অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12
  13. 13
  14. 14
  15. 15
  16. 16
  17. 17
  18. 18
  19. 19
  20. 20
  21. 21
  22. 22
  23. 23
  24. 24
  25. 25
  26. 26
  27. 27
  28. 28
  29. 29
  30. 30
  31. 31

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

১ শামুয়েল 17 কিতাবুল মোকাদ্দস (BACIB)

হযরত দাউদ ও জালুত বীরের যুদ্ধ

1. পরে ফিলিস্তিনীরা যুদ্ধ করার জন্য সৈন্যসামন্ত সংগ্রহ করে এহুদা অধিকৃত সোখোতে জমায়েত হল এবং সোখো ও অসেকার মধ্যে এফস্‌দম্মীমে শিবির স্থাপন করলো।

2. আর তালুত ও ইসরাইল লোকেরা জমায়েত হয়ে এলা উপত্যকাতে শিবির স্থাপন করে ফিলিস্তিনীদের বিপক্ষে সৈন্য রচনা করলেন।

3. এভাবে ফিলিস্তিনীরা এক দিকে এক পর্বতে ও ইসরাইল অন্য দিকে অন্য পর্বতে দাঁড়াল; উভয়ের মধ্যে একটি উপত্যকা ছিল।

4. পরে গাৎ-নিবাসী এক বীর ফিলিস্তিনীদের শিবির থেকে বের হয়ে আসল। তার নাম ছিল জালুত এবং সে সাড়ে ছয় হাত লম্বা ছিল।

5. তার মাথায় ছিল ব্রোঞ্জের শিরস্ত্রাণ এবং সে আঁশের মত বর্মে সজ্জিত ছিল; সেই বর্ম ব্রোঞ্জের, তার পরিমাণ পাঁচ হাজার শেকল।

6. আর তার পা ব্রোঞ্জের বর্মে আবৃত ও তার কাঁধে ব্রোঞ্জের তলোয়ার ছিল।

7. তার বর্শার দণ্ডটা তন্তুবায়ের নরাজের সমান ও বর্শার ফলাটা ছিল লোহার ও এর ওজন ছিল ছয় শত শেকল। তার ঢাল বহনকারী তার সম্মুখভাগে চলতো।

8. সে দাঁড়িয়ে ইসরাইলের সৈন্য শ্রেণীকে লক্ষ্য করে চেঁচিয়ে বললো, তোমরা কেন যুদ্ধ করার জন্য সৈন্য সজ্জিত করে বের হয়ে এসেছো? আমি কি এক জন ফিলিস্তিনী নই, আর তোমরা কি তালুতের গোলাম নও? তোমরা নিজেদের জন্য এক জনকে মনোনীত কর; সে আমার কাছে নেমে আসুক।

9. সে যদি আমার সঙ্গে যুদ্ধ করে জয়ী হয়, আমাকে হত্যা করে, তবে আমরা তোমাদের গোলাম হব; কিন্তু আমি যদি তাকে পরাজিত করে হত্যা করতে পারি, তবে তোমরা আমাদের গোলাম হবে, আমাদের গোলামীর কাজ করবে।

10. সেই ফিলিস্তিনী আরও বললো, আজ আমি ইসরাইলের সৈন্যদেরকে টিট্‌কারি দিচ্ছি; তোমরা এক জনকে দাও, আমরা পরস্পর যুদ্ধ করি।

11. তখন তালুত ও সমস্ত ইসরাইল সেই ফিলিস্তিনীর এসব কথা শুনে হতাশ হলেন ও ভীষণ ভয় পেলেন।

12. দাউদ ছিলেন বেথেলহেম-এহুদা নিবাসী সেই ইফ্রাথীয় পুরুষের পুত্র, যাঁর নাম ইয়াসির; সেই ব্যক্তির আট জন পুত্র ছিল, আর তালুতের সময়ে তিনি বৃদ্ধ ও গতবয়স্ক হয়েছিলেন।

13. সেই ইয়াসিরের বড় তিন পুত্র তালুতের পিছনে যুদ্ধে গমন করেছিলেন। যুদ্ধে যাওয়া তার তিন পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম ইলীয়াব; দ্বিতীয় পুত্রের নাম অবীনাদব; আর তৃতীয় পুত্রের নাম শম্ম।

14. দাউদ ছিলেন কনিষ্ঠ পুত্র; আর সেই বড় তিন জন তালুতের অনুগামী হয়েছিলেন।

15. কিন্তু দাউদ তালুতের কাছ থেকে বেথেলহেমে তাঁর পিতার ভেড়া চরাবার জন্য যাতায়াত করতেন।

16. আর সেই ফিলিস্তিনী চল্লিশ দিন পর্যন্ত প্রাতঃকালে ও সন্ধ্যাবেলা কাছে এগিয়ে এসে নিজেকে দেখাত।

17. আর ইয়াসি তাঁর পুত্র দাউদকে বললেন, তুমি তোমার ভাইদের জন্য এই এক ঐফা ভাজা শস্য ও দশখানা রুটি নিয়ে শিবিরে তাদের কাছে দৌড়ে যাও।

18. আর এই দশ তাল পনীর তাদের সহস্র্রপতির কাছে নিয়ে গিয়ে তোমার ভাইয়েরা কেমন আছে, দেখে এসো, তাদের থেকে কোন চিহ্ন নিয়ে এসো।

19. তালুত ও তোমার ভাইয়েরা এবং সমস্ত ইসরাইল এলা উপত্যকাতে আছে, ফিলিস্তিনীদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে।

20. পরে দাউদ খুব ভোরে উঠে ভেড়াগুলোকে এক জন রক্ষকের হাতে দিয়ে ইয়াসির হুকুম অনুসারে ঐ সমস্ত দ্রব্য নিয়ে গমন করলেন। তিনি যে সময়ে শিবিরের কাছে উপস্থিত হলেন, সেই সময়ে সৈন্যরা যুদ্ধে যাবার জন্য বের হচ্ছিল এবং সংগ্রামের জন্য সিংহনাদ করছিল।

21. পরে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনীরা পরস্পর সম্মুখাসম্মুখি হয়ে সৈন্য রচনা করলো।

22. তখন দাউদ দ্রব্যরক্ষকের হাতে তার সমস্ত দ্রব্য রেখে সৈন্যশ্রেণীর মধ্যে দৌড়ে গিয়ে তাঁর ভাইদের কুশল জিজ্ঞাসা করলেন।

23. তিনি তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন, ইতোমধ্যে দেখ, গাৎ-নিবাসী ফিলিস্তিনী জালুত নামক সেই বীর ফিলিস্তিনীদের সৈন্যশ্রেণী থেকে উঠে এসে আগের মত কথা বললো; আর দাউদ তা শুনলেন।

24. কিন্তু ইসরাইলের সমস্ত লোক সেই ব্যক্তিকে দেখে তার সম্মুখ থেকে পালিয়ে গেল, তারা ভীষণ ভয় পেয়েছিল।

25. আর ইসরাইলের লোকেরা একে অপরকে বললো, এই যে ব্যক্তি উঠে এল, একে তোমরা দেখছ তো? এই তো ইসরাইলকে উপহাস করতে এসেছে। একে যে হত্যা করতে পারবে বাদশাহ্‌ তাকে প্রচুর ধনে ধনবান করবেন ও তাকে তাঁর কন্যা দেবেন এবং ইসরাইলের মধ্যে তার পিতৃকুলকে কর থেকে মুক্ত করবেন।

26. তখন দাউদ, কাছে যে লোকেরা দাঁড়িয়েছিল, তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেন, এই ফিলিস্তিনীকে হত্যা করে যে ব্যক্তি ইসরাইলের কলঙ্ক খণ্ডন করবে, তার প্রতি কি করা হবে? এই খৎনা-না-করানো ফিলিস্তিনীটা কে যে, জীবন্ত আল্লাহ্‌র সৈন্যদের নিয়ে উপহাস করছে?

27. তাতে লোকেরা এইভাবে তাঁকে জবাবে বললো, ওকে যে হত্যা করবে, সে অমুক পুরস্কার পাবে।

28. সেই লোকদের সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা বলার সময়ে তাঁর বড় ভাই ইলীয়াব সবই শুনলেন; তাই ইলীয়াব দাউদের উপরে ক্রোধে প্রজ্বলিত হয়ে বললেন, তুই কেন নেমে এসেছিস্‌? মরুভূমির মধ্যে সেই ভেড়া কয়টি কার কাছে রেখে এসেছিস্‌? তোর অহংকার ও তোর মনের দুষ্টামির কথা আমার জানা আছে; তুই যুদ্ধ দেখতে এসেছিস্‌।

29. দাউদ বললেন, আমি আবার কি করলাম? আমি তো কেবল একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছি?

30. পরে তিনি তাঁর কাছ থেকে আর একজনের দিকে ফিরে সেই একই কথা বললেন; তাতে লোকেরা তাঁকে আগের মত উত্তর দিল।

31. তখন দাউদ যা যা বলেছিলেন তা রাষ্ট্র হয়ে পড়লো ও তালুতের কাছে তার সংবাদ উপস্থিত হল; তাতে তিনি নিজের কাছে তাঁকে ডেকে আনালেন।

32. তখন দাউদ তালুতকে বললেন, ওর জন্য কারো অন্তঃকরণ হতাশ না হোক; আপনার এই গোলাম গিয়ে এই ফিলিস্তিনীটার সঙ্গে যুদ্ধ করবে।

33. তখন তালুত দাউদকে বললেন, তুমি ঐ ফিলিস্তিনীর বিরুদ্ধে গিয়ে তার সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারবে না, কেননা তুমি বালক এবং সে বাল্যকাল থেকে যোদ্ধা।

34. দাউদ তালুতকে বললেন, আপনার এই গোলাম পিতার ভেড়া রক্ষা করছিল, ইতোমধ্যে একটি সিংহ ও একটি ভালুক এসে পালের মধ্য থেকে ভেড়া ধরে নিয়ে গেল;

35. আমি তার পিছনে পিছনে গিয়ে তাকে প্রহার করে তার মুখ থেকে তা উদ্ধার করলাম; পরে সে আমার বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়ালে আমি তার কেশর ধরে প্রহার করে তাকে হত্যা করলাম।

36. আপনার গোলাম সেই সিংহ ও সেই ভালুক উভয়কেই হত্যা করেছে; আর এই খৎনা-না-করানো ফিলিস্তিনী সেই দুইয়ের মধ্যে একটির মত হবে, কারণ সে জীবন্ত আল্লাহ্‌র সৈন্যদের উপহাস করেছে।

37. দাউদ আরও বললেন, যে মাবুদ সিংহের থাবা ও ভালুকের থাবা থেকে আমাকে উদ্ধার করেছেন, তিনি এই ফিলিস্তিনীর হাত থেকে আমাকে নিস্তার করবেন। তখন তালুত দাউদকে বললেন, যাও, মাবুদ তোমার সহবর্তী হবেন।

38. পরে তালুত নিজের সাজ-পোশাকে দাউদকে সাজিয়ে তাঁর মাথায় ব্রোঞ্জের শিরস্ত্রাণ ও শরীরে বর্ম দিলেন।

39. তখন দাউদ সাজ-পোশাকের উপরে তাঁর তলোয়ার বেঁধে চলতে চেষ্টা করলেন, কারণ এর আগে তা কখনও করেন নি। তখন দাউদ তালুতকে বললেন, এই বেশে আমি যেতে পারব না, কেননা এইভাবে চলতে আমার অভ্যেস নেই। পরে দাউদ তা খুলে রাখলেন।

40. আর তিনি তাঁর লাঠিখানা হাতে নিলেন এবং বয়ে যাওয়া পানির স্রোত থেকে পাঁচখানি মসৃণ পাথর বেছে নিয়ে, নিজের কাছে যে ভেড়ার রাখালের ঝুলি ছিল তাতে রাখলেন এবং নিজের ফিঙ্গাটি হাতে করে ঐ ফিলিস্তিনীর কাছে এগিয়ে গেলেন।

41. আর সেই ফিলিস্তিনী আসতে লাগল এবং দাউদের নিকটবর্তী হল, আর সেই ঢাল বহনকারী লোকটি তার আগে আগে চললো।

42. পরে ফিলিস্তিনী চারদিকে চেয়ে দেখলো, আর দাউদকে দেখতে পেয়ে তুচ্ছজ্ঞান করলো; কেননা তিনি বালক, কিছুটা লাল রংয়ের ও দেখতে সুন্দর ছিলেন।

43. পরে ঐ ফিলিস্তিনী দাউদকে বললো, আমি কি কুকুর যে, তুই লাঠি নিয়ে আমার কাছে আসছিস্‌? আর সেই ফিলিস্তিনী তার দেবতাদের নাম নিয়ে দাউদকে বদদোয়া দিল।

44. ফিলিস্তিনী দাউদকে আরও বললো, তুই আমার কাছে আয়, আমি তোর গোশ্‌ত আসমানের পাখিদের ও মাঠের পশুদেরকে খেতে দিই।

45. তখন দাউদ ঐ ফিলিস্তিনীকে বললেন, তুমি তলোয়ার, বর্শা ও বল্লম নিয়ে আমার কাছে আসছ, কিন্তু আমি বাহিনীগণের মাবুদ, ইসরাইলের সৈন্যদের আল্লাহ্‌র নামে, তুমি যাঁকে উপহাস করেছ তাঁরই নামে, তোমার কাছে আসছি।

46. আজ মাবুদ তোমাকে আমার হাতে তুলে দিবেন; আর আমি তোমাকে আঘাত করবো, তোমার দেহ থেকে মুণ্ড তুলে নেব এবং ফিলিস্তিনীদের সৈন্যের লাশ আজ আকাশের পাখি ও ভূমির পশুদের খেতে দেব; তাতে ইসরাইলে এক জন আল্লাহ্‌ আছেন তা সমস্ত দুনিয়া জানতে পারবে।

47. আর মাবুদ তলোয়ার ও বর্শা দ্বারা নিস্তার করেন না, এই কথাও এই সমস্ত সমাজ জানতে পারবে; কেননা এই যুদ্ধ মাবুদের, আর তিনি তোমাদেরকে আমাদের হাতে তুলে দিবেন।

48. পরে ঐ ফিলিস্তিনী উঠে দাউদের সম্মুখীন হবার জন্য নিকটবর্তী হলে দাউদ তাড়াতাড়ি ঐ ফিলিস্তিনীর সম্মুখীন হবার জন্য সৈন্যশ্রেণীর দিকে দৌড় দিলেন।

49. পরে দাউদ তাঁর ঝুলি থেকে একখানি পাথর বের করলেন এবং ফিঙ্গাতে পাক দিয়ে ঐ ফিলিস্তিনীর কপালে আঘাত করলেন; সেই পাথরখানি তার কপালে বসে গেল; তাতে সে ভূমিতে অধোমুখ হয়ে পড়ে গেল।

50. এইভাবে দাউদ ফিঙ্গা ও পাথর দিয়ে ঐ ফিলিস্তিনীকে পরাজিত করলেন এবং তাকে আঘাত করে হত্যা করলেন; কিন্তু দাউদের হাতে তলোয়ার ছিল না।

51. তাই দাউদ দৌড়ে ঐ ফিলিস্তিনীর পাশে দাঁড়িয়ে তারই তলোয়ার নিয়ে খাপ খুলে তাকে হত্যা করলেন এবং তা দ্বারা তার মাথা কেটে ফেললেন। ফিলিস্তিনীরা যখন দেখতে পেল যে, তাদের বীর মরে গেছে, তখন তারা পালিয়ে গেল।

52. আর ইসরাইলের ও এহুদার লোকেরা উঠে জয়ধ্বনি করলো এবং গাৎ ও ইক্রোণের দ্বার পর্যন্ত ফিলিস্তিনীদের পিছনে পিছনে তাড়া করে গেল; তাতে ফিলিস্তিনীদের আহতরা শারয়িমের পথে গাৎ ও ইক্রোণ পর্যন্ত পড়ে থাকল।

53. পরে বনি-ইসরাইল ফিলিস্তিনীদের পিছনে তাড়া করা বন্ধ করে ফিরে এসে তাদের শিবির লুট করলো।

54. পরে দাউদ সেই ফিলিস্তিনীর মুণ্ড তুলে জেরুশালেমে নিয়ে গেলেন, কিন্তু তার সাজ-পোশাক নিজের তাঁবুতে রাখলেন।

55. আর তালুত যখন ঐ ফিলিস্তিনীর বিরুদ্ধে দাউদকে যেতে দেখেছিলেন, তখন সেনাপতি অব্‌নেরকে বলেছিলেন, অব্‌নের, এই যুবক কার পুত্র? অবন্‌ের বলেছিলেন, হে বাদশাহ্‌! আপনার জীবন্ত প্রাণের কসম, আমি তা বলতে পারি না।

56. পরে বাদশাহ্‌ বলেছিলেন, তুমি জিজ্ঞাসা কর, ঐ বালকটি কার পুত্র?

57. পরে দাউদ যখন ফিলিস্তিনীকে হত্যা করে ফিরে আসছেন, তখন অব্‌নের তাঁকে ধরে তালুতের কাছে নিয়ে গেলেন; তাঁর হাতে ঐ ফিলিস্তিনীর মুণ্ড ছিল।

58. তালুত তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে যুবক, তুমি কার পুত্র? জবাবে দাউদ বললেন, আমি আপনার গোলাম বেথেলহেমীয় ইয়াসির পুত্র।