অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12
  13. 13
  14. 14
  15. 15
  16. 16
  17. 17
  18. 18
  19. 19
  20. 20
  21. 21
  22. 22
  23. 23
  24. 24
  25. 25
  26. 26
  27. 27
  28. 28
  29. 29
  30. 30
  31. 31

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

১ শমূয়েল 1 পবিত্র বাইবেল (SBCL)

শমূয়েলের জন্ম

1. ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকায় রামাথয়িম-সোফীম শহরে ইল্‌কানা নামে একজন লোক ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর লোকদের সংগে বাস করতেন। তাঁর বাবার নাম ছিল যিরোহম। যিরোহম ছিলেন ইলীহূর ছেলে, ইলীহূ ছিলেন তোহের ছেলে এবং তোহ ছিলেন সুফের ছেলে।

2. ইল্‌কানার দুইজন স্ত্রী ছিল; একজনের নাম হান্না আর অন্যজনের নাম পনিন্না। পনিন্নার ছেলেমেয়ে হয়েছিল কিন্তু হান্নার কোন ছেলেমেয়ে হয় নি।

3. ইল্‌কানা প্রত্যেক বছর তাঁর শহর থেকে শীলোতে যেতেন। তিনি সেখানে গিয়ে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর উপাসনা ও তাঁর উদ্দেশে পশু-উৎসর্গ করতেন। তখন সেখানে পুরোহিত এলির দুই ছেলে সদাপ্রভুর পুরোহিত ছিল। তাদের নাম ছিল হফ্‌নি ও পীনহস।

4. পশু-উৎসর্গের দিনে ইল্‌কানা তাঁর স্ত্রী পনিন্না ও তাঁর সব ছেলেমেয়েদের তাঁর উৎসর্গ করা মাংসের একটা করে ভাগ দিতেন।

5. কিন্তু হান্নাকে দিতেন দুই ভাগ, কারণ তিনি হান্নাকে ভালবাসতেন। সদাপ্রভু কিন্তু হান্নাকে বন্ধ্যা করে রেখেছিলেন।

6. সদাপ্রভু তা করেছিলেন বলে তাঁর সতীন তাঁকে খোঁচা মেরে কথা বলে তাঁর মন অস্থির করে তুলত।

7. বছরের পর বছর এইভাবেই চলছিল। হান্না যখনই সদাপ্রভুর ঘরে যেতেন পনিন্না তাঁকে ঐভাবে খোঁচা মেরে কথা বলত। তাই তিনি কান্নাকাটি করতেন আর কিছুই খেতেন না।

8. এ দেখে তাঁর স্বামী ইল্‌কানা তাঁকে বলতেন, “হান্না, তুমি কেন কাঁদছ? কেন কিছু খাচ্ছ না? কেন তোমার এত দুঃখ? আমি কি তোমার কাছে দশটা ছেলের চেয়েও বেশী নই?”

9. এক সময় শীলোতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে হান্না উঠে উপাসনা-ঘরে গেলেন। পুরোহিত এলি তখন সদাপ্রভুর সেই ঘরের দরজার কাছে একটা আসনে বসে ছিলেন।

10. মনের কষ্টে হান্না সদাপ্রভুর কাছে খুব কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করতে লাগলেন।

11. তিনি সদাপ্রভুর কাছে মানত করে বললেন, “হে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু, তুমি যদি তোমার এই দাসীর মনের কষ্টের দিকে চেয়ে দেখ এবং আমার প্রতি মনোযোগ দাও আর আমাকে ভুলে না গিয়ে যদি তোমার এই দাসীকে একটা ছেলে দাও তবে সারা জীবনের জন্য আমি তাকে তোমার উদ্দেশে দান করব। তার মাথায় কখনো ক্ষুর লাগানো হবে না।”

12. হান্না অনেকক্ষণ ধরে সদাপ্রভুর কাছে যখন প্রার্থনা করছিলেন তখন এলি তাঁর মুখের দিকে লক্ষ্য করছিলেন।

13. হান্না মনে মনে প্রার্থনা করছিলেন বলে তাঁর ঠোঁট নড়ছিল কিন্তু গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল না। সেইজন্য এলি ভাবলেন স্ত্রীলোকটি মাতাল হয়েছে।

14. তিনি তাঁকে বললেন, “তুমি মদ খেয়ে আর কতক্ষণ নিজেকে মাতাল করে রাখবে? মদ আর খেয়ো না।”

15. উত্তরে হান্না তাঁকে বললেন, “হে আমার প্রভু, তা নয়। আমি বড় দুঃখিনী; আমি আংগুর-রসও খাই নি, মদও খাই নি। আমি সদাপ্রভুর সামনে আমার অন্তর ঢেলে দিচ্ছিলাম।

16. আপনার এই দাসীকে আপনি একজন বাজে স্ত্রীলোক মনে করবেন না। গভীর দুশ্চিন্তা ও মনের কষ্টে আমি এতক্ষণ প্রার্থনা করছিলাম।”

17. তখন এলি বললেন, “তোমার মন শান্ত হোক। ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বরের কাছে তুমি যা চেয়েছ তা যেন তিনি তোমাকে দেন।”

18. হান্না বললেন, “এই দাসীর উপর আপনার দয়া থাকুক।” এই বলে তিনি চলে গেলেন এবং খাওয়া-দাওয়া করলেন। তাঁর মুখে আর দুঃখের ছায়া রইল না।

19. পরের দিন ভোরে তাঁরা ঘুম থেকে উঠে উপাসনা-ঘরে গিয়ে সদাপ্রভুর উপাসনা করলেন। তারপর তাঁরা রামায় তাঁদের নিজেদের বাড়ীতে ফিরে গেলেন। পরে ইল্‌কানা তাঁর স্ত্রী হান্নার সংগে মিলিত হলেন আর সদাপ্রভুও হান্নার দিকে মনোযোগ দিলেন।

20. তাতে হান্না গর্ভবতী হলেন এবং সময় হলে তাঁর একটি ছেলে হল। “আমি সদাপ্রভুর কাছ থেকে তাকে চেয়ে নিয়েছি,” এই বলে হান্না ছেলেটির নাম রাখলেন শমূয়েল।

শমূয়েলকে ঈশ্বরের উদ্দেশে দান

21. পরে ইল্‌কানা প্রতি বছরের মত আবার তাঁর পরিবারের সবাইকে নিয়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে পশু-উৎসর্গ ও মানত পূরণ করতে গেলেন,

22. কিন্তু হান্না গেলেন না। তিনি তাঁর স্বামীকে বললেন, “ছেলেটিকে বুকের দুধ ছাড়ানোর পর আমি তাকে নিয়ে সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত হব যাতে সে সারা জীবন সেখানেই থাকতে পারে।”

23. তাঁর স্বামী ইল্‌কানা তাঁকে বললেন, “তোমার যা ভাল মনে হয় তা-ই কর। ছেলেটিকে দুধ না ছাড়ানো পর্যন্ত তুমি এখানে থাক। সদাপ্রভু যেন তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করেন।” কাজেই হান্না বাড়ীতেই রয়ে গেলেন এবং ছেলেটিকে দুধ না ছাড়ানো পর্যন্ত তার দেখাশোনা করতে থাকলেন।

24. ছেলেটিকে দুধ ছাড়ানোর পর হান্না তিনটা ষাঁড়, আঠারো কেজি ময়দা, চামড়ার থলিতে করে এক থলি আংগুর-রস এবং ছেলেটিকে সংগে নিয়ে শীলোতে সদাপ্রভুর ঘরে গেলেন। ছেলেটি তখনও ছোট ছিল।

25. তাঁরা সেখানে একটা ষাঁড় কেটে উৎসর্গ করলেন এবং ছেলেটিকে এলির কাছে নিয়ে গেলেন।

26. হান্না বললেন, “হে আমার প্রভু, আপনাকে সাক্ষী রেখে আমি শপথ করে বলছি, আমিই সেই স্ত্রীলোক, যে এখানে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করেছিল।

27. আমি এই ছেলেটিকে চেয়েই প্রার্থনা করেছিলাম, আর সদাপ্রভুর কাছে যা চেয়েছিলাম তা তিনি আমাকে দিয়েছেন।

28. সেইজন্য ছেলেটিকে আমিও সদাপ্রভুকে দিলাম। সে যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন সদাপ্রভুরই থাকবে।” পরে তাঁরা সেখানে মাথা নীচু করে সদাপ্রভুর উদ্দেশে তাঁদের ভক্তি জানালেন।