অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12
  13. 13
  14. 14
  15. 15
  16. 16
  17. 17
  18. 18
  19. 19
  20. 20
  21. 21
  22. 22
  23. 23
  24. 24
  25. 25
  26. 26
  27. 27
  28. 28
  29. 29
  30. 30
  31. 31

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

১ শমূয়েল 14 পবিত্র বাইবেল (SBCL)

পলেষ্টীয়েরা হেরে গেল

1. এদিকে শৌলের ছেলে যোনাথন একদিন তাঁর অস্ত্র বহনকারী যুবকটিকে বললেন, “চল, আমরা ওপাশে পলেষ্টীয়দের ছাউনিতে যাই।” কথাটা কিন্তু তিনি তাঁর বাবাকে জানালেন না।

2. শৌল তখন গিবিয়ার সীমানায় মিগ্রোণ বলে একটা জায়গার একটা ডালিম গাছের তলায় বসে ছিলেন। তাঁর সংগে ছিল ছ’শো লোক,

3. আর তাদের মধ্যে ছিলেন অহিয়, যাঁর পরনে ছিল এফোদ। অহিয় ছিলেন অহীটুবের ছেলে, অহীটুব ছিলেন ঈখাবোদের ভাই, ঈখাবোদ ছিলেন পীনহসের ছেলে আর পীনহস ছিলেন এলির ছেলে; এলি শীলোতে সদাপ্রভুর পুরোহিত ছিলেন। যোনাথন যে বের হয়ে গেছেন তা কেউ জানত না।

4. যে গিরিপথ পার হয়ে যোনাথন পলেষ্টীয়দের সৈন্য-ছাউনির কাছে যাওয়ার কথা বলেছিলেন সেই গিরিপথের দু’পাশটা ছিল খাড়া উঁচু পাথরের দেয়ালের মত। তার এক পাশের নাম বোৎসেস ও অন্য পাশের নাম সেনি।

5. তার এক পাশ ছিল উত্তরে মিক্‌মসের দিকে আর অন্য পাশ ছিল দক্ষিণে গেবার দিকে।

6. যোনাথন তাঁর অস্ত্র বহনকারী যুবকটিকে বললেন, “চল, আমরা ওপাশে ঐ সুন্নত-না-করানো লোকদের ছাউনিতে যাই। হয়তো সদাপ্রভু আমাদের জন্য কিছু করবেন, কারণ তিনি তাঁর নিজের ইচ্ছামতই কম লোক দিয়ে হোক বা বেশী লোক দিয়ে হোক জয়ী হতে পারেন।”

7. অস্ত্র বহনকারী লোকটি তখন বলল, “আপনার মন যা বলে তা-ই করুন। চলুন, আপনার ইচ্ছামতই আমি চলব।”

8. যোনাথন বললেন, “তাহলে চল, আমরা ওপাশে ওদের দিকে গিয়ে ওদের দেখা দেব।

9. ওরা যদি আমাদের বলে, ‘দাঁড়াও, আমরা তোমাদের কাছে আসছি,’ তাহলে আমরা যেখানে থাকব সেখান থেকে আর ওদের কাছে উঠে যাব না।

10. কিন্তু যদি ওরা বলে, ‘আমাদের কাছে উঠে এস,’ তাহলে আমরা উঠে যাব। সদাপ্রভু যে আমাদের হাতে ওদের তুলে দিয়েছেন ওটাই হবে আমাদের কাছে তার চিহ্ন।”

11. এই বলে পলেষ্টীয় সৈন্যদের সামনে গিয়ে তাঁরা দু’জন দেখা দিলেন। তখন পলেষ্টীয়েরা বলল, “ঐ দেখ, গর্তে লুকানো ইব্রীয়েরা বের হয়ে আসছে।”

12. তাদের সৈন্য-ছাউনির লোকেরা যোনাথন ও তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটিকে বলল, “আমাদের কাছে উঠে আয়, তোদের দেখিয়ে দিচ্ছি।”তখন যোনাথন তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটিকে বললেন, “আমার পিছনে পিছনে উঠে এস। সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের হাতে ওদের দিয়ে রেখেছেন।”

13. যোনাথন চার হাত-পায়ে উপরে উঠে গেলেন আর তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটিও তাঁর পিছনে পিছনে উঠে গেল। পলেষ্টীয়েরা যোনাথনের হাতে মারা পড়তে লাগল আর তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটিও তাঁর পিছনে পিছনে পলেষ্টীয়দের মারতে লাগল।

14. যোনাথন ও তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটির আক্রমণের শুরুতেই কমবেশী আধা একর জমির মধ্যে প্রায় বিশজন লোক মারা পড়ল।

ইস্রায়েলীয়দের জয়লাভ

15. এর ফলে পলেষ্টীয়দের যুদ্ধের মাঠের ছাউনিতে এবং সমস্ত সৈন্যদের মধ্যে একটা ভীষণ ভয় দেখা দিল; এমন কি, তাদের মিক্‌মসের ছাউনির ও হানাদার দলের সৈন্যেরা ভয়ে কাঁপতে লাগল, আর সেই সংগে ভূমিকম্পও হল। সেই ভীষণ ভয় ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছিল।

16. বিন্যামীন এলাকার গিবিয়াতে শৌলের পাহারাদার সৈন্যেরা দেখতে পেল যে, পলেষ্টীয় সৈন্যেরা দলছাড়া হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।

17. শৌল তখন তাঁর সংগের লোকদের বললেন, “সৈন্যদের জড়ো করে সাজিয়ে দেখ, কে আমাদের মধ্য থেকে চলে গেছে।” তাতে তারা দেখতে পেল যোনাথন ও তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটি সেখানে নেই।

18. শৌল তখন অহিয়কে বললেন, “আপনি ঈশ্বরের সিন্দুকটি নিয়ে আসুন।” (সেই সময় সিন্দুকটি ইস্রায়েলীয়দের কাছেই ছিল।)

19. শৌল যখন পুরোহিতের সংগে কথা বলছিলেন তখন পলেষ্টীয়দের ছাউনিতে গোলমাল চলছিল এবং তা বেড়ে যাচ্ছিল। কাজেই শৌল পুরোহিতকে বললেন, “থাক্‌, লাগবে না।”

20. তারপর শৌল ও তাঁর সব সৈন্যেরা যুদ্ধের ডাকে সাড়া দিয়ে একত্র হয়ে যুদ্ধ করতে গেলেন। তাঁরা দেখলেন যে, পলেষ্টীয়েরা একজন আর একজনের উপর তলোয়ার চালাচ্ছে এবং তাদের মধ্যে ভীষণ বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।

21. এর আগে যে সব ইব্রীয়েরা পলেষ্টীয়দের মধ্যে থাকত এবং তাদের সংগে ছাউনিতে গিয়েছিল তারাও তখন ফিরে গিয়ে শৌল ও যোনাথনের সংগেকার ইস্রায়েলীয়দের সংগে যোগ দিল।

22. ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকায় লুকিয়ে থাকা ইস্রায়েলীয়েরাও যখন শুনল পলেষ্টীয়েরা পালিয়ে যাচ্ছে তখন তারাও বেরিয়ে এসে যুদ্ধে যোগ দিল এবং পলেষ্টীয়দের পিছনে তাড়া করল।

23. এইভাবে সদাপ্রভু সেই দিন ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার করলেন, আর বৈৎ-আবন পার হয়েও যুদ্ধ চলতে লাগল।

যোনাথন মধু খেলেন

24. সেই দিনটা ইস্রায়েলীয়দের খুব কষ্টে কাটল, কারণ শৌল তাদের দিয়ে একটা দিব্য করিয়ে নিয়েছিলেন যে, তিনি সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত, শত্রুদের উপর প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত যদি কেউ কিছু খায় তবে তার উপর যেন অভিশাপ পড়ে। কাজেই সেই দিন লোকেরা কেউ কিছু খায় নি।

25. তারা সবাই গিয়ে এমন এক জায়গায় ঢুকল যেখানে গাছপালা আছে। সেখানে মাটির উপর কিছু মধু তাদের চোখে পড়ল।

26. তারা দেখল, একটা চাক থেকে মধু ঝরে পড়ছে কিন্তু শপথ ভাংবার ভয়ে তা মুখে দিল না।

27. যোনাথন শোনেন নি যে, তাঁর বাবা লোকদের দিয়ে এই রকম একটা দিব্য করিয়ে নিয়েছেন। তাই তিনি তাঁর হাতের লাঠির আগাটা বাড়িয়ে মৌচাকে ঢুকালেন এবং মধু হাতে নিয়ে খেতে লাগলেন। তাতে তাঁর দেহে শক্তি ফিরে আসল।

28. তখন সৈন্যদের একজন তাঁকে বলল, “আপনার বাবা সৈন্যদের দিয়ে একটা কঠিন শপথ করিয়ে নিয়েছেন আর বলেছেন, ‘আজ যদি কেউ কিছু খায় তবে তার উপর অভিশাপ পড়বে।’ তাই লোকেরা এত দুর্বল হয়ে পড়েছে।”

29. তখন যোনাথন বললেন, “আমার বাবা তো লোকদের কষ্ট দিচ্ছেন। দেখ, এই মধু একটুখানি মুখে দেওয়াতে আমার দেহে কেমন শক্তি ফিরে এসেছে।

30. শত্রুদের কাছ থেকে লুটে নেওয়া খাবার থেকে যদি আজ লোকেরা খেতে পারত তাহলে কত ভাল হত, আর পলেষ্টীয়েরাও আরও অনেক বেশী মারা পড়ত।”

31. ইস্রায়েলীয়েরা সেই দিন মিক্‌মস থেকে অয়ালোন পর্যন্ত পলেষ্টীয়দের মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল।

32. তাই তারা লুটের জিনিসের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ভেড়া, গরু, বাছুর ধরে মাটিতে ফেলে কেটে রক্ত সুদ্ধই মাংস খেতে লাগল।

33. তখন লোকেরা গিয়ে শৌলকে বলল, “দেখুন, ওরা সবাই রক্ত সুদ্ধ মাংস খেয়ে সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করছে।”তিনি বললেন, “তোমরা অবিশ্বস্ত হয়েছ। এখন আর দেরি না করে একটা বড় পাথর গড়িয়ে এখানে নিয়ে এস।”

34. তারপর তিনি বললেন, “তোমরা লোকদের মধ্যে গিয়ে বল যেন তারা তাদের বলদ বা ভেড়া এখানে আমার কাছে নিয়ে এসে কাটে আর তার পরে খায়। রক্ত সুদ্ধ মাংস খেয়ে কেউ যেন সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ না করে।”সেই রাতে লোকেরা যে যার বলদ নিয়ে এসে সেখানে কাটল।

35. সদাপ্রভুর উদ্দেশে শৌল সেখানে একটা বেদী তৈরী করলেন। এটাই হল সদাপ্রভুর উদ্দেশে তাঁর তৈরী প্রথম বেদী।

36. পরে শৌল বললেন, “চল, আজ রাতে আমরা পলেষ্টীয়দের তাড়া করি এবং সকাল পর্যন্ত তাদের জিনিসপত্র লুট করি। তাদের একজনকেও আমরা বাঁচিয়ে রাখব না।”উত্তরে লোকেরা বলল, “আপনি যা ভাল মনে করেন তা-ই করুন।”কিন্তু পুরোহিত বললেন, “চলুন, এখানে আমরা প্রথমে ঈশ্বরের কাছে জিজ্ঞাসা করি।”

37. তখন শৌল ঈশ্বরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কি পলেষ্টীয়দের তাড়া করব? ইস্রায়েলীয়দের হাতে কি তুমি তাদের তুলে দেবে?” কিন্তু ঈশ্বর সেই দিন শৌলকে কোন উত্তর দিলেন না।

38. সেইজন্য শৌল বললেন, “সৈন্যদলের নেতারা, আপনারা এখানে আসুন। আজকের এই পাপ কি করে হল আসুন, আমরা তাঁর খোঁজ করি।

39. ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধারকর্তা জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য যে, আমার ছেলে যোনাথনও যদি তা করে থাকে নিশ্চয়ই তাকেও মরতে হবে।” কিন্তু লোকেরা সবাই চুপ করে রইল।

40. শৌল তখন সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের বললেন, “আপনারা এক দিকে দাঁড়ান, আর আমি ও আমার ছেলে যোনাথন অন্য দিকে দাঁড়াই।”লোকেরা বলল, “আপনি যা ভাল মনে করেন তা-ই করুন।”

41. শৌল তখন ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে বললেন, “এর সঠিক উত্তর আমাদের দাও।” তাতে দোষ পড়ল শৌল ও যোনাথনের উপর আর বাকী লোকেরা ছাড়া পেল।

42. শৌল বললেন, “আমার ও আমার ছেলে যোনাথনের মধ্যে গুলিবাঁট করা হোক।” তাতে যোনাথনের উপর দোষ পড়ল।

43. শৌল তখন যোনাথনকে বললেন, “আমাকে বল, তুমি কি করেছ?”যোনাথন তাঁকে বললেন, “আমার লাঠির আগা দিয়ে আমি একটুখানি মধু খেয়েছি, তাই আমাকে মরতে হবে।”

44. শৌল বললেন, “হ্যাঁ যোনাথন, তোমাকে মরতেই হবে। ঈশ্বর যেন তোমাকে শাস্তি দেন, অবশ্যই শাস্তি দেন।”

45. কিন্তু লোকেরা শৌলকে বলল, “কি? যাঁর জন্য ইস্রায়েলীয়েরা এই মহা উদ্ধার পেয়েছে সেই যোনাথনকে মরতে হবে? কখনও না; জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য যে, তাঁর একটা চুলও মাটিতে পড়বে না, কারণ তিনি আজ যা করেছেন তা ঈশ্বরের সংগে থেকেই করেছেন।” লোকেরা এইভাবে যোনাথনকে রক্ষা করল, তাঁকে মেরে ফেলা হল না।

46. এর পর শৌল আর পলেষ্টীয়দের তাড়া করলেন না, আর পলেষ্টীয়েরাও নিজেদের দেশে চলে গেল।

47. শৌল ইস্রায়েলীয়দের রাজা হবার পর দেশের চারপাশের সমস্ত শত্রুদের সংগে, অর্থাৎ মোয়াবীয়, অম্মোনীয়, ইদোমীয়, সোবার রাজাদের ও পলেষ্টীয়দের সংগে যুদ্ধ করেছিলেন। তিনি যেদিকে যেতেন সেদিকেই ভীষণ ক্ষতি করতেন।

48. তিনি বীরের মত যুদ্ধ করে অমালেকীয়দের হারিয়ে দিয়ে লুটেরাদের হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করেছিলেন।

49. যোনাথন, যিশ্‌বি ও মল্কীশূয় নামে শৌলের তিনজন ছেলে ছিল। তাঁর বড় মেয়ের নাম ছিল মেরব ও ছোট মেয়ের নাম ছিল মীখল।

50. তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল অহীনোয়ম। তিনি ছিলেন অহীমাসের মেয়ে। শৌলের প্রধান সেনাপতির নাম ছিল অব্‌নের। তিনি শৌলের কাকা নেরের ছেলে।

51. শৌলের বাবা কীশ ও অব্‌নেরের বাবা নের ছিলেন অবীয়েলের ছেলে।

52. শৌলের রাজত্বকালে পলেষ্টীয়দের সংগে ভীষণ যুদ্ধ হয়েছিল। কোন শক্তিশালী লোক বা বীর পুরুষ দেখলেই তিনি তাকে তাঁর সৈন্যদলে নিয়ে নিতেন।