অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

রূত 1 পবিত্র বাইবেল (SBCL)

নয়মী ও রূত

1. শাসনকর্তাদের শাসনকালে ইস্রায়েলীয়দের দেশে একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। তখন যিহূদা দেশের বৈৎলেহম গ্রামের একজন লোক তার স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে কিছুকালের জন্য মোয়াব দেশে বাস করতে গিয়েছিল।

2. লোকটির নাম ছিল ইলীমেলক। তার স্ত্রীর নাম নয়মী আর দুই ছেলের নাম মহলোন ও কিলিয়োন। তারা ছিল যিহূদা দেশের বৈৎলেহমের ইফ্রাথীয় লোক। তারা মোয়াব দেশে গিয়ে সেখানেই রয়ে গেল।

3. পরে নয়মীর স্বামী ইলীমেলক মারা গেল, আর তাতে বাকী রইল কেবল নয়মী ও তার দুই ছেলে।

4-5. নয়মীর ছেলেরা মোয়াব দেশের মেয়ে বিয়ে করল। সেই মেয়েদের একজনের নাম ছিল অর্পা ও অন্যজনের নাম রূত। মহলোন ও কিলিয়োন মোয়াব দেশে দশ বছর বাস করবার পর মারা গেল। দুই ছেলে ও স্বামীকে হারিয়ে নয়মী একাই রয়ে গেল।

6. মোয়াব দেশে থাকতেই নয়মী শুনতে পেয়েছিল যে, সদাপ্রভু তাঁর লোকদের খাবারের ব্যবস্থা করে তাদের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। তাই সে তার দুই ছেলের বৌদের নিয়ে মোয়াব দেশ থেকে বাড়ী ফিরে যাবার জন্য প্রস্তুত হল।

7. তারা যেখানে থাকত সেখান থেকে দুই ছেলের বৌকে নিয়ে সে বের হল এবং যিহূদা দেশে ফিরে যাবার পথ ধরে চলতে লাগল।

8. পরে নয়মী তার দুই ছেলের বৌকে বলল, “তোমরা নিজের নিজের মায়ের ঘরে ফিরে যাও। তোমরা যেমন তোমাদের মৃত স্বামী এবং আমার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলে তেমনি সদাপ্রভুও যেন তোমাদের প্রতি বিশ্বস্ত থাকেন।

9. সদাপ্রভু তোমাদের আশীর্বাদ করুন যেন তোমরা দু’জনেই আবার শান্তিতে স্বামীর ঘর করতে পার।”এই কথা বলে সে তাদের চুম্বন করল আর তারা জোরে জোরে কাঁদতে লাগল।

10. তারা বলল, “না, আমরা আপনার সংগে আপনার লোকদের কাছেই ফিরে যাব।”

11. নয়মী বলল, “না, মা, তোমরা বাড়ী ফিরে যাও। তোমরা কেন আমার সংগে যাবে? আমার গর্ভে কি আর ছেলে হওয়ার আশা আছে যারা তোমাদের স্বামী হতে পারবে?

12. মা, তোমরা বাড়ী ফিরে যাও। বিয়ে করবার বয়স আর আমার নেই। ধর, ছেলে হওয়ার আশা আছে মনে করে যদি আজ রাতেই আমি আমার স্বামীর কাছে যাই এবং আমার ছেলে হয়ও,

13. তবে তারা বড় হওয়া পর্যন্ত কি তোমরা অপেক্ষা করবে? তাদের জন্য কি তোমরা বিয়ে না করে থাকবে? না, মা, না। তোমাদের চেয়ে আমার জীবন আরও অনেক তেতো, কারণ সদাপ্রভু আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন।”

14. এই কথা শুনে তারা আবার জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। তারপর অর্পা তার শাশুড়ীকে চুম্বন করে বিদায় নিল কিন্তু রূত তাকে ছেড়ে গেল না।

15. তখন নয়মী বলল, “দেখ, তোমার জা তার নিজের লোকদের ও তার দেবতার কাছে ফিরে যাচ্ছে। তুমিও তার সাথে যাও।”

16. কিন্তু রূত বলল, “আপনাকে ছেড়ে চলে যাবার জন্য আপনি আমাকে জোর করবেন না, কিম্বা আপনার সংগে যেতে আমাকে বারণ করবেন না। আপনি যেখানে যাবেন আমিও সেখানে যাব আর আপনি যেখানে থাকবেন আমিও সেখানে থাকব। আপনার লোকেরাই হবে আমার লোক আর আপনার ঈশ্বরই হবেন আমার ঈশ্বর।

17. আপনি যেখানে মরবেন আমিও সেখানে মরব আর সেখানেই যেন আমার কবর হয়। এক মৃত্যু ছাড়া আর অন্য কিছু যদি আমাদের আলাদা করে তবে সদাপ্রভু যেন আমাকে শাস্তি দেন এবং তা ভীষণভাবেই দেন।”

18. নয়মী যখন বুঝতে পারল যে, রূত তার সংগে যাবার জন্য মন স্থির করে ফেলেছে তখন সে তাকে আর কিছু বলল না।

19. এর পর সেই দু’জন চলতে লাগল এবং শেষে বৈৎলেহমে গিয়ে উপস্থিত হল। তারা বৈৎলেহমে উপস্থিত হলে পর সমস্ত গ্রামে একটা সাড়া পড়ে গেল। গ্রামের স্ত্রীলোকেরা বলল, “এ-ই কি সেই নয়মী?”

20. নয়মী বলল, “আমাকে নয়মী (যার মানে ‘হাসি-খুশী’) বলে আর ডেকো না, বরং মারা (যার মানে ‘তেতো’) বলে ডাক, কারণ সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমার জীবনকে তেতো করে দিয়েছেন।

21. আমি ভরা হাতে গিয়েছিলাম কিন্তু সদাপ্রভু আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে এনেছেন। সদাপ্রভু যখন আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছেন এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যখন আমাকে কষ্টে ফেলেছেন তখন তোমরা আমাকে কেন আর নয়মী বলে ডাকছ?”

22. এইভাবে নয়মী তার ছেলের বৌ মোয়াবীয় রূতকে সংগে নিয়ে মোয়াব দেশ থেকে ফিরে আসল। যব কাটবার সময় শুরু হতেই তারা বৈৎলেহমে এসে পৌঁছেছিল।