অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12
  13. 13
  14. 14
  15. 15
  16. 16
  17. 17
  18. 18
  19. 19
  20. 20
  21. 21
  22. 22
  23. 23
  24. 24
  25. 25
  26. 26
  27. 27
  28. 28

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

প্রেরিত্‌ 27 পবিত্র বাইবেল (SBCL)

পৌল রোমের পথে

1. জাহাজে করে আমাদের ইটালীতে নিয়ে যাওয়া স্থির হলে পর পৌল এবং আরও কয়েকজন বন্দীকে যুলিয় নামে একজন শতপতির হাতে দেওয়া হল। যুলিয় ছিলেন সম্রাটের নিজের সৈন্যদলের একজন শতপতি।

2. আমরা আদ্রামুত্তীয় বন্দরের একটা জাহাজে উঠে যাত্রা শুরু করলাম। এশিয়ার ভিন্ন ভিন্ন বন্দরে যাবার জন্য জাহাজখানা প্রস্তুত হয়েই ছিল। ম্যাসিডোনিয়া প্রদেশের থিষলনীকী শহরের আরিষ্টার্খ আমাদের সংগে ছিলেন।

3. আমাদের জাহাজ পরের দিন সীদোনে থামল। যুলিয় পৌলের সংগে বেশ ভাল ব্যবহার করলেন এবং তাঁকে তাঁর বন্ধুদের কাছে যাবার অনুমতি দিলেন যেন তাঁর বন্ধুরা তাঁকে দরকারী জিনিসপত্র দিতে পারে।

4. পরে সেখান থেকে আবার আমাদের জাহাজ ছাড়ল। বাতাস আমাদের উল্টাদিকে থাকাতে সাইপ্রাস দ্বীপের যে দিকটাতে বাতাস ছিল না আমরা সেই দিক ধরে চললাম।

5. পরে আমরা কিলিকিয়া ও পাম্‌ফুলিয়ার সামনে যে সাগর ছিল সেই সাগর পার হয়ে লুকিয়া প্রদেশের মুরা শহরে উপস্থিত হলাম।

6. শতপতি সেখানে আলেক্‌জান্দ্রিয়ার একটা জাহাজ পেলেন। সেই জাহাজটা ইটালী দেশে যাচ্ছিল বলে তিনি আমাদের নিয়ে সেই জাহাজে উঠলেন।

7. আমাদের জাহাজখানা অনেক দিন ধরে খুব আস্তে আস্তে চলে খুব কষ্টে ক্লীদোন শহরের কাছাকাছি উপস্থিত হল, কিন্তু বাতাস আমাদের আর এগিয়ে যেতে দিল না। তখন আমরা ক্রীট দ্বীপের যে দিকে বাতাস ছিল না সেই দিক ধরে সল্‌মোনীর পাশ দিয়ে চললাম।

8. সাগরের কিনার ধরে কষ্ট করে চলে আমরা সুন্দর পোতাশ্রয় বলে একটা জায়গায় আসলাম। তার কাছেই ছিল লাসেয়া শহর।

9. এইভাবে অনেক দিন কেটে গেল। তখন উপবাস-পর্ব শেষ হয়ে শীতকাল প্রায় এসে গেছে। কাজেই জাহাজে করে যাওয়া তখন একটা বিপদের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল। এইজন্য পৌল জাহাজের লোকদের সাবধান করবার জন্য বললেন,

10. “দেখুন, আমি দেখতে পাচ্ছি আমাদের এই যাত্রায় খুব ক্ষতি হবে। সেই ক্ষতি যে কেবল জাহাজ আর মালপত্রের হবে তা নয়, আমাদের জীবনেরও ক্ষতি হবে।”

11. শতপতি কিন্তু পৌলের কথা না শুনে জাহাজের কাপ্তেন ও জাহাজের মালিকের কথা শুনলেন।

12. বন্দরটা শীতকাল কাটাবার উপযুক্ত জায়গা নয় বলে বেশীর ভাগ লোক ঠিক করল যে, সেখান থেকে যাত্রা করে সম্ভব হলে ফৈণীকে গিয়ে শীতকাল কাটানো হবে। ফৈণীক ছিল ক্রীট দ্বীপের জাহাজ থামাবার জায়গা। এই জায়গাটার দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিক খোলা ছিল।

ঝড়

13. পরে যখন আস্তে আস্তে দখিনা বাতাস বইতে লাগল তখন তারা মনে করল তারা যা চেয়েছিল তা-ই হয়েছে। এইজন্য তারা জাহাজের নোংগর তুলে ক্রীট দ্বীপের কিনার ধরে চলল।

14. কিন্তু একটু পরেই সেই দ্বীপ থেকে উরাকুলো বলে এক ভীষণ তুফান শুরু হল, আর জাহাজখানা সেই তুফানে পড়ল।

15. আমরা বাতাসের মুখে এগিয়ে যেতে পারলাম না; সেইজন্য এগিয়ে যাবার চেষ্টা ছেড়ে দিয়ে জাহাজখানা বাতাসে ভেসে যেতে দিলাম।

16. পরে কৌদা নামে একটা ছোট দ্বীপের যে দিকে বাতাস ছিল না আমরা সেই দিক ধরে চললাম এবং জাহাজে যে নৌকা থাকে সেই নৌকাখানা খুব কষ্ট করে ধ্বংসের হাত থেকে আমরা বাঁচালাম।

17. লোকেরা নৌকাখানা জাহাজে টেনে তুলল এবং তার পরে দড়ি দিয়ে জাহাজের খোলটা বাঁধল যেন তার তক্তাগুলো আলাদা হয়ে না পড়ে। সুর্তী নামে সাগরের চরে জাহাজ আট্‌কাবার ভয়ে পালগুলো নামিয়ে ফেলে জাহাজখানা বাতাসে চলতে দেওয়া হল।

18. ঝড়ের ভীষণ আঘাতে আমাদের জাহাজখানা এমনভাবে দুলতে লাগল যে, পরের দিন লোকেরা জাহাজের মালপত্র জলে ফেলে দিতে লাগল।

19. তৃতীয় দিনে তারা নিজের হাতে জাহাজের সাজ-সরঞ্জামও ফেলে দিল।

20. অনেক দিন ধরে সূর্য বা তারা কিছুই দেখা গেল না এবং ভীষণ ঝড় বইতেই থাকল। শেষে আমরা রক্ষা পাবার সব আশাই ছেড়ে দিলাম।

21. লোকেরা অনেক দিন ধরে কিছু খায় নি বলে পৌল তাদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, “দেখুন, আমার কথা শুনে ক্রীট দ্বীপ থেকে জাহাজ না ছাড়া আপনাদের উচিত ছিল। তাহলে এই বিপদ ও ক্ষতির হাত থেকে আপনারা রক্ষা পেতেন।

22. কিন্তু এখন আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, আপনারা মনে সাহস রাখুন, কারণ আপনাদের কেউই মরবেন না; কেবল এই জাহাজখানাই নষ্ট হবে।

23. আমি যাঁর লোক এবং যাঁর সেবা আমি করি সেই ঈশ্বরের একজন দূত গত রাতে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললেন,

24. ‘পৌল, ভয় কোরো না। তোমাকে সম্রাট কৈসরের সামনে দাঁড়াতে হবে। এই জাহাজে যারা তোমার সংগে যাচ্ছে তাদের সকলের জীবন ঈশ্বর দয়া করে তোমাকে দান করেছেন।’

25. এইজন্য আপনারা মনে সাহস রাখুন। ঈশ্বরের উপর আমার এই বিশ্বাস আছে যে, তিনি আমাকে যা বলেছেন তা-ই হবে।

26. তবে আমরা কোন দ্বীপের উপর গিয়ে পড়ব।”

জাহাজ-ডুবি

27. আমরা আদ্রিয়া সাগরের উপর দিয়ে এইভাবে চলতে থাকলাম। ঝড়ের চৌদ্দ দিনের দিন মাঝরাতে নাবিকদের মনে হল তারা ডাংগার কাছে এসেছে।

28. তারা মেপে দেখল সেখানকার জল আশি হাত গভীর। এর কিছুক্ষণ পরে তারা আবার মেপে দেখল যে, সেখানে জল ষাট হাত।

29. পাথরের গায়ে ধাক্কা লাগবার ভয়ে জাহাজের পিছন দিক থেকে তারা চারটা নোংগর ফেলে দিল এবং দিনের আলোর জন্য প্রার্থনা করতে লাগল।

30. পরে জাহাজের নাবিকেরা পালিয়ে যাবার চেষ্টায় জাহাজের সামনের দিক থেকে নোংগর ফেলবার ভান করে জাহাজের নৌকাখানা সাগরে নামিয়ে দিল।

31. তখন পৌল শতপতি ও সৈন্যদের বললেন, “এই নাবিকেরা জাহাজে না থাকলে আপনারা রক্ষা পাবেন না।”

32. তখন সৈন্যেরা নৌকার দড়ি কেটে দিল যাতে নৌকাটা জলে পড়ে যায়।

33. সকাল হবার আগে পৌল সকলকে কিছু খাওয়ার অনুরোধ করে বললেন, “আজ চৌদ্দ দিন হল, কি হবে না হবে সেই চিন্তা করে আপনারা না খেয়ে আছেন-কোন খাবারই খান নি।

34. এখন আমি আপনাদের কিছু খেয়ে নেবার জন্য অনুরোধ করছি। বেঁচে থাকবার জন্য আপনাদের তো কিছু খাওয়া দরকার। দেখবেন, আপনাদের মাথার একটা চুল পর্যন্ত নষ্ট হবে না।”

35. এই কথা বলে পৌল রুটি নিয়ে তাদের সকলের সামনেই ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন এবং তা ভেংগে খেতে লাগলেন।

36. তখন তারা সবাই সাহস পেয়ে খেতে লাগল।

37. আমরা জাহাজে মোট দু’শো ছিয়াত্তরজন ছিলাম।

38. সবাই পেট ভরে খেলে পর জাহাজের ভার কমাবার জন্য সমস্ত গম সাগরে ফেলে দেওয়া হল।

39. সকালবেলা তারা জায়গাটা চিনতে পারল না, কিন্তু এমন একটা ছোট উপসাগর দেখতে পেল যার কিনার বালিতে ভরা ছিল। তখন তারা ঠিক করল, সম্ভব হলে জাহাজখানা সেই কিনারে তুলে দেবে।

40. এইজন্য তারা জাহাজের নোংগরগুলো কেটে সাগরেই ফেলে দিল এবং হালের বাঁধনের দড়িগুলো খুলে দিল। এর পরে তারা বাতাসের মুখে সামনের পাল খাটিয়ে দিল এবং কিনারের দিকে এগিয়ে গিয়ে চরে আটকে গেল।

41. সামনের অংশটা তাড়াতাড়ি বসে যাওয়াতে জাহাজটা অচল হল আর ঢেউয়ের আঘাতে পিছন দিকটা টুকরা টুকরা হয়ে ভেংগে যেতে লাগল।

42. তখন সৈন্যেরা বন্দীদের মেরে ফেলবে বলে ঠিক করল, যেন তাদের মধ্যে কেউ সাঁতার দিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে।

43. কিন্তু শতপতি পৌলের প্রাণ বাঁচাতে চেয়েছিলেন বলে সৈন্যদের ইচ্ছামত কাজ করতে দিলেন না। তিনি আদেশ দিলেন, যারা সাঁতার জানে তারা প্রথমে জাহাজ থেকে লাফিয়ে পড়ে পারে গিয়ে উঠুক,

44. আর বাকি সবাই জাহাজের তক্তা বা অন্য কোন টুকরা ধরে সেখানে যাক। এইভাবে সবাই নিরাপদে ডাংগায় পৌঁছাল।