অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12
  13. 13
  14. 14
  15. 15
  16. 16
  17. 17
  18. 18
  19. 19
  20. 20
  21. 21
  22. 22
  23. 23
  24. 24

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

২ শমূয়েল 12 পবিত্র বাইবেল (SBCL)

দায়ূদের কাছে নবী নাথন

1. সদাপ্রভু তখন নাথনকে দায়ূদের কাছে পাঠালেন। তিনি দায়ূদের কাছে গিয়ে বললেন, “কোন এক শহরে দু’জন লোক ছিল। তাদের একজন ছিল ধনী আর অন্যজন গরীব।

2. ধনী লোকটির অনেক গরু ও ভেড়া ছিল।

3. কিন্তু সেই গরীব লোকটির আর কিছুই ছিল না, ছিল কেবল একটা বাচ্চা-ভেড়ী। সে সেটা কিনে পালন করছিল। সেটা তার ও তার ছেলেমেয়েদের সংগে থেকে বড় হয়ে উঠতে লাগল। গরীব লোকটি যা খেত বাচ্চা ভেড়ীটাও তা-ই খেত আর তার পাত্র থেকেই সে জল খেত। তার কোলের কাছে সে শুয়ে থাকত। সে তার কাছে তার মেয়ের মতই ছিল।

4. একদিন একজন অতিথি সেই ধনী লোকটির কাছে আসল। কিন্তু ধনী লোকটি সেই অতিথির জন্য খাবার প্রস্তুত করতে নিজের গরু বা ভেড়া নিতে চাইল না। তার বদলে সে সেই গরীব লোকটির বাচ্চা ভেড়ীটা নিয়ে তার অতিথির জন্য খাবার তৈরী করল।”

5. এই কথা শুনে দায়ূদ সেই ধনী লোকটির উপর রাগে জ্বলে উঠলেন। তিনি নাথনকে বললেন, “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, যে লোকটি এই কাজ করেছে তাকে মেরে ফেলাই উচিত।

6. সে একটুও দয়া না করে এই কাজ করেছে বলে তাকে ঐ ভেড়ার বাচ্চাটার চারগুণ দাম দিতে হবে।”

7. তখন নাথন দায়ূদকে বললেন, “আপনিই সেই লোক। ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘আমিই ইস্রায়েলের উপরে তোমাকে রাজপদে অভিষেক করেছি এবং শৌলের হাত থেকে তোমাকে রক্ষা করেছি।

8. তোমার মনিবের সব কিছু আমি তোমাকে দিয়েছি আর তার স্ত্রীদেরও আমি তোমার কাছে দিয়েছি। ইস্রায়েল ও যিহূদার সমস্ত গোষ্ঠীর লোকদের ভার আমি তোমাকে দিয়েছি। এই সব যদি তোমার পক্ষে যথেষ্ট না হত তবে আমি তোমাকে আরও অনেক কিছু দিতাম।

9. তবে সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা করে কেন তুমি তাঁর কথা তুচ্ছ করলে? তুমি হিত্তীয় ঊরিয়কে মেরে ফেলেছ এবং তার স্ত্রীকে নিজের স্ত্রী করে নিয়েছ, আর অম্মোনীয়দের দিয়ে তুমি ঊরিয়কে মেরে ফেলেছ।

10. তুমি আমাকে তুচ্ছ করেছ এবং হিত্তীয় ঊরিয়ের স্ত্রীকে নিয়ে নিজের স্ত্রী করেছ, সেইজন্য তোমার পরিবার কখনও খুনের হাত থেকে রেহাই পাবে না।’

11. “সদাপ্রভু আরও বলছেন, ‘আমি তোমার পরিবার থেকেই তোমার জন্য বিপদ নিয়ে আসব। তোমার চোখের সামনেই আমি তোমার স্ত্রীদের নিয়ে তোমার নিজের লোককে দেব। সে সকলের চোখের সামনে তাদের নিয়ে শোবে।

12. তুমি সেই কাজ করেছ গোপনে কিন্তু আমি এই কাজ করব সকলের সামনে, সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের চোখের সামনে।’ ”

13. তখন দায়ূদ নাথনকে বললেন, “আমি সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করেছি।”উত্তরে নাথন বললেন, “সদাপ্রভু আপনার পাপ ক্ষমা করলেন; আপনি মারা যাবেন না।

14. কিন্তু এই কাজ করে আপনি সদাপ্রভুর শত্রুদের তাঁকে নিন্দা করবার একটা বড় সুযোগ করে দিয়েছেন। সেইজন্য আপনার যে ছেলেটি জন্মেছে সে অবশ্যই মারা যাবে।”

15. নাথন নিজের বাড়ীতে ফিরে গেলেন। পরে ঊরিয়ের স্ত্রীর গর্ভে দায়ূদের যে ছেলেটির জন্ম হয়েছিল সদাপ্রভুর আঘাতে সে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ল।

16. তখন দায়ূদ ছেলেটির জন্য ঈশ্বরের কাছে মিনতি করতে লাগলেন। তিনি উপবাস করলেন এবং তাঁর ঘরে গিয়ে মাটিতে শুয়ে রাত কাটাতে লাগলেন।

17. রাজবাড়ীর উঁচু পদের কর্মচারীরা তাঁকে মাটি থেকে উঠাবার জন্য তাঁর কাছে গেলেন, কিন্তু তিনি রাজী হলেন না এবং তাঁদের সংগে খাওয়া-দাওয়াও করলেন না।

18. অসুখের সাত দিনের দিন ছেলেটি মারা গেল। ছেলেটি যে মারা গেছে সেই কথা দায়ূদকে জানাতে তাঁর সেই কর্মচারীদের সাহস হল না। তাঁরা বললেন, “ছেলেটি যখন বেঁচে ছিল তখন আমরা তাঁকে বললেও তিনি আমাদের কথা কানে তোলেন নি। এখন আমরা কেমন করে বলব যে, ছেলেটি মারা গেছে? বললে হয়তো তিনি নিজের কোন ক্ষতি করে বসবেন।”

19. কর্মচারীদের মধ্যে এই কানাকানি দেখে দায়ূদ বুঝতে পারলেন যে, ছেলেটি মারা গেছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “ছেলেটি কি মারা গেছে?”উত্তরে তাঁরা বললেন, “হ্যাঁ, মারা গেছে।”

20. দায়ূদ তখন মাটি থেকে উঠে স্নান করে তেল মাখলেন এবং কাপড়-চোপড় বদলে তিনি সদাপ্রভুর ঘরে গিয়ে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে তাঁকে ভক্তি জানালেন। তারপর নিজের ঘরে ফিরে এসে খাবার আনবার হুকুম দিলেন। পরে তাঁর সামনে খাবার রাখা হলে তিনি খেলেন।

21. এতে তাঁর সেই কর্মচারীরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি এই রকম করলেন কেন? ছেলেটি বেঁচে থাকতে আপনি উপবাস করলেন ও কাঁদলেন, কিন্তু সে যখন মারা গেল তখন আপনি উঠে খাওয়া-দাওয়া করলেন।”

22. দায়ূদ বললেন, “ছেলেটি বেঁচে থাকতে আমি উপবাস করেছি আর কেঁদেছি, কারণ আমি ভেবেছিলাম, কি জানি সদাপ্রভু আমাকে দয়া করবেন আর তাতে সে বেঁচে যাবে।

23. কিন্তু এখন যখন সে মারাই গেল তখন আমি আর কি জন্য উপবাস করব? আমি কি তাকে আর ফিরিয়ে আনতে পারব? আমাকেই তার কাছে যেতে হবে। সে আর আমার কাছে ফিরে আসবে না।”

24-25. দায়ূদ তাঁর স্ত্রী বৎশেবাকে সান্ত্বনা দিলেন এবং তিনি আবার তাঁর সংগে শুলেন। পরে তাঁর একটি ছেলে হল। দায়ূদ তাঁর নাম রাখলেন শলোমন। সদাপ্রভু ছেলেটিকে ভালবাসতেন বলে তাঁর নাম যিদীদীয় রাখবার জন্য নবী নাথনকে পাঠিয়ে দিলেন।

26. এদিকে যোয়াব অম্মোনীয়দের রাজধানী রব্বা শহরটা আক্রমণ করে দখল করে নিলেন।

27. যোয়াব দায়ূদের কাছে লোক পাঠিয়ে এই কথা বললেন, “আমি রব্বা শহরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যেখানে খাবার জল জমা করে রাখা হয় সেই এলাকাটা দখল করে নিয়েছি।

28. আপনি বাকী সৈন্যদের জড়ো করে নিয়ে শহরটা আক্রমণ করে দখল করুন। তা না হলে আমাকেই শহরটা দখল করতে হবে আর তাতে আমার নামেই শহরটার নাম হবে।”

29. তখন দায়ূদ সমস্ত সৈন্যদের জড়ো করে নিয়ে রব্বা শহরে গেলেন এবং শহরটা আক্রমণ করে দখল করে নিলেন।

30. তিনি সেখানকার রাজার মাথা থেকে মুকুটটা খুলে নিলেন। সেটা ঊনচল্লিশ কেজি সোনা দিয়ে তৈরী ছিল আর তাতে দামী পাথর বসানো ছিল। মুকুটটা দায়ূদের মাথায় পরিয়ে দেওয়া হল। দায়ূদ সেই শহর থেকে অনেক লুটের মাল নিয়ে গেলেন।

31. তিনি শহরের লোকদের বের করে আনলেন এবং করাত, লোহার খন্তা ও কুড়াল দিয়ে তাদের কাজ করালেন। তিনি তাদের ইট তৈরীর কাজে লাগালেন। অম্মোনীয়দের সমস্ত শহরে তিনি তা-ই করলেন। এর পর দায়ূদ তাঁর সমস্ত সৈন্যদল নিয়ে যিরূশালেমে ফিরে গেলেন।