অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12
  13. 13
  14. 14
  15. 15
  16. 16
  17. 17
  18. 18
  19. 19
  20. 20
  21. 21
  22. 22
  23. 23
  24. 24
  25. 25
  26. 26
  27. 27
  28. 28

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

প্রেরিত্‌ 16 পবিত্র বাইবেল (SBCL)

পৌল ও সীলের সংগে তীমথিয়

1. পরে পৌল দর্বী ও লুস্ত্রা শহরে গেলেন। সেখানে তীমথিয় নামে একজন শিষ্য থাকতেন। তাঁর মা ছিলেন খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসী একজন যিহূদী মহিলা, কিন্তু তাঁর বাবা জাতিতে গ্রীক ছিলেন।

2. লুস্ত্রা ও ইকনিয় শহরের বিশ্বাসী ভাইয়েরা তীমথিয়ের খুব প্রশংসা করত।

3. পৌল তীমথিয়কে সংগে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন বলে তাঁর সুন্নত করালেন, কারণ ঐ সব জায়গায় যে যিহূদীরা থাকত তারা জানত তীমথিয়ের বাবা একজন গ্রীক।

4. পরে তাঁরা সেই সব শহরগুলোর মধ্য দিয়ে গেলেন এবং যিরূশালেমের প্রেরিতেরা ও মণ্ডলীর নেতারা যে কয়েকটা নিয়ম ঠিক করেছিলেন তা লোকদের জানালেন আর সেই সব নিয়ম পালন করতে বললেন।

5. এইভাবে মণ্ডলীগুলোর লোকেরা খ্রীষ্টীয় ধর্ম-বিশ্বাসে সবল হয়ে উঠতে লাগল এবং তাদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যেতে লাগল।

ম্যাসিডোনিয়া প্রদেশে পৌল

6. পবিত্র আত্মা পৌল আর তাঁর সংগীদের এশিয়া প্রদেশে প্রচার করতে দিলেন না। তখন তাঁরা ফরুগিয়া ও গালাতিয়া প্রদেশের সমস্ত জায়গায় গেলেন।

7. পরে মুশিয়ার সীমানায় এসে তাঁরা বিথুনিয়া প্রদেশে যেতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু যীশুর আত্মা তাঁদের যেতে দিলেন না।

8. এইজন্য তাঁরা মুশিয়ার মধ্য দিয়ে ত্রোয়া শহরে চলে গেলেন।

9. রাতের বেলা পৌল একটা দর্শনে দেখলেন, ম্যাসিডোনিয়া প্রদেশের একজন লোক দাঁড়িয়ে তাঁকে মিনতি করে বলছে, “ম্যাসিডোনিয়াতে এসে আমাদের সাহায্য করুন।”

10. পৌল এই দর্শন দেখবার পর আমরা ম্যাসিডোনিয়াতে যাবার জন্য তখনই প্রস্তুত হলাম, কারণ আমরা বুঝতে পারলাম ম্যাসিডোনিয়ার লোকদের কাছে খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবর প্রচার করবার জন্যই ঈশ্বর আমাদের ডেকেছেন।

লুদিয়া বিশ্বাসী হলেন

11. পরে আমরা ত্রোয়া ছেড়ে জাহাজে করে সোজা সামথ্রাকী দ্বীপে গেলাম এবং পরের দিন নিয়াপলি শহরে আসলাম।

12. সেখান থেকে আমরা ফিলিপী শহরে গেলাম। এই ফিলিপীই ম্যাসিডোনিয়ার সেই এলাকার প্রধান শহর। সেখানকার লোকেরা রোম রাজ্যের প্রজা ছিল। আমরা কিছু দিন সেই শহরে রইলাম।

13. বিশ্রামবারে আমরা শহরের ফটকের বাইরে নদীর কাছে গেলাম; মনে করলাম সেখানে যিহূদীদের প্রার্থনা করবার জায়গা আছে। সেখানে যে স্ত্রীলোকেরা মিলিত হয়েছিলেন আমরা তাঁদের কাছে বসে কথা বলতে লাগলাম।

14. যাঁরা শুনছিলেন তাঁদের মধ্যে থুয়াতীরা শহরের লুদিয়া নামে একজন স্ত্রীলোক ছিলেন। তিনি বেগুনী রংয়ের কাপড়ের ব্যবসা করতেন। যিহূদী না হলেও তিনি ঈশ্বরের উপাসনা করতেন। প্রভু লুদিয়ার অন্তর এমনভাবে খুলে দিলেন যাতে তিনি পৌলের কথা মন দিয়ে শুনে বিশ্বাস করেন।

15. এতে তিনি ও তাঁর বাড়ীর সকলে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করলেন। এর পরে তিনি এই বলে আমাদের নিমন্ত্রণ করলেন, “যদি আমাকে আপনারা প্রভুর উপর বিশ্বাসী বলে মনে করেন তবে আমার বাড়ীতে এসে থাকুন।” এই কথা বলে তিনি আমাদের সাধাসাধি করে তাঁর বাড়ীতে নিয়ে গেলেন।

পৌল আর সীল জেলখানায়

16. একদিন যখন আমরা সেই প্রার্থনার জায়গায় যাচ্ছিলাম তখন একজন দাসীর সংগে আমাদের দেখা হল। তাকে একটা মন্দ আত্মায় পেয়েছিল যার ফলে সে ভবিষ্যতের কথা বলতে পারত। তাতে তার মনিবদের লাভ হত।

17. সেই মেয়েটি পৌল এবং আমাদের পিছনে যেতে যেতে চিৎকার করে বলত, “এই লোকেরা মহান ঈশ্বরের দাস। কি করে পাপ থেকে উদ্ধার পাওয়া যায় এঁরা তা- ই আপনাদের কাছে বলছেন।”

18. সে অনেক দিন পর্যন্ত এই রকম করল। শেষে পৌল এত বিরক্ত হলেন যে, তিনি পিছন ফিরে সেই মন্দ আত্মাকে বললেন, “যীশু খ্রীষ্টের নামে আমি তোমাকে আদেশ দিচ্ছি, এই মেয়েটির মধ্য থেকে বের হয়ে যাও।” আর তখনই সেই আত্মা বের হয়ে গেল।

19. লাভের আশা চলে গেল দেখে মেয়েটির মনিবেরা পৌল আর সীলকে ধরে শহর-চকে নেতাদের কাছে টেনে নিয়ে গেল।

20. তার পরে তারা শাসনকর্তাদের কাছে তাঁদের নিয়ে গিয়ে বলল, “এই লোকেরা আমাদের শহরে গোলমাল বাধিয়েছে। এরা যিহূদী।

21. এরা এমন সব আচার-ব্যবহারের বিষয় শিক্ষা দিচ্ছে যা রোমীয় হিসাবে আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা বা পালন করা আইন-বিরুদ্ধ কাজ।”

22. অন্যান্য লোকেরাও পৌল ও সীলের বিরুদ্ধে তাদের সংগে যোগ দিল। তখন শাসনকর্তারা আদেশ দিলেন যেন তাঁদের কাপড়-চোপড় ছিঁড়ে ফেলে বেত মারা হয়।

23. ভীষণভাবে বেত মারবার পরে তাঁদের জেলখানায় রাখা হল, আর ভাল করে পাহারা দেবার জন্য জেল-রক্ষককে আদেশ দেওয়া হল।

24. জেল-রক্ষক সেই আদেশ পেয়ে পৌল ও সীলকে জেলের ভিতরের ঘরে নিয়ে গেলেন এবং হাড়িকাঠ দিয়ে তাঁদের পা আটকে রাখলেন।

25. তখন প্রায় রাত দুপুর। পৌল ও সীল প্রার্থনা করছিলেন এবং ঈশ্বরের উদ্দেশে প্রশংসা-গান করছিলেন। অন্য কয়েদীরা তা শুনছিল।

26. এমন সময় হঠাৎ এক ভীষণ ভূমিকম্প হল এবং তাতে জেলখানার ভিত্তি পর্যন্ত কেঁপে উঠল। তখনই জেলের সমস্ত দরজা ও কয়েদীদের শিকল খুলে গেল।

27. জেল-রক্ষক জেগে উঠলেন এবং জেলের দরজাগুলো খোলা দেখতে পেয়ে ছোরা বের করে আত্মহত্যা করতে চাইলেন। তিনি মনে করলেন সমস্ত কয়েদীই পালিয়ে গেছে।

28. তখন পৌল চিৎকার করে বললেন, “থামুন, নিজের ক্ষতি করবেন না; আমরা সবাই এখানে আছি।”

29. তখন সেই জেল-রক্ষক একজনকে বাতি আনতে বলে নিজে ছুটে ভিতরে গেলেন এবং ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে পৌল ও সীলের পায়ে পড়লেন।

30. তার পরে তিনি পৌল ও সীলকে বাইরে এনে জিজ্ঞাসা করলেন, “বলুন, পাপ থেকে উদ্ধার পাবার জন্য আমাকে কি করতে হবে?”

31. তাঁরা বললেন, “আপনি ও আপনার পরিবার প্রভু যীশুর উপর বিশ্বাস করুন, তাহলে পাপ থেকে উদ্ধার পাবেন।”

32. পৌল আর সীল তখন জেল-রক্ষক ও তাঁর বাড়ীর সকলের কাছে প্রভুর বাক্য বললেন।

33. জেল-রক্ষক সেই রাতেই পৌল আর সীলকে নিয়ে গিয়ে তাঁদের দেহের কাটা জায়গাগুলো ধুয়ে দিলেন, আর তিনি ও তাঁর পরিবারের অন্য সবাই তখনই বাপ্তিস্ম গ্রহণ করলেন।

34. তার পরে তিনি পৌল ও সীলকে নিজের বাড়ীতে নিয়ে গিয়ে খেতে দিলেন। ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করে তাঁর পরিবারের সবাই খুব আনন্দিত হলেন।

35. পরের দিন সকালবেলা শাসনকর্তারা তাঁদের কর্মচারীদের দিয়ে বলে পাঠালেন, “ঐ লোকদের ছেড়ে দাও।”

36. তখন জেল-রক্ষক পৌলকে বললেন, “আপনাকে ও সীলকে ছেড়ে দেবার জন্য শাসনকর্তারা বলে পাঠিয়েছেন। আপনারা এখন বের হয়ে আসুন এবং শান্তিতে চলে যান।”

37. তখন পৌল সেই কর্মচারীদের বললেন, “আমরা রোমীয়, আমাদের বিচার না করেই সকলের সামনে বেত মারা হয়েছে এবং জেলে দেওয়া হয়েছে। এখন কি শাসনকর্তারা আমাদের গোপনে ছেড়ে দিতে চান? তা হবে না; তাঁরা নিজেরা এসে আমাদের বাইরে নিয়ে যান।”

38. সেই কর্মচারীরা তখন এই কথা শাসনকর্তাদের জানাল। শাসনকর্তারা যখন শুনলেন পৌল আর সীল রোমীয় তখন তাঁরা ভয় পেলেন।

39. তাঁরা পৌল আর সীলের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইলেন এবং তাঁদের জেলের বাইরে এনে শহর ছেড়ে যেতে অনুরোধ করলেন।

40. পৌল আর সীল জেলখানা থেকে বাইরে এসে লুদিয়ার বাড়ীতে গেলেন। সেখানে বিশ্বাসী ভাইদের সংগে তাঁদের দেখা হল। ভাইদের উৎসাহ দেবার পর তাঁরা সেখান থেকে চলে গেলেন।