অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12
  13. 13
  14. 14
  15. 15
  16. 16
  17. 17
  18. 18
  19. 19
  20. 20
  21. 21
  22. 22

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

১ রাজাবলি 7 পবিত্র বাইবেল (SBCL)

শলোমন রাজবাড়ী তৈরী করলেন

1. রাজবাড়ীটা তৈরী করতে শলোমনের তেরো বছর লেগেছিল।

2. রাজবাড়ীতে তিনি লেবানন-বন-কুটির নামে একটা ঘর তৈরী করেছিলেন। এই ঘরটা একশো হাত লম্বা, পঞ্চাশ হাত চওড়া ও ত্রিশ হাত উঁচু ছিল। এরস কাঠের চার সারি থামের উপর এরস কাঠের ছেঁটে নেওয়া বীমগুলো বসানো ছিল।

3. থামের উপর বসানো বীমগুলোর উপরে এরস কাঠ দিয়ে ছাদ দেওয়া হল; এক এক সারিতে পনেরোটা করে পঁয়তাল্লিশটা বীম ছিল।

4. ঘরের চারপাশের দেয়ালে মুখোমুখি তিন সারি জানলা দেওয়া হল।

5. সমস্ত দরজার ফ্রেমগুলো ছিল চৌকোণা; জানলাগুলো তিন সারিতে মুখোমুখি করে তৈরী করা হয়েছিল।

6. তারপর তিনি থাম-কুটির নামে একটা ঘর তৈরী করলেন। সেটা লম্বায় ছিল পঞ্চাশ হাত আর চওড়ায় ত্রিশ হাত। তার সামনে ছিল একটা ছাদ-দেওয়া বারান্দা, আর সেই ছাদ কতগুলো থামের উপর বসানো ছিল। সেই থামগুলোর সামনে ছাদের নীচে একটা বীম ছিল।

7. বিচার-কুটির নামে তিনি একটা ঘর তৈরী করলেন; সেখানে তাঁর সিংহাসন ছিল। বিচার করবার জন্য এই ঘরটা তৈরী করা হল। ঘরের দেয়াল নীচ থেকে উপর পর্যন্ত তিনি এরস কাঠ দিয়ে ঢেকে দিলেন।

8. যে ঘরে তিনি বাস করবেন সেটা বিচার-কুটিরের পিছনে একই নমুনায় তৈরী করা হল। ফরৌণের যে মেয়েকে তিনি বিয়ে করেছিলেন তাঁর জন্য সেই রকম করেই আর একটা ঘর তৈরী করলেন।

9. রাজবাড়ীর বড় উঠান এবং সমস্ত দালানগুলোর ভিত্তি থেকে ছাদের কার্ণিশ পর্যন্ত সবই ঠিক মাপে কাটা দামী পাথর দিয়ে তৈরী করা হয়েছিল। সেই পাথরগুলো করাত দিয়ে সমান করে কেটে নেওয়া হয়েছিল।

10. দালানগুলোর ভিত্তি গাঁথা হয়েছিল বড় বড় দামী পাথর দিয়ে। সেগুলোর কোন কোনটা ছিল দশ হাত আবার কোন কোনটা আট হাত।

11. ভিত্তির পাথরগুলোর উপর ছিল ঠিক মাপে কাটা দামী পাথর ও এরস কাঠ।

12. বারান্দা সুদ্ধ সদাপ্রভুর ঘরের ভিতরের উঠানের মতই রাজবাড়ীর বড় উঠানের চারপাশের দেয়াল সুন্দর করে কাটা তিন সারি পাথর ও এরস গাছের এক সারি মোটা কাঠ দিয়ে তৈরী করা হয়েছিল।

উপাসনা-ঘরের আসবাবপত্র ও সাজসজ্জা

13. রাজা শলোমন সোরে লোক পাঠিয়ে হীরামকে আনালেন।

14. তাঁর মা ছিলেন বিধবা এবং নপ্তালি-গোষ্ঠীর মেয়ে। তাঁর বাবা ছিলেন সোরের লোক। হীরম ব্রোঞ্জের কারিগর ছিলেন। হীরাম ব্রোঞ্জের সমস্ত রকম কাজ জানতেন এবং সেই কাজে তিনি খুব পাকা ছিলেন। তিনি রাজা শলোমনের কাছে আসলেন এবং তাঁকে যে সব কাজ দেওয়া হল তা করলেন।

15. হীরাম ব্রোঞ্জের দু’টা থাম তৈরী করলেন। তার প্রত্যেকটা লম্বায় ছিল আঠারো হাত আর বেড়ে বারো হাত।

16. সেই দু’টা থামের উপরে দেবার জন্য তিনি ব্রোঞ্জ ছাঁচে ফেলে দু’টা মাথা তৈরী করলেন। মাথা দু’টার প্রত্যেকটা পাঁচ হাত করে উঁচু ছিল।

17-18. প্রত্যেকটা থামের মাথার জন্য তিনি ব্রোঞ্জের কারুকাজ করা পাকানো সাতটা শিকল আর দুই সারি ব্রোঞ্জের ডালিম ফল তৈরী করলেন।

19. থামের উপরকার মাথা দু’টার উপরের চার হাত ছিল লিলি ফুলের আকারের।

20. মাথার নীচের অংশটা গোলাকার ছিল। সেই গোলাকার অংশের চারপাশে শিকলগুলো লাগানো ছিল। প্রত্যেকটি মাথার চারপাশে শিকলের সংগে সারি সারি করে ব্রোঞ্জের দু’শো ডালিম ফল লাগানো ছিল।

21. হীরাম সেই দু’টা ব্রোঞ্জের থাম উপাসনা-ঘরের বারান্দায় স্থাপন করলেন। দক্ষিণ দিকে যেটা রাখলেন তার নাম দেওয়া হল যাখীন (যার মানে “যিনি স্থাপন করেন”) এবং উত্তর দিকে যেটা রাখলেন তার নাম দেওয়া হল বোয়স (যার মানে “তাঁর মধ্যেই শক্তি”)।

22. লিলি ফুলের আকারের ব্রোঞ্জের মাথা দু’টা সেই থাম দু’টার উপরে বসানো ছিল। এইভাবে সেই থাম তৈরীর কাজ শেষ করা হল।

23. তারপর হীরাম ব্রোঞ্জ ছাঁচে ঢেলে জল রাখবার জন্য একটা গোল বিরাট পাত্র তৈরী করলেন। পাত্রটার এক দিক থেকে সোজাসুজি অন্য দিকের মাপ ছিল দশ হাত, গভীরতা পাঁচ হাত এবং বেড়ের চারপাশের মাপ ত্রিশ হাত।

24. পাত্রটার মুখের বাইরের কিনারার নীচে প্রতি হাত জায়গায় দশটা করে দুই সারি ব্রোঞ্জের লতানো গাছের ফল ছিল। যে ছাঁচের মধ্যে পাত্রটা তৈরী করা হয়েছিল সেই ছাঁচের মধ্যেই ফলগুলোর আকার ছিল বলে সবটা মিলে একটা জিনিসই হল।

25. পাত্রটা বারোটা ব্রোঞ্জের গরুর পিঠের উপর বসানো ছিল। সেগুলোর তিনটা উত্তরমুখী, তিনটা পশ্চিমমুখী, তিনটা দক্ষিণমুখী ও তিনটা পূর্বমূখী ছিল এবং তাদের পিছনগুলো ছিল ভিতরের দিকে।

26. পাত্রটা ছিল চার আংগুল পুরু। তার মুখটা একটা বাটির মুখের মত ছিল এবং লিলি ফুলের পাপড়ির মত বাইরের দিকে উল্টানো ছিল। তাতে চুয়াল্লিশ হাজার লিটার জল ধরত।

27. হীরাম ব্রোঞ্জের দশটা বাক্সের মত জিনিস তৈরী করলেন। সেগুলোর প্রত্যেকটা চার হাত লম্বা, চার হাত চওড়া ও তিন হাত উঁচু ছিল।

28. বাক্সের চারপাশের ব্রোঞ্জের পাত ফ্রেমের মধ্যে বসানো ছিল।

29. সেই পাতগুলোর উপরে সিংহ, গরু ও করূবের মূর্তি ছিল এবং সিংহ ও গরুর নীচে ফুলের মত নক্‌শা করা ছিল। বাক্সের উপরের ফ্রেমের সংগে লাগানো একটা গামলা বসাবার আসন ছিল।

30. প্রত্যেকটা বাক্সে ব্রোঞ্জের ধুরা সুদ্ধ ব্রোঞ্জের চারটা চাকা ছিল। গামলা বসাবার জন্য চার কোণায় ব্রোঞ্জের চারটা ঠেক্‌না ছিল। সেগুলোতেও ফুলের মত নক্‌শা করা ছিল।

31. গামলা বসাবার আসনের মধ্যে একটা গোলাকার ফাঁকা জায়গা ছিল। সেই ফাঁকা জায়গাটার এক দিক থেকে সোজাসুজি অন্য দিকের মাপ হল দেড় হাত। সেই ফাঁকা জায়গার চারদিকে খোদাই করা কারুকাজ ছিল। গামলাটা সেই ফাঁকা জায়গার মধ্যে বসানো হলে পর আসন থেকে গামলাটার উচ্চতা হল এক হাত। বাক্সের পাতগুলো গোল ছিল না, চৌকো ছিল।

32. পাতগুলোর নীচে চারটা চাকা ছিল আর চাকার ধুরাগুলো বাক্সের সংগে লাগানো ছিল। প্রত্যেকটা চাকা দেড় হাত উঁচু ছিল।

33. চাকাগুলো রথের চাকার মত ছিল; ধুরা, চাকার বেড়, শিক ও মধ্যের নাভি সবই ছাঁচে ঢালাই করা ছিল।

34. প্রত্যেকটা বাক্সের চার কোণায় চারটা ঠেক্‌না লাগানো ছিল।

35. বাক্সের উপরে ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরী আধ হাত উঁচু একটা গোলাকার জিনিস ছিল।

36. সেই গোলাকার জিনিসের বাইরের দিকে ভাগে ভাগে করূব, সিংহ ও খেজুর গাছ খোদাই করা হয়েছিল। প্রতিটি ভাগের ফাঁকে ঠেক্‌না ছিল, আর সেই ঠেক্‌নার উপরে তৈরী করা ছিল ফুলের মত নক্‌শা। এই গোলাকার জিনিসটা বাক্সের সংগেই তৈরী করা হয়েছিল।

37. এইভাবেই তিনি দশটা বাক্স তৈরী করলেন। সেগুলো একই ছাঁচে ঢালা হয়েছিল এবং আয়তন ও আকারে একই রকম ছিল।

38. তিনি প্রত্যেকটা বাক্সের জন্য একটা করে ব্রোঞ্জের দশটা গামলা তৈরী করলেন। প্রত্যেকটা গামলার বেড় ছিল চার হাত এবং তাতে আটশো আশি লিটার জল ধরত।

39. তিনি উপাসনা-ঘরের দক্ষিণ দিকে পাঁচটা এবং উত্তর দিকে পাঁচটা বাক্স রাখলেন; আর দক্ষিণ-পূর্ব কোণায় রাখলেন সেই বিরাট পাত্রটা।

40. এছাড়া তিনি অন্যান্য পাত্র, হাতা ও বাটি তৈরী করলেন।এইভাবে রাজা শলোমনের জন্য হীরাম সদাপ্রভুর ঘরের যে যে কাজ আরম্ভ করেছিলেন তা শেষ করলেন। সেগুলো হল:

41. দু’টা থাম, থামের উপরকার গোলাকার দু’টা মাথা, সেই মাথার উপরটা সাজাবার জন্য দুই সারি কারুকাজ করা পাকানো শিকল;

42. সেই শিকলগুলোর জন্য চারশো ডালিম- থামের উপরকার মাথার গোলাকার অংশটা সাজাবার জন্য প্রত্যেক সারি শিকলের জন্য দুই সারি ডালিম;

43. দশটা বাক্স ও দশটা গামলা;

44. বিরাট পাত্র ও তার নীচের বারোটা গরু;

45. পাত্র, হাতা ও বাটি।হীরাম যে সব জিনিস রাজা শলোমনের নির্দেশে সদাপ্রভুর ঘরের জন্য তৈরী করেছিলেন সেগুলো ছিল চক্‌চকে ব্রোঞ্জের।

46. যর্দনের সমভূমিতে সুক্কোৎ ও সর্তনের মাঝামাঝি এক জায়গায় রাজা এই সব জিনিস মাটির ছাঁচে ফেলে তৈরী করিয়েছিলেন।

47. জিনিসগুলোর সংখ্যা এত বেশী ছিল যে, শলোমন সেগুলো ওজন করেন নি; সেইজন্য ব্রোঞ্জের পরিমাণ জানা যায় নি।

48. সদাপ্রভুর ঘরের যে সব জিনিসপত্র শলোমন তৈরী করিয়েছিলেন সেগুলো হল: সোনার বেদী, সম্মুখ-রুটি রাখবার সোনার টেবিল;

49. খাঁটি সোনার বাতিদান- সেগুলো ছিল মহাপবিত্র স্থানের সামনে, ডানে পাঁচটা ও বাঁয়ে পাঁচটা; সোনার ফুল, বাতি এবং চিম্‌টা;

50. খাঁটি সোনার পেয়ালা, সল্‌তে পরিষ্কার করবার চিম্‌টা, বাটি, হাতা ও আগুন রাখবার পাত্র; ভিতরের কামরার, অর্থাৎ মহাপবিত্র স্থানের দরজার জন্য এবং উপাসনা-ঘরের প্রধান কামরার দরজার জন্য সোনার কব্‌জা।

51. এইভাবে রাজা শলোমন সদাপ্রভুর ঘরের সমস্ত কাজ শেষ করলেন। তারপর তিনি তাঁর বাবা দায়ূদ যে সব জিনিস সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রেখেছিলেন সেগুলো নিয়ে আসলেন। সেগুলো ছিল সোনা, রূপা এবং বিভিন্ন পাত্র। সেগুলো তিনি সদাপ্রভুর ঘরের ধনভাণ্ডারে রেখে দিলেন।