অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12
  13. 13
  14. 14
  15. 15
  16. 16
  17. 17
  18. 18
  19. 19
  20. 20
  21. 21
  22. 22
  23. 23
  24. 24
  25. 25
  26. 26
  27. 27
  28. 28
  29. 29
  30. 30
  31. 31

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

১ শমূয়েল 25 পবিত্র বাইবেল (SBCL)

দায়ূদ, নাবল ও অবীগল

1. পরে শমূয়েল মারা গেলেন। সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা এক জায়গায় জড়ো হয়ে তাঁর জন্য শোক প্রকাশ করল। তারা রামায় তাঁর নিজের বাড়ীতেই তাঁকে কবর দিল। এর পর দায়ূদ পারণ মরু-এলাকায় গেলেন।

2. তখন মায়োন গ্রামে একজন খুব ধনী লোক ছিল। তার কাজ-কারবার ছিল কর্মিল গ্রামে। তার তিন হাজার ভেড়া ও এক হাজার ছাগল ছিল। সেই সময় কর্মিলে সে তার ভেড়ার লোম ছাঁটাই করছিল।

3. লোকটির নাম ছিল নাবল ও তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল অবীগল। স্ত্রীলোকটি বুদ্ধিমতী ও সুন্দরী ছিলেন, কিন্তু তাঁর স্বামীর ব্যবহার ছিল কর্কশ ও খারাপ। সে ছিল কালেব বংশের লোক।

4. দায়ূদ সেই মরু-এলাকায় থাকতেই খবর পেলেন যে, নাবল তার ভেড়ার লোম ছাটাই করছে।

5-6. দায়ূদ তার কাছে দশজন যুবককে পাঠালেন এবং তাদের বললেন, “তোমরা কর্মিলে নাবলের কাছে যাবে এবং আমার হয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাবে এবং বলবে, ‘আপনার, আপনার পরিবারের লোকদের এবং আপনার সব কিছুর মংগল হোক।’

7. তারপর তাঁকে বলবে যে, আমি এখন শুনতে পেলাম তাঁর ওখানে লোম ছাঁটাইয়ের কাজ চলছে। তাঁর রাখালেরা যতদিন আমাদের সংগে ছিল আমরা তাদের সংগে খারাপ ব্যবহার করি নি এবং যতদিন তারা কর্মিলে ছিল তাদের কিছুই চুরি যায় নি।

8. তাঁর কর্মচারীদের জিজ্ঞাসা করলেই তিনি সেই কথা জানতে পারবেন। কাজেই তিনি যেন আমার এই যুবকদের সুনজরে দেখেন, কারণ তাঁরা তাঁর আনন্দের দিনেই তাঁর কাছে এসেছে। সেইজন্য তিনি যা পারেন তা-ই যেন তাঁর এই দাসদের ও তাঁর সন্তান দায়ূদকে দান করেন।”

9. দায়ূদের লোকেরা গিয়ে দায়ূদের নাম করে নাবলকে ঐ সব কথা বলে অপেক্ষা করতে লাগল।

10. উত্তরে নাবল দায়ূদের লোকদের বলল, “কে এই দায়ূদ? আর যিশয়ের ছেলেই বা কে? আজকাল অনেক দাস তাদের মনিবকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে।

11. যারা আমার ভেড়ার লোম ছাঁটাই করছে তাদের জন্য আমি যে খাবার ও জল রেখেছি এবং পশু জবাই করেছি তা নিয়ে কি আমি এমন লোকদের দেব যাদের সম্বন্ধে আমার কিছুই জানা নেই?”

12. এই কথা শুনে দায়ূদের লোকেরা ফিরে গিয়ে সমস্ত কথা দায়ূদকে জানাল।

13. দায়ূদ তাঁর লোকদের বললেন, “তোমরা প্রত্যেকে কোমরে তলোয়ার বেঁধে নাও।” এতে তারা প্রত্যেকেই কোমরে তলোয়ার বেঁধে নিল আর দায়ূদও তা-ই করলেন। তারপর প্রায় চারশো লোক দায়ূদের সংগে গেল আর দু’শো লোক রইল মালপত্র পাহারা দেবার জন্য।

14. তখন একজন চাকর নাবলের স্ত্রী অবীগলকে বলল, “মরু-এলাকা থেকে দায়ূদ আমাদের মনিবের কাছে তাঁর শুভেচ্ছা জানাবার জন্য কয়েকজন লোক পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু আমাদের মনিব তাদের ভীষণ গালাগালি করেছেন।

15. ঐ লোকগুলো কিন্তু আমাদের সংগে খুব ভাল ব্যবহারই করেছিল। আমরা যতদিন মাঠের মধ্যে তাদের কাছে ছিলাম তারা আমাদের সংগে খারাপ ব্যবহারও করে নি এবং আমাদের কোন জিনিসও চুরি হয় নি।

16. আমরা যতদিন তাদের কাছে থেকে ভেড়া চরিয়েছি ততদিন দিনরাত তারা আমাদের চারপাশে রক্ষা-দেয়ালের মত ছিল।

17. এখন আপনি কি করবেন তা ভেবে দেখুন, কারণ আমাদের মনিব ও তাঁর সমস্ত লোকজনদের ভীষণ ক্ষতি করবার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মনিব এমন একজন বদ্‌মেজাজী লোক যে, তিনি কারও কথা শোনেন না।”

18. এই কথা শুনে অবীগল আর দেরি করলেন না। তিনি দু’শো রুটি, চামড়ার দু’থলি আংগুর-রস, পাঁচটা ভেড়ার মাংস, পাঁচ বস্তা ভাজা শস্য, একশো তাল কিশমিশ এবং দু’শো তাল ডুমুর নিয়ে গাধার পিঠে চাপালেন।

19. তারপর তিনি তার চাকরদের বললেন, “তোমরা আমার আগে আগে যাও, আমি তোমাদের পিছনে পিছনে আসছি।” এই সব কথা কিন্তু তিনি তাঁর স্বামী নাবলকে জানালেন না।

20. অবীগল যখন তাঁর গাধায় চড়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে যাচ্ছিলেন তখন দায়ূদও তাঁর লোকদের নিয়ে আর একটা ঢাল বেয়ে তাঁর দিকেই নেমে আসছিলেন। তাতে অবীগল তাঁদের সামনে গিয়ে পড়লেন।

21. এর কিছু আগে দায়ূদ বলছিলেন, “মিথ্যাই আমি এই লোকটার সব কিছু সেই মরু-এলাকায় পাহারা দিয়ে মরেছি যাতে তার কোন কিছু চুরি না হয়। আমি তার উপকার করেছি কিন্তু সে তার বদলে আমার অপকার করেছে।

22. ঈশ্বর যেমন দায়ূদের শত্রুদের নিশ্চয়ই ভীষণভাবে শাস্তি দেবেন তেমনি আমিও নিশ্চয়ই কাল সকাল পর্যন্ত নাবলের বাড়ীর একটি পুরুষ লোককেও বাঁচিয়ে রাখব না।”

23. অবীগল দায়ূদকে দেখে তাড়াতাড়ি করে তাঁর গাধার পিঠ থেকে নামলেন এবং দায়ূদের সামনে মাটিতে উবুড় হয়ে তাঁকে প্রণাম করলেন।

24. তারপর তিনি দায়ূদের পায়ের উপর পড়ে তাঁকে বললেন, “হে আমার প্রভু, সব দোষই আমার। দয়া করে আপনার দাসীকে দু’টা কথা বলতে দিন এবং তার কথা আপনি শুনুন।

25. আমার প্রভু যেন সেই জঘন্য লোকের, অর্থাৎ নাবলের কথা না ধরেন। তার নামও যেমন সেও তেমন। তার নামের অর্থ একগুঁয়ে, আর তার মধ্যে রয়েছে শুধু একগুঁয়েমী। আমার প্রভু যে সব লোক পাঠিয়েছিলেন তাদের সংগে আপনার এই দাসীর দেখা হয় নি।

26. “হে আমার প্রভু, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য ও আপনার প্রাণের দিব্য যে, আপনার শত্রুদের এবং যারা আপনার ক্ষতি করতে চায় তাদের দশা নাবলের মত হবে, কারণ সদাপ্রভু আপনাকে রক্তপাত করতে দেন নি এবং নিজের হাতে প্রতিশোধ নিতে দেন নি।

27. এই দাসী তার প্রভুর জন্য যে উপহার এনেছে তা যেন তাঁর সংগের লোকদের দেওয়া হয়।

28. আপনার দাসীর অন্যায় আপনি দয়া করে ক্ষমা করে দিন। সদাপ্রভু নিশ্চয়ই আমার প্রভুর বংশকে স্থায়ী করবেন, কারণ তিনি সদাপ্রভুর পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করছেন। এই পর্যন্ত আপনার মধ্যে কোন মন্দতা দেখা যায় নি আর যাবেও না।

29. আমার প্রভুকে মেরে ফেলবার জন্য লোকে তাড়া করলেও আমি জানি তাঁর প্রাণ তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর ধনভাণ্ডারে যত্নের সংগে রাখা আছে। কিন্তু আপনার শত্রুদের প্রাণ তিনি ফিংগা দিয়ে পাথর ছুঁড়বার মত করেই ছুঁড়ে ফেলে দেবেন।

30. সদাপ্রভু আমার প্রভুর মংগল করবার প্রতিজ্ঞাগুলো পূর্ণ করবেন এবং তাঁকে ইস্রায়েলীয়দের নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করবেন।

31. সেই সময় আমার প্রভু অকারণে রক্তপাত করেছেন কিম্বা নিজের হাতে প্রতিশোধ নিয়েছেন ভেবে তাঁর বিবেক তাঁকে দোষী করবে না কিম্বা তিনি অন্তরে কোন দুঃখবোধ করবেন না। তবে সদাপ্রভু যখন আমার প্রভুর মংগল করবেন তখন তিনি যেন তাঁর এই দাসীর কথা ভুলে না যান।”

32. দায়ূদ তখন অবীগলকে বললেন, “ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব হোক, কারণ তিনি আজ আমার সংগে দেখা করবার জন্য তোমাকে পাঠিয়ে দিলেন।

33. ধন্য তোমার বিচারবুদ্ধি, ধন্য তুমি, কারণ তুমি আজ আমাকে রক্তপাত করতে আর নিজের হাতে প্রতিশোধ নিতে বাধা দিলে।

34. তোমার ক্ষতি করা থেকে যিনি আমাকে দূরে রেখেছেন সেই ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য যে, তুমি যদি তাড়াতাড়ি এসে আমার সংগে দেখা না করতে তাহলে সকাল পর্যন্ত নাবলের বাড়ীর কোন পুরুষলোক বেঁচে থাকত না।”

35. এর পর দায়ূদ তাঁর জন্য আনা সমস্ত জিনিস অবীগলের হাত থেকে গ্রহণ করলেন আর বললেন, “তুমি এবার শান্তিতে বাড়ী ফিরে যাও। আমি তোমার সব কথা শুনেছি এবং তোমার অনুরোধ মেনে নিয়েছি।”

36. অবীগল যখন নাবলের কাছে ফিরে গেলেন তখন রাজবাড়ীতে যেমন চলে সেই রকম একটা ভোজ তার বাড়ীতে চলছিল। নাবল মদ খেয়ে খুশী হয়ে উঠল এবং পরে ভীষণ মাতাল হয়ে পড়ল। সেইজন্য অবীগল সকাল হওয়ার আগে তাকে কিছুই বললেন না।

37. সকালবেলা যখন নাবলের নেশা কেটে গেল তখন তার স্ত্রী তাকে সব কথা জানালেন। এতে নাবলের অন্তর যেন মরে গেল আর সে পাথরের মত হয়ে গেল।

38. এর প্রায় দশ দিন পরে সদাপ্রভুর শাস্তি নাবলের উপর নেমে আসলে পর সে মারা গেল।

39. নাবলের মৃত্যুর খবর পেয়ে দায়ূদ বললেন, “সদাপ্রভুর গৌরব হোক। তিনি নাবলের বিরুদ্ধে আমার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, কারণ নাবল আমাকে অপমান করেছিল। অন্যায় করা থেকে তিনি আমাকে রক্ষা করেছেন, আর নাবলের অন্যায়কে নাবলের উপরেই ফিরিয়ে দিয়েছেন।”পরে দায়ূদ অবীগলকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে তাঁর কাছে লোক পাঠিয়ে দিলেন।

40. দায়ূদের লোকেরা কর্মিলে অবীগলের কাছে গিয়ে বলল, “দায়ূদ আপনাকে বিয়ে করতে চান, সেইজন্য তিনি আপনার কাছে আমাদের পাঠিয়েছেন।”

41. এই কথা শুনে অবীগল মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে দায়ূদের উদ্দেশে বললেন, “আমি আপনার দাসী; আপনার দাসদের সেবা করবার ও পা ধোওয়াবার জন্য আমি প্রস্তুত আছি।”

42. এই কথা বলে অবীগল তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হলেন এবং গাধায় চড়ে পাঁচজন দাসী নিয়ে দায়ূদের পাঠানো লোকদের সংগে গেলেন। সেখানে গেলে পর দায়ূদের সংগে তাঁর বিয়ে হল।

43. এর আগে দায়ূদ যিষ্রিয়েল গ্রামের অহীনোয়মকে বিয়ে করেছিলেন। অহীনোয়ম ও অবীগল দু’জনেই তাঁর স্ত্রী হলেন।

44. এদিকে শৌল তাঁর মেয়ে, দায়ূদের স্ত্রী মীখলকে পল্‌টির সংগে বিয়ে দিয়েছিলেন। পল্‌টি ছিল গল্লীম গ্রামের লয়িশের ছেলে।