরোহিত সকলের সামনে দাঁড়িয়ে যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি কোন উত্তরই দেবে না? তোমার বিরুদ্ধে এই লোকেরা এই সব কি সাক্ষ্য দিচ্ছে?”

61. যীশু কিন্তু উত্তর না দিয়ে চুপ করেই রইলেন।মহাপুরোহিত আবার তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি পরমধন্য ঈশ্বরের পুত্র মশীহ?”

62. যীশু বললেন, “আমিই সেই। আপনারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ডান দিকে মনুষ্যপুত্রকে বসে থাকতে দেখবেন এবং আকাশে মেঘের সংগে আসতে দেখবেন।”

63. এতে মহাপুরোহিত তাঁর কাপড় ছিঁড়ে বললেন, “আর সাক্ষীর আমাদের কি দরকার?

64. আপনারা তো শুনলেনই যে, ও ঈশ্বরকে অপমান করল। আপনারা কি মনে করেন?”তাঁরা সবাই যীশুকে মৃত্যুর শাস্তি পাবার উপযুক্ত বলে স্থির করলেন।

65. তখন কয়েকজন তাঁর গায়ে থুথু দিলেন এবং তাঁর মুখ ঢেকে তাঁকে ঘুষি মেরে বললেন, “তুই না নবী? কিছু বল্‌ দেখি!” তারপর রক্ষীরা তাঁকে নিয়ে গিয়ে চড় মারতে লাগল।

পিতরের অস্বীকার

66. পিতর যখন নীচে উঠানে ছিলেন তখন মহাপুরোহিতের একজন চাকরাণী সেখানে আসল।

67. সে পিতরকে আগুন পোহাতে দেখল এবং ভাল করে তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখে বলল, “আপনিও তো ঐ নাসরতের যীশুর সংগে ছিলেন।”

68. পিতর কিন্তু অস্বীকার করে বললেন, “তুমি কি বলছ তা আমি জানিও না, বুঝিও না।”এই বলে পিতর বাইরের দরজার কাছে গেলেন, আর তখনই একটা মোরগ ডেকে উঠল।

69. চাকরাণীটা পিতরকে সেখানে দেখে যারা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের আবার বলল, “এই লোকটি ওদের একজন।”

70. পিতর আবার অস্বীকার করলেন। যারা কাছে দাঁড়িয়ে ছিল তারাও কিছুক্ষণ পর পিতরকে বলল, “নিশ্চয়ই তুমি ওদের একজন, কারণ তুমি তো গালীলের লোক।”

71. পিতর তখন নিজেকে অভিশাপ দিলেন এবং শপথ করে বললেন, “তোমরা যার সম্বন্ধে বলছ তাকে আমি চিনি না।”

72. আর তখনই দ্বিতীয় বার মোরগ ডেকে উঠল। যীশু যে বলেছিলেন, “মোরগ দু’বার ডাকবার আগেই তুমি তিন বার বলবে যে, তুমি আমাকে চেনো না,” সেই কথা তখন পিতরের মনে পড়ল। তাতে তিনি কান্নায় ভেংগে পড়লেন।