অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12
  13. 13
  14. 14
  15. 15
  16. 16
  17. 17
  18. 18
  19. 19
  20. 20
  21. 21
  22. 22
  23. 23
  24. 24

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

২ শামুয়েল 18 কিতাবুল মোকাদ্দস (BACIB)

অবশালোমের পরাজয় ও মৃত্যু

1. পরে দাউদ তাঁর সঙ্গী লোকদের গণনা করে তাদের উপরে সহস্র্রপতি ও শতপতিদের নিযুক্ত করলেন।

2. আর দাউদ যোয়াবের হাতে লোকদের এক তৃতীয়াংশ ও যোয়াবের ভাই সরূয়ার পুত্র অবীশয়ের হাতে এক তৃতীয়াংশ এবং গাতীয় ইত্তয়ের হাতে এক তৃতীয়াংশের ভার দিয়ে প্রেরণ করলেন। আর বাদশাহ্‌ লোকদের বললেন, আমিও তোমাদের সঙ্গে যাব।

3. কিন্তু লোকেরা বললো, আপনি যাবেন না; কেননা যদি আমরা পালিয়ে যাই, তবে আমাদের বিষয়ে তারা কিছু মনে করবে না, আমাদের অর্ধেক লোক মরলেও আমাদের বিষয় কিছু মনে করবে না; কিন্তু আপনি আমাদের দশ হাজারের সমান; অতএব নগর থেকে আমাদের সাহায্য করার জন্য আপনি প্রস্তুত থাকলে ভাল হয়।

4. তখন বাদশাহ্‌ তাদের বললেন, তোমরা যা ভাল বোঝ, আমি তা-ই করবো। পরে বাদশাহ্‌ নগর-দ্বারের পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন এবং সমস্ত লোক শত শত ও হাজার হাজার হয়ে বের হয়ে গেল।

5. তখন বাদশাহ্‌ যোয়াব, অবীশয় ও ইত্তয়কে হুকুম দিয়ে বললেন, তোমরা আমার অনুরোধে সেই যুবকের প্রতি, অবশালোমের প্রতি, কোমল ব্যবহার করো। অবশালোমের বিষয়ে সমস্ত সেনাপতিকে বাদশাহ্‌র এই হুকুম দেবার সময়ে সমস্ত লোকই তা শুনতে পেল।

6. পরে সেসব লোক ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য রণক্ষেত্রে গেল; আফরাহীম অরণ্যে যুদ্ধ হল।

7. সেই স্থানে ইসরাইল লোকেরা দাউদের গোলামদের সম্মুখে আহত হল, আর সেদিন সেখানে মহাসংহার হল, বিশ হাজার লোকের মৃত্যু হল।

8. ফলত যুদ্ধ সেখানকার সমস্ত অঞ্চলে ব্যাপ্ত হল; এবং সেদিন তলোয়ার যত লোককে না গ্রাস করলো, অরণ্য তার চেয়ে বেশি লোককে গ্রাস করলো।

9. আর অবশালোম হঠাৎ দাউদের গোলামদের সম্মুখে পড়লো; অবশালোম তার খচ্চরে চড়েছিল, সেই খচ্চর সেখানকার বড় একটা এলা গাছের ডালের নিচে দিয়ে গমন করাতে সেই এলা গাছে অবশালোমের মাথা আটকে গেল; তাতে সে আসমানের ও দুনিয়ার মধ্যে ঝুলে রইলো এবং যে খচ্চরটি তার নিচে ছিল, সেটি প্রস্থান করলো।

10. আর এক জন লোক তা দেখে যোয়াবকে বললো, দেখুন, আমি দেখলাম, অবশালোম এলা গাছে ঝুলছে।

11. তখন যোয়াব সেই সংবাদদাতাকে বললেন, দেখ, তুমি তো দেখেছিলে, তবে কেন সেই স্থানে তাকে মেরে ভূমিতে ফেলে দিলে না? তা করলে আমি তোমাকে দশ শেকল রূপা ও একটি কটিবন্ধ দিতাম।

12. সেই ব্যক্তি যোয়াবকে বললো, আমি যদি হাজার শেকল রূপা হাতে পেতাম, তবুও রাজপুত্রের বিরুদ্ধে হাত বাড়াতাম না; কেননা আমাদেরই উপস্থিতিতে বাদশাহ্‌ আপনাকে, অবীশয় ও ইত্তয়কে এই হুকুম দিয়েছিলেন, তোমরা যে কেউ হও, সেই যুবক অবশালোমের বিষয়ে সাবধান থাকবে।

13. আর যদি আমি তাঁর প্রাণের বিরুদ্ধে বেঈমানী করতাম— বাদশাহ্‌ থেকে তো কোন বিষয় গুপ্ত থাকে না— আর তখন আপনিও আমার বিপক্ষ হতেন।

14. তখন যোয়াব বললেন, তোমার সম্মুখে আমার এরকম বিলম্ব করা অনুচিত। পরে তিনি হাতে তিনটি খোঁচা নিয়ে অবশালোমের বক্ষ বিদ্ধ করলেন; তখনও সে এলা গাছের মধ্যে জীবিত ছিল।

15. আর যোয়াবের অস্ত্রবাহক দশ জন যুবক অবশালোমকে বেষ্টন করলো ও আঘাত করে হত্যা করলো।

16. পরে যোয়াব তূরী বাজালেন, তাতে লোকেরা ইসরাইলের সৈন্যদের তাড়া করা বন্ধ করলো; কেননা যোয়াব লোকদের ফিরিয়ে রাখলেন।

17. আর তারা অবশালোমকে নিয়ে অরণ্যের একটি বড় গর্তে ফেলে দিয়ে তার উপরে পাথরের অতি প্রকাণ্ড একটি ঢিবি করলো। ইতোমধ্যে সমস্ত ইসরাইল নিজ নিজ তাঁবুতে পালিয়ে গেল।

18. বাদশাহ্‌র উপত্যকায় যে স্তম্ভ আছে, অবশালোম জীবনকালে তা নির্মাণ করিয়ে নিজের জন্য স্থাপন করেছিল, কেননা সে বলেছিল, আমার নাম রক্ষা করতে আমার কোন পুত্র নেই; এজন্য সে তার নাম অনুসারে ঐ স্তম্ভের নাম রেখেছিল; আজও তা অবশালোমের স্তম্ভ বলে বিখ্যাত হয়ে আছে।

বাদশাহ্‌ দাউদের কাছে অবশালোমের মৃত্যুর সংবাদ

19. পরে সাদোকের পুত্র অহীমাস বললো, আমি দৌড়ে গিয়ে, মাবুদ কিভাবে দুশমনদের হাত থেকে বাদশাহ্‌র বিচার নিষ্পত্তি করেছেন, এই সংবাদ বাদশাহ্‌কে দিই।

20. কিন্তু যোয়াব তাকে বললেন, আজ তুমি সংবাদবাহক হবে না, অন্যদিন সংবাদ দেবে; রাজপুত্রের মৃত্যু হয়েছে, এজন্য আজ তুমি সংবাদ দেবে না।

21. পরে যোয়াব কূশীয়কে বললেন, যাও, যা দেখলে, বাদশাহ্‌কে গিয়ে বল। তাতে কূশীয় যোয়াবকে উবুড় হয়ে সালাম জানিয়ে দৌড়ে চলে গেল।

22. পরে সাদোকের পুত্র অহীমাস আবার যোয়াবকে বললো, যা হয় হোক, আরজ করি, কুশীয়ের পিছনে আমাকেও দৌড়ে যেতে দিন। যোয়াব বললেন, বৎস, তুমি কেন দৌড়ে যাবে? তুমি তো এই সংবাদের জন্য পুরস্কার পাবে না?

23. সে বললো, যা হয় হোক, আমি দৌড়ে যাব। তাতে তিনি বললেন, যাও। তখন অহীমাস সমভূমির পথ দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে কূশীয়কে পিছনে ফেলে গেল।

24. সেই সময়ে দাউদ দুই নগর-দ্বারের মধ্যবর্তী স্থানে বসে ছিলেন। আর প্রহরী নগর-দ্বারের উপরিভাগে, প্রাচীরে উঠলো, আর চোখ তুলে নিরীক্ষণ করলো, আর দেখ, এক জন একা দৌড়ে আসছে।

25. তাতে প্রহরী উচ্চৈঃস্বরে বাদশাহ্‌কে তা জানালো; বাদশাহ্‌ বললেন, সে যদি একা হয়, তবে তার মুখে সংবাদ আছে। পরে সে আসতে আসতে নিকটবর্তী হল।

26. প্রহরী আর এক জনকে দৌড়ে আসতে দেখে উচ্চৈঃস্বরে দ্বারীকে বললো, দেখ, আর এক জন একা দৌড়ে আসছে। তখন বাদশাহ্‌ বললেন, সেও সংবাদ আনছে।

27. পরে প্রহরী বললো, প্রথম ব্যক্তির দৌড় সাদোকের পুত্র অহীমাসের দৌড় বলে মনে হয়। বাদশাহ্‌ বললেন, সে ভাল মানুষ, ভাল সংবাদ নিয়ে আসছে।

28. তখন অহীমাস উচ্চৈঃস্বরে বাদশাহ্‌কে বললো, মঙ্গল। পরে সে বাদশাহ্‌র সম্মুখে ভূমিতে উবুড় হয়ে পড়ে বললো, আপনার আল্লাহ্‌ মাবুদ ধন্য হোন, আমার মালিক বাদশাহ্‌র বিরুদ্ধে যে লোকেরা হাত তুলেছিল, তাদের তিনি আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন।

29. পরে বাদশাহ্‌ জিজ্ঞাসা করলেন, যুবক অবশালোমের কি মঙ্গল? অহীমাস বললো, যে সময়ে যোয়াব বাদশাহ্‌র গোলামকে, আপনার গোলাম আমাকে পাঠান, সেই সময়ে বড় লোকারণ্য দেখলাম, কিন্তু কি হয়েছিল তা জানি না।

30. বাদশাহ্‌ বললেন, এক পাশে যাও, এখানে দাঁড়াও; তাতে সে এক পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।

31. আর দেখ, কূশীয় এসে বললো, আমার মালিক বাদশাহ্‌র জন্য সংবাদ এনেছি; যারা আপনার বিরুদ্ধে উঠেছিল তাদের হাত থেকে মাবুদ আজ আপনার বিচার নিষ্পত্তি করেছেন।

32. বাদশাহ্‌ কূশীয়কে জিজ্ঞাসা করলেন, যুবক অবশালোমের কি মঙ্গল? কূশীয় বললো, আমার মালিক বাদশাহ্‌র দুশমনেরা ও যারা অমঙ্গলের জন্য আপনার বিরুদ্ধাচারণ করে, তারা সকলে সেই যুবকের মত হোক।

33. তখন বাদশাহ্‌ অধৈর্য হয়ে নগর-দ্বারের ছাদের উপরিস্থ কুঠরীতে উঠে কাঁদতে লাগলেন; এবং গমন করতে করতে বললেন, হায়! আমার পুত্র অবশালোম! আমার পুত্র, আমার পুত্র অবশালোম! কেন তোমার পরিবর্তে আমি মরি নি? হায় অবশালোম! আমার পুত্র! আমার পুত্র!