1. সেই দিনই যীশু ঘর থেকে বের হয়ে সাগরের ধারে গিয়ে বসলেন।
2. তাঁর কাছে এত লোক এসে জড়ো হল যে, তিনি একটা নৌকায় উঠে বসলেন, আর সমস্ত লোক সাগরের ধারে দাঁড়িয়ে রইল।
3. তখন তিনি গল্পের মধ্য দিয়ে অনেক বিষয় তাদের শিক্ষা দিতে লাগলেন।
4. তিনি বললেন, “একজন চাষী বীজ বুনতে গেল। বুনবার সময় কতগুলো বীজ পথের পাশে পড়ল আর পাখীরা এসে তা খেয়ে ফেলল। কতগুলো বীজ পাথুরে জমিতে পড়ল।
5. সেখানে বেশী মাটি ছিল না। মাটি গভীর ছিল না বলে তাড়াতাড়ি চারা গজিয়ে উঠল,
6. কিন্তু সূর্য উঠলে পর তা পুড়ে গেল এবং শিকড় ভাল করে বসে নি বলে শুকিয়ে গেল।
7. আবার কতগুলো বীজ কাঁটাবনের মধ্যে পড়ল। তাতে কাঁটাগাছ বেড়ে উঠে চারাগুলো চেপে রাখল।
8. আর কতগুলো বীজ ভাল জমিতে পড়ে কোনটাতে একশো গুণ, কোনটাতে ষাট গুণ আর কোনটাতে ত্রিশ গুণ ফসল জন্মাল।”
9. গল্পের শেষে যীশু বললেন, “যার শুনবার কান আছে সে শুনুক।”
10. পরে শিষ্যেরা যীশুর কাছে এসে তাঁকে বললেন, “আপনি গল্পের মধ্য দিয়ে লোকদের শিক্ষা দিচ্ছেন কেন?”
11. উত্তরে তিনি শিষ্যদের বললেন, “স্বর্গ-রাজ্যের গুপ্ত সত্যগুলো তোমাদের জানতে দেওয়া হয়েছে কিন্তু ওদের জানতে দেওয়া হয় নি,
12. কারণ যার আছে তাকে আরও দেওয়া হবে, আর তাতে তার অনেক হবে। কিন্তু যার নেই তার যা আছে তা-ও তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে।
13. সেইজন্য আমি গল্পের মধ্য দিয়ে ওদের শিক্ষা দিই, কারণ ওরা দেখেও দেখে না, শুনেও শোনে না এবং বোঝে না।
14. এদের মধ্য দিয়ে নবী যিশাইয়ের এই কথা পূর্ণ হচ্ছে:তোমরা শুনতে থাকবে কিন্তু কোনমতেই বুঝবে না; দেখতে থাকবে কিন্তু কোনমতেই জানবে না।
15. এই সব লোকদের অন্তর অসাড় এবং কান বন্ধ হয়ে গেছে, আর তারা তাদের চোখও বন্ধ করে রেখেছে, যেন তারা চোখ দিয়ে না দেখে, কান দিয়ে না শোনে এবং অন্তর দিয়ে না বোঝে, আর ভাল হবার জন্য আমার কাছে ফিরে না আসে।
16. “কিন্তু তোমরা ধন্য, কারণ তোমাদের চোখ দেখতে পায় এবং তোমাদের কান শুনতে পায়।
17. আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমরা যা যা দেখছ তা অনেক নবী ও ঈশ্বরভক্ত লোকেরা দেখতে চেয়েও দেখতে পান নি, আর তোমরা যা যা শুনছ তা তাঁরা শুনতে চেয়েও শুনতে পান নি।
18-19. “এখন তোমরা চাষীর গল্পের অর্থ শোন। যখন কেউ স্বর্গ-রাজ্যের কথা শুনেও বোঝে না তখন শয়তান এসে তার অন্তরে যে কথা বোনা হয়েছিল তা কেড়ে নেয়। সেই পথের পাশে পড়া বীজের মধ্য দিয়ে এই রকম লোকদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে।
20. আর পাথুরে জমিতে বোনা বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে যারা স্বর্গ-রাজ্যের কথা শুনে তখনই আনন্দের সংগে তা গ্রহণ করে,
21. কিন্তু তাদের মধ্যে শিকড় ভাল করে বসে না বলে তারা অল্প সময়ের জন্য স্থির থাকে। যখন সেই কথার জন্য কষ্ট এবং অত্যাচার আসে তখনই তারা পিছিয়ে যায়।
22. কাঁটার মধ্যে বোনা বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে যারা সেই কথা শোনে, কিন্তু সংসারের চিন্তা-ভাবনা এবং ধন-সম্পত্তির মায়া সেই কথাকে চেপে রাখে। সেইজন্য তাতে কোন ফল হয় না।
23. ভাল জমিতে বোনা বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে যারা সেই কথা শুনে বোঝে এবং ফল দেয়। কেউ দেয় একশো গুণ, কেউ দেয় ষাট গুণ আর কেউ দেয় ত্রিশ গুণ।”
24. পরে তিনি লোকদের শিক্ষা দেবার জন্য আর একটা গল্প বললেন। গল্পটা এই: “স্বর্গ-রাজ্য এমন একজন লোকের মত যিনি নিজের জমিতে ভাল বীজ বুনলেন।
25. পরে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ল তখন সেই লোকের শত্রু এসে গমের মধ্যে শ্যামাঘাসের বীজ বুনে চলে গেল।
26. শেষে গমের চারা যখন বেড়ে উঠে ফল ধরল তখন তার মধ্যে শ্যামাঘাসও দেখা গেল।
27. তা দেখে বাড়ীর দাসেরা এসে মনিবকে বলল, ‘আপনি কি জমিতে ভাল বীজ বোনেন নি? তবে শ্যামাঘাস কোথা থেকে আসল?’
28. “তিনি তাদের বললেন, ‘কোন শত্রু এটা করেছে।’“দাসেরা তাঁকে বলল, ‘তবে আমরা গিয়ে সেগুলো তুলে ফেলব কি?’
29. “তিনি বললেন, ‘না, শ্যামাঘাস তুলতে গিয়ে তোমরা হয়তো ঘাসের সংগে গমও তুলে ফেলবে।
30. ফসল কাটবার সময় পর্যন্ত ওগুলো একসংগে বাড়তে দাও। যারা ফসল কাটে, আমি তখন তাদের বলব যেন তারা প্রথমে শ্যামাঘাসগুলো জড়ো করে পোড়াবার জন্য আঁটি আঁটি করে বাঁধে, আর তার পরে গম আমার গোলায় জমা করে।’ ”
31. যীশু তাদের আর একটা গল্প বললেন। গল্পটা এই: “স্বর্গ-রাজ্য এমন একটা সর্ষে-দানার মত যা একজন লোক নিয়ে নিজের জমিতে লাগাল।
32. সমস্ত বীজের মধ্যে ওটা সত্যিই সবচেয়ে ছোট, কিন্তু গাছ হয়ে বেড়ে উঠলে পর তা সমস্ত শাক-সব্জীর মধ্যে সবচেয়ে বড় হয়। ওটা এমন একটা বড় গাছ হয়ে ওঠে যে, পাখীরা এসে তার ডালপালায় বাসা বাঁধে।”
33. তিনি তাদের আর একটা গল্প বললেন। গল্পটা এই: “স্বর্গ-রাজ্য খামির মত। একজন স্ত্রীলোক তা নিয়ে আঠারো কেজি ময়দার মধ্যে মিশাল। ফলে সমস্ত ময়দাই ফেঁপে উঠল।”
34. যীশু গল্পের মধ্য দিয়ে লোকদের এই সব শিক্ষা দিলেন। তিনি গল্প ছাড়া কোন শিক্ষাই তাদের দিতেন না।
35. এটা হল যাতে নবীর মধ্য দিয়ে এই যে কথা বলা হয়েছিল তা পূর্ণ হয়:শিক্ষা-ভরা উদাহরণের মধ্য দিয়ে আমি মুখ খুলব;জগতের আরম্ভ থেকে যা যা লুকানো ছিল, তা বলব।
36. পরে যীশু লোকদের ছেড়ে ঘরে ঢুকলেন। তখন তাঁর শিষ্যেরা এসে তাঁকে বললেন, “জমির ঐ শ্যামাঘাসের গল্পটা আমাদের বুঝিয়ে দিন।”
37. উত্তরে যীশু তাঁদের বললেন, “যিনি ভাল বীজ বোনেন তিনি মনুষ্যপুত্র।
38. জমি এই জগৎ, আর স্বর্গ-রাজ্যের লোকেরা ভাল বীজ। শয়তানের লোকেরা হল সেই শ্যামাঘাস।
39. যে শত্রু তা বুনেছিল সে হল শয়তান, আর ফসল কাটবার সময় হল এই যুগের শেষ সময়। যাঁরা শস্য কাটবেন তাঁরা হলেন স্বর্গদূত।
40. শ্যামাঘাস জড়ো করে যেমন আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়, যুগের শেষের সময়ও ঠিক তেমনি হবে। মনুষ্যপুত্র তাঁর স্বর্গদূতদের পাঠিয়ে দেবেন।
41. যারা অন্যদের পাপ করায় এবং যারা নিজেরা পাপ করে তাদের সবাইকে সেই স্বর্গদূতেরা মনুষ্যপুত্রের রাজ্যের মধ্য থেকে একসংগে জড়ো করবেন ও জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে ফেলে দেবেন।
42. সেখানে লোকে কান্নাকাটি করবে ও যন্ত্রণায় দাঁতে দাঁত ঘষতে থাকবে।
43. সেই সময়ে ঈশ্বরভক্ত লোকেরা তাদের স্বর্গস্থ পিতার রাজ্যে সূর্যের মত উজ্জ্বল হয়ে দেখা দেবে। যার শুনবার কান আছে সে শুনুক।
44. “স্বর্গ-রাজ্য জমির মধ্যে লুকিয়ে রাখা ধনের মত। একজন লোক তা খুঁজে পেয়ে আবার লুকিয়ে রাখল। তারপর সে খুশী মনে চলে গেল এবং তার যা কিছু ছিল সব বিক্রি করে সেই জমিটা কিনল।
45. “আবার, স্বর্গ-রাজ্য এমন একজন সওদাগরের মত যে ভাল মুক্তা খুঁজছিল।
46. একটা দামী মুক্তার খোঁজ পেয়ে সে গিয়ে তার যা কিছু ছিল সব বিক্রি করে সেই মুক্তাটা কিনল।
47. “আবার, স্বর্গ-রাজ্য এমন একটা বড় জালের মত যা সাগরে ফেলা হল আর তাতে সব রকম মাছ ধরা পড়ল।
48. জাল পূর্ণ হলে পর লোকেরা সেটা পারে টেনে তুলল। পরে তারা বসে ভাল মাছগুলো বেছে ঝুড়িতে রাখল এবং খারাপগুলো ফেলে দিল।
49. যুগের শেষের সময়ে এই রকমই হবে। স্বর্গদূতেরা এসে ঈশ্বরভক্ত লোকদের মধ্য থেকে দুষ্টদের আলাদা করবেন এবং জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে তাদের ফেলে দেবেন।
50. সেখানে লোকে কান্নাকাটি করবে ও যন্ত্রণায় দাঁতে দাত ঘষতে থাকবে।”
51. এর পর যীশু তাঁর শিষ্যদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কি এই সব বুঝতে পেরেছ?”
52. তখন যীশু তাদের বললেন, “স্বর্গ-রাজ্যের বিষয়ে যে সব ধর্ম-শিক্ষক শিক্ষা পেয়েছেন তারা সবাই এমন একজন গৃহস্থের মত যিনি তাঁর ভাণ্ডার থেকে নতুন ও পুরানো জিনিস বের করেন।”
53. শিক্ষা দেবার জন্য এই সব গল্প বলা শেষ করে যীশু সেখান থেকে চলে গেলেন।
54. তারপর নিজের গ্রামে গিয়ে তিনি সমাজ-ঘরে লোকদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। তাঁর কথা শুনে লোকে আশ্চর্য হয়ে বলল, “এই জ্ঞান ও এই সব আশ্চর্য কাজ করবার ক্ষমতা এ কোথা থেকে পেল?
55. এ কি সেই ছুতার মিস্ত্রীর ছেলে নয়? তার মায়ের নাম কি মরিয়ম নয়? আর তার ভাইয়েরা কি যাকোব, যোষেফ, শিমোন ও যিহূদা নয়?
56. তার সব বোনেরা কি আমাদের মধ্যে নেই? তাহলে কোথা থেকে সে এই সব পেল?”
57. এইভাবে যীশুকে নিয়ে লোকদের মনে বাধা আসতে লাগল।তখন যীশু তাদের বললেন, “নিজের গ্রাম ও নিজের বাড়ী ছাড়া আর সব জায়গাতেই নবীরা সম্মান পান।”
58. লোকদের অবিশ্বাসের জন্য তিনি সেখানে বেশী আশ্চর্য কাজ করলেন না।