অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12
  13. 13
  14. 14
  15. 15
  16. 16

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

মার্ক 6 কিতাবুল মোকাদ্দস (BACIB)

নিজের নগরের লোকেরা ঈসা মসীহ্‌কে অগ্রাহ্য করে

1. পরে তিনি সেখান থেকে প্রস্থান করে নিজের নগরে আসলেন এবং তাঁর সাহাবীরাও তাঁর পিছনে পিছনে চললেন।

2. বিশ্রামবার উপস্থিত হলে তিনি মজলিস-খানায় উপদেশ দিতে লাগলেন; তাতে অনেক লোক তাঁর কথা শুনে চমৎকৃত হয়ে বললো, এই লোক কোথা থেকে এসব পেয়েছে? একে যে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে এবং এর মধ্য দিয়ে যে এরকম কুদরতি-কাজগুলো সম্পন্ন হয়, এই বা কি?

3. এ কি সেই ছুতার মিস্ত্রি, মরিয়মের সেই পুত্র নয়? ইয়াকুব, যোষি, এহুদা ও শিমোনের ভাই নয়? এর বোনেরা কি এখানে আমাদের মধ্যে নেই? এভাবে তারা তাঁর বিষয়ে মনে বাধা পেতে লাগল।

4. তখন ঈসা তাদেরকে বললেন, নিজের দেশ ও আত্মীয় স্বজন এবং নিজের বাড়ি ছাড়া আর কোথাও নবীরা অসম্মানিত হন না।

5. তখন তিনি সেই স্থানে আর কোন কুদরতি-কাজ করতে পারলেন না, কেবল কয়েক জন রোগগ্রস্ত লোকের উপরে হাত রেখে তাদেরকে সুস্থ করলেন।

6. আর তিনি তাদের ঈমান না আনার দরুন আশ্চর্য জ্ঞান করলেন।পরে তিনি চারদিকে গ্রামে গ্রামে ভ্রমণ করে উপদেশ দিলেন।

বারো জন সাহাবীকে তবলিগে প্রেরণ

7. আর তিনি সেই বারো জনকে ডেকে দু’জন দু’জন করে তাঁদেরকে প্রেরণ করতে আরম্ভ করলেন এবং তাদেরকে নাপাক-রূহ্‌দের উপরে ক্ষমতা দান করলেন।

8. তিনি তাদের হুকুম করলেন, তোমরা যাত্রার জন্য একটি করে লাঠি ছাড়া আর কিছু নিও না, রুটিও না, ঝুলিও না, থলিতে পয়সাও না;

9. কিন্তু পায়ে জুতা দাও, আর দু’টো জামা গায়ে দিও না।

10. তিনি তাদেরকে আরও বললেন, তোমরা যে কোন স্থানে যে বাড়িতে প্রবেশ করবে, সেই স্থান থেকে প্রস্থান করা পর্যন্ত সেই গৃহেই থেকো।

11. আর যদি কোন স্থানের লোকেরা তোমাদেরকে গ্রহণ না করে এবং তোমাদের কথাও না শুনে, তবে সেখান থেকে প্রস্থান করার সময় তাদের উদ্দেশে সাক্ষ্যের জন্য নিজ নিজ পায়ের ধূলা ঝেড়ে ফেলো।

12. পরে তাঁরা প্রস্থান করে তবলিগ করতে লাগলেন যেন, লোকেরা তওবা করে।

13. আর তাঁরা অনেক বদ-রূহ্‌ ছাড়ালেন ও অনেক অসুস্থ লোকের মাথায় তেল দিয়ে তাদেরকে সুস্থ করলেন।

হযরত ইয়াহিয়ার শাহাদাত বরণ

14. আর বাদশাহ্‌ হেরোদ তাঁর কথা শুনতে পেলেন, কেননা তাঁর নাম প্রসিদ্ধ হয়েছিল। তখন তিনি বললেন, বাপ্তিস্মদাতা ইয়াহিয়া মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন, আর সেজন্য পরাক্রমগুলো তাঁতে কাজ করে চলেছে।

15. কিন্তু কেউ কেউ বললো, উনি ইলিয়াস এবং কেউ কেউ বললো, উনি এক জন নবী, নবীদের মধ্যে কোন এক জনের মত।

16. কিন্তু হেরোদ তাঁর কথা শুনে বললেন, আমি যে ইয়াহিয়ার মাথা কেটে ফেলেছি, তিনিই জীবিত হয়ে উঠেছেন।

17. কারণ হেরোদ আপন ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়ার জন্য নিজেই লোক পাঠিয়ে ইয়াহিয়াকে ধরে কারাগারে বন্দী করেছিলেন, কেননা তিনি হেরোদিয়াকে বিয়ে করেছিলেন।

18. কারণ ইয়াহিয়া হেরোদকে বলেছিলেন, ভাইয়ের স্ত্রীকে রাখা আপনার উচিত নয়।

19. আর হেরোদিয়া তাঁর প্রতি ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিল, কিন্তু তা সম্ভব হয়ে উঠে নি,

20. কারণ হেরোদ ইয়াহিয়াকে ধার্মিক ও পবিত্র লোক জেনে ভয় করতেন ও তাঁকে রক্ষা করতেন। আর তাঁর কথা শুনে তিনি ভীষণ অস্বস্তি বোধ করলেও তাঁর কথা শুনতে ভাল-বাসতেন।

21. পরে এক সুবিধার দিন উপস্থিত হল, যখন হেরোদ তাঁর জন্মদিনে তাঁর বড় বড় রাজ-কর্মচারীদের, সেনাপতিদের এবং গালীলের প্রধান লোকদের জন্য এক রাতে ভোজ প্রস্তুত করলেন;

22. আর হেরোদিয়ার কন্যা ভিতরে এসে ও নেচে হেরোদ এবং যাঁরা তাঁর সঙ্গে ভোজে বসেছিলেন, তাঁদের সন্তুষ্ট করলো। তাতে বাদশাহ্‌ সেই কন্যাকে বললেন, তোমার যা ইচ্ছা হয়, আমার কাছে চাও, আমি তোমাকে দেব।

23. আর তিনি শপথ করে তাকে বললেন, অর্ধেক রাজ্য পর্যন্ত হোক, আমার কাছে যা চাইবে, তা-ই তোমাকে দেব।

24. তাতে সে বাইরে গিয়ে তার মাকে জিজ্ঞাসা করলো, কি চাইব? সে বললো, বাপ্তিস্মদাতা ইয়াহিয়ার মাথা।

25. সে তৎক্ষণাৎ বাদশাহ্‌র কাছে এসে তা চাইল, বললো, আমি ইচ্ছা করি যে, আপনি এখনই বাপ্তিস্মদাতা ইয়াহিয়ার মাথা থালায় করে আমাকে দিন।

26. তখন বাদশাহ্‌ অতিশয় দুঃখিত হলেও তাঁর শপথের জন্য এবং যারা ভোজে বসেছিল, তাদের ভয়ে, তাকে ফিরিয়ে দিতে চাইলেন না।

27. আর বাদশাহ্‌ তৎক্ষণাৎ এক জন সেনাকে পাঠিয়ে ইয়াহিয়ার মাথা আনতে হুকুম করলেন; সে কারাগারে গিয়ে তাঁর মাথা কেটে ফেললো,

28. পরে তাঁর মাথা থালায় করে এনে সেই কন্যাকে দিলে পর সে তা নিয়ে গিয়ে তার মাকে দিল।

29. এই সংবাদ পেয়ে তাঁর সাহা— বীরা এসে তাঁর লাশ নিয়ে গিয়ে দাফন করলো।

ঈসা মসীহ্‌ পাঁচ হাজার লোককে খাবার দেন

30. পরে প্রেরিতেরা ঈসার কাছে এসে একত্র হলেন; আর তাঁরা যা কিছু করেছিলেন ও যা কিছু শিক্ষা দিয়েছিলেন সমস্তই তাঁকে জানালেন।

31. তিনি তাঁদেরকে বললেন, তোমরা বিরলে একটি নির্জন স্থানে এসে কিছু কাল বিশ্রাম কর। কারণ অনেক লোক আসা যাওয়া করছিল, তাই তাঁদের আহার করবারও অবকাশ ছিল না।

32. পরে তাঁরা নৌকাযোগে বিরলে একটি নির্জন স্থানে যাত্রা করলেন।

33. কিন্তু লোকে তাঁদেরকে যেতে দেখলো এবং অনেকে তাঁদেরকে চিনতে পারল, তাই সব নগর থেকে দৌড়ে তাঁদের আগেই সেখানে উপস্থিত হল।

34. তখন ঈসা বের হয়ে অনেক লোক দেখে তাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হলেন, কেননা তারা পালক-বিহীন ভেড়ার পালের মত ছিল; আর তিনি তাদেরকে অনেক বিষয় শিক্ষা দিতে লাগলেন।

35. পরে দিবা প্রায় অবসান হলে তাঁর সাহাবীরা কাছে এসে তাঁকে বললেন, এটি নির্জন স্থান এবং বেলাও প্রায় শেষ হয়ে গেছে;

36. এদেরকে বিদায় করুন, যেন এরা চারদিকে পাড়ায় পাড়ায় ও গ্রামে গ্রামে গিয়ে নিজেদের জন্য খাদ্যদ্রব্য কিনতে পারে।

37. কিন্তু জবাবে তিনি তাঁদেরকে বললেন, তোমরাই ওদেরকে আহার দাও। তাঁরা বললেন, আমরা গিয়ে কি দুই শত সিকির রুটি কিনে নিয়ে ওদেরকে খেতে দেব?

38. তিনি তাঁদেরকে বললেন, তোমাদের কাছে কয়খানা রুটি আছে? গিয়ে দেখ। তাঁরা দেখে বললেন, পাঁচখানি রুটি এবং দু’টি মাছ আছে।

39. তখন তিনি সকলকে সবুজ ঘাসের উপরে দলে দলে বসিয়ে দিতে হুকুম করলেন।

40. তারা এক শত এক শত করে ও পঞ্চাশ পঞ্চাশ জন করে সারি সারি বসে গেল।

41. পরে তিনি সেই পাঁচখানি রুটি ও দু’টি মাছ নিয়ে আসমানের দিকে চোখ তুলে দোয়া করলেন এবং সেই রুটি কয়খানি ভেঙ্গে লোকদের সম্মুখে রাখার জন্য সাহাবীদেরকে দিতে লাগলেন; আর সেই দু’টি মাছও সকলকে ভাগ করে দিলেন।

42. তাতে সকলে আহার করে তৃপ্ত হল।

43. পরে তাঁরা গুঁড়াগাঁড়ায় ভরা বারো ডালা এবং মাছও কিছু তুলে নিলেন।

44. যারা সেই রুটি ভোজন করেছিল, তাদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই ছিল পাঁচ হাজার।

ঈসা মসীহ্‌ পানির উপর হেঁটে যান

45. পরে তিনি তৎক্ষণাৎ সাহাবীদেরকে দৃঢ় করে বলে দিলেন, যেন তাঁরা নৌকায় উঠে তাঁর আগে অন্য পারে বৈৎসৈদার দিকে যান, আর ইতোমধ্যে তিনি লোকদেরকে বিদায় দিলেন।

46. লোকদেরকে বিদায় করে তিনি মুনাজাত করার জন্য পর্বতে চলে গেলেন।

47. যখন সন্ধ্যা হল, তখন নৌকাখানি সমুদ্রের মাঝখানে ছিল এবং তিনি স্থলে ছিলেন।

48. পরে সম্মুখ বাতাসের দরুন তাঁদের নৌকা বাইতে কষ্ট হচ্ছে দেখে, তিনি প্রায় রাতের চতুর্থ প্রহরে সমুদ্রের উপর দিয়ে হেঁটে তাঁদের কাছে আসলেন এবং তাদেরকে ছাড়িয়ে যেতে উদ্যত হলেন।

49. কিন্তু সমুদ্রের উপর দিয়ে তাঁকে হাঁটতে দেখে তাঁরা তাঁকে ভূত মনে করলেন, আর চেঁচিয়ে উঠলেন;

50. কারণ সকলেই তাঁকে দেখেছিলেন ও ভীষণ ভয় পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তৎক্ষণাৎ তাঁদের সঙ্গে কথা বললেন, তাঁদেরকে বললেন, সাহস কর, এই আমি, ভয় করো না।

51. পরে তিনি তাঁদের কাছে নৌকায় উঠলেন, আর বাতাস থেমে গেল; তাতে তাঁরা ভীষণ আশ্চর্য হলেন।

52. কেননা রুটির বিষয়ে তাঁরা বুঝতে পারেন নি, তাঁদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে পড়েছিল।

গিনেষরৎ এলাকায় অনেককে সুস্থ করা

53. পরে তাঁরা পার হয়ে স্থলে, গিনেষরৎ প্রদেশে, এসে নৌকা লাগালেন।

54. আর নৌকা থেকে বের হলে লোকেরা তৎক্ষণাৎ তাঁকে চিনতে পারল;

55. তারা সমুদয় অঞ্চলে চারদিকে দৌড়াতে লাগল, আর অসুস্থ লোকদেরকে খাটের উপরে করে তিনি যে কোন স্থানে আছেন তা জেনে সেই স্থানে আনতে লাগল।

56. আর গ্রামে, বা নগরে, বা পাড়ায়, যে কোন স্থানে তিনি প্রবেশ করলেন, সেই স্থানে তারা অসুস্থদেরকে বাজারে নিয়ে আসল এবং তাঁকে ফরিয়াদ করলো, যেন ওরা তাঁর কাপড়ের প্রান্তভাগটুকু স্পর্শ করতে পারে, আর যত লোক তাঁকে স্পর্শ করলো সকলেই সুস্থ হল।