অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12
  13. 13
  14. 14
  15. 15
  16. 16
  17. 17
  18. 18
  19. 19
  20. 20
  21. 21
  22. 22

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

১ বাদশাহ্‌নামা 2 কিতাবুল মোকাদ্দস (BACIB)

হযরত দাউদের শেষ নির্দেশ

1. পরে দাউদের মৃত্যুর সময় সন্নিকট হল; আর তিনি তাঁর পুত্র সোলায়মানকে হুকুম দিয়ে বললেন,

2. সমস্ত মর্ত্যলোকের যে পথ, আমি সেই পথে গমন করছি; তুমি বলবান হও ও পুরুষত্ব প্রকাশ কর।

3. আর তোমার আল্লাহ্‌ মাবুদের রক্ষণীয় বিধান রক্ষা করে তাঁর পথে চল, মূসার শরীয়তে লেখা তাঁর বিধি, তাঁর হুকুম, তাঁর অনুশাসন ও তাঁর সমস্ত সাক্ষ্য পালন কর; যেন তুমি যে কোন কাজ কর ও যে কোন দিকে ফের, বুদ্ধিপূর্বক চলতে পার;

4. যেন মাবুদ আমার সম্বন্ধে যে কথা বলেছেন তা রক্ষা করেন; তিনি বলেছেন, তোমার সন্তানেরা যদি সমস্ত অন্তঃকরণ ও সমস্ত প্রাণের সঙ্গে আমার সম্মুখে বিশ্বস্ত আচরণ করতে নিজেদের পথে সাবধানে চলে, তবে— তিনি বলেন, ইসরাইলের সিংহাসনে তোমার বংশে লোকের অভাব হবে না।

5. আর সরূয়ার পুত্র যোয়াব আমার প্রতি যা করেছে, ফলত ইসরাইলের দুই সেনাপতির প্রতি, নেরের পুত্র অব্‌নের ও যেথরের পুত্র অমাসার প্রতি যা করেছে, তাও তুমি জান; সে তাদের মেরে ফেলে শান্তির সময়ে যুদ্ধের রক্তপাত করেছে এবং যুদ্ধের রক্ত তার কোমরবন্ধনীতে ও পায়ের জুতাতে লেগেছে।

6. অতএব তুমি বুদ্ধিসহকারে তার প্রতি ব্যবহার করবে; তাকে পাকা চুলে শান্তিতে পাতালে নামতে দিও না।

7. কিন্তু গিলিয়দীয় বর্সিল্লয়ের পুত্রদের প্রতি সদয় ব্যবহার করো এবং তোমার সঙ্গে ভোজনকারী লোকদের মধ্যে তাদেরকে স্থান দিও; কেননা তোমার ভাই অবশালোমের সম্মুখ থেকে আমার পলায়নকালে তারা সেভাবেই আমার কাছে এসেছিল।

8. আর দেখ, তোমার কাছে বিন্‌ইয়ামীনীয় গেরার পুত্র বহুরীম-নিবাসী শিমিয়ি আছে; আমার মহনয়িমে যাবার দিন সেই ব্যক্তি আমাকে নিদারুণ বদদোয়া দিয়েছিল; কিন্তু সে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে জর্ডানে এসেছিল, আর আমি মাবুদের কসম খেয়ে তাকে বলেছিলাম, আমি তোমাকে তলোয়ার দ্বারা হত্যা করবো না।

9. কিন্তু তুমি এখন তাকে নিরপরাধ জ্ঞান করবে না; কেননা তুমি বুদ্ধিমান, তার প্রতি তোমার যা কর্তব্য, তা বুঝবে; তাকে পাকা চুলের সঙ্গে রক্তপাতের মধ্য দিয়েই পাতালে নামাবে।

হযরত দাউদের মৃত্যু

10. পরে দাউদ তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে নিদ্রাগত হলেন এবং দাউদ-নগরে তাঁকে দাফন করা হল।

11. দাউদ ইসরাইলে চল্লিশ বছর রাজত্ব করেন— তিনি হেবরনে সাত বছর ও জেরুশালেমে তেত্রিশ বছর রাজত্ব করেন।

12. পরে সোলায়মান তাঁর পিতা দাউদের সিংহাসনে বসলেন এবং তাঁর রাজ্য দৃঢ়ভাবে স্থাপিত হল।

বাদশাহ্‌ সোলায়মানের রাজত্ব দৃঢ়ীকরণ

13. পরে হগীতের পুত্র আদোনিয় সোলায়মানের মা বৎশেবার কাছে গেল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি শান্তিভাবে এসেছো তো? সে জবাবে বললো, শান্তিভাবে।

14. সে আরও বললো, আপনার কাছে আমার কিছু বলবার আছে।

15. বৎশেবা বললেন, বল। সে বললো, আপনি জানেন, রাজ্য আমারই ছিল এবং আমি বাদশাহ্‌ হব বলে সমস্ত ইসরাইল আমার প্রতি উম্মুখ হয়েছিল; কিন্তু রাজত্ব ঘুরে গেল, আমার ভাইয়ের হল; কেননা তা মাবুদ হতেই তার হল।

16. এখন আমি আপনার কাছে একটি বিষয় যাচ্ঞা করি, আপনি আমাকে অস্বীকার করবেন না।

17. তিনি বললেন, বল। তখন আদোনিয় বললো, মেহেরবানী করে বাদশাহ্‌ সোলায়মানকে বলুন— তিনি তো আপনার কথা অস্বীকার করবেন না— তিনি যেন আমার সঙ্গে শূনেমীয়া অবীশগের বিয়ে দেন।

18. বৎশেবা বললেন, ভাল, আমি তোমার জন্য বাদশাহ্‌কে বলবো।

19. পরে বৎশেবা আদোনিয়ের জন্য বলতে বাদশাহ্‌ সোলায়মানের কাছে গেলেন; আর বাদশাহ্‌ উঠে তাঁর সম্মুখে ভূমিতে উবুড় হয়ে সালাম করলেন। পরে তিনি তাঁর সিংহাসনে বসলেন এবং রাজমাতার কারণ আসন স্থাপন করালে তিনিও তাঁর ডান পাশে বসলেন।

20. আর তিনি বললেন, আমি তোমার কাছে একটি ক্ষুদ্র বিষয় যাচ্ঞা করি, আমার কথা অস্বীকার করো না। বাদশাহ্‌ বললেন, মা, যাচ্ঞা কর, আমি তোমার কথা অস্বীকার করবো না।

21. তখন তিনি বললেন, তোমার ভাই আদোনিয়ের সঙ্গে শূনেমীয়া অবীশগের বিয়ে দিতে হবে।

22. বাদশাহ্‌ সোলায়মান উত্তরে তাঁর মাকে বললেন, তুমি আদোনিয়ের জন্য শূনেমীয়া অবীশগকে কেন যাচ্ঞা কর, তার জন্য রাজ্যও যাচ্ঞা কর, কেননা সে আমার জ্যেষ্ঠ ভাই; তার ও ইমাম অবিয়াথরের ও সরূয়ার পুত্র যোয়াবের জন্য রাজ্য যাচ্ঞা কর।

23. পরে বাদশাহ্‌ সোলায়মান মাবুদের কসম খেয়ে বললেন, আদোনিয় যদি নিজের প্রাণের বিরুদ্ধে এই কথা বলে না থাকে, তবে আল্লাহ্‌ যেন আমাকে সেরকম ও তার চেয়েও বেশি শাস্তি দেন।

24. আর এখন যিনি তাঁর ওয়াদা অনুসারে আমাকে সুস্থির করে আমার পিতা দাউদের সিংহাসনে বসিয়েছেন ও আমার জন্য কুল নির্মাণ করেছেন, সেই জীবন্ত মাবুদের কসম, আজই আদোনিয়ের প্রাণদণ্ড হবে।

25. তখন বাদশাহ্‌ সোলায়মান যিহোয়াদার পুত্র বনায়কে প্রেরণ করলে, তিনি তাকে আক্রমণ করে হত্যা করলেন।

26. পরে বাদশাহ্‌ ইমাম অবিয়াথরকে বললেন, তুমি অনাথোতে তোমার স্থানে ফিরে যাও কেননা তুমিও মৃত্যুর পাত্র তবুও আমি আজ তোমার প্রাণদণ্ড করবো না, কারণ তুমি আমার পিতা দাউদের সম্মুখে সার্বভৌম মাবুদের সিন্দুক বহন করেছিলে এবং আমার পিতার সমস্ত দুঃখভোগে অংশী হয়েছিলেন।

27. এভাবে সোলায়মান অবিয়াথরকে মাবুদের ইমামের পদ থেকে দূর করে দিলেন; এতে মাবুদের কালাম, শীলোতে আলীর কুলের বিপক্ষে তিনি যা বলেছিলেন তা সিদ্ধ হল।

28. পরে সেই ঘটনার খবর যোয়াবের কাছে উপস্থিত হল; যোয়াব যদিও অবশালোমের পক্ষ হন নি, তবুও আদোনিয়ের পক্ষ হয়েছিলেন। এখন যোয়াব মাবুদের তাঁবুতে পালিয়ে গিয়ে কোরবানগাহ্‌র শিং ধরে রইলেন।

29. পরে বাদশাহ্‌ সোলায়মানের কাছে এই সংবাদ এল যে, যোয়াব মাবুদের তাঁবুতে পালিয়ে গেছেন, আর দেখুন, তিনি কোরবানগাহ্‌র পাশে আছেন। তাতে সোলায়মান যিহোয়াদার পুত্র বনায়কে প্রেরণ করলেন, বললেন, যাও, তাকে আক্রমণ কর।

30. তাতে বনায় মাবুদের তাঁবুতে গমন করে তাঁকে বললেন, বাদশাহ্‌ এই কথা বলেন, তুমি বাইরে এসো। তিনি বললেন, তা হবে না, আমি এই স্থানে মরবো। তখন বনায় বাদশাহ্‌কে সংবাদ জানিয়ে বললেন, যোয়াব অমুক কথা বলেছেন এবং আমাকে অমুক জবাব দিয়েছেন।

31. তখন বাদশাহ্‌ বললেন, সে যা বলেছে, সেই অনুসারে কর, তাকে আক্রমণ করে হত্যা কর, আর তাকে দাফন কর; তা হলে যোয়াব অকারণে যে রক্তপাত করেছে, তার অপরাধ তুমি আমার ও আমার পিতৃকুল থেকে দূর করবে।

32. আর মাবুদ তার রক্তপাতের অপরাধ তারই মাথায় বর্তাবেন; কেননা সে আমার পিতা দাউদের অজ্ঞাতসারে তার থেকেও ধার্মিক ও সৎ দুই ব্যক্তিকে, ইসরাইলের সেনাপতি নেরের পুত্র অব্‌নের ও এহুদার সেনাপতি যেথরের পুত্র অমাসাকে আক্রমণ করে তলোয়ার দ্বারা হত্যা করেছিল।

33. তাদের রক্তপাতের অপরাধ যোয়াবের মাথায় ও যুগে যুগে তার বংশের মাথায় বর্তাবে; কিন্তু দাউদের, তাঁর বংশের, তাঁর কুলের ও তাঁর সিংহাসনের প্রতি মাবুদের কাছ থেকে যুগে যুগে শান্তি বর্ষিত হবে।

34. তখন যিহোয়াদার পুত্র বনায় গিয়ে তাঁকে আক্রমণ করে হত্যা করলেন; পরে মরুভূমির কাছে তাঁর বাড়িতে তাঁকে দাফন করা হল।

35. আর বাদশাহ্‌ তাঁর পদে যিহোয়াদার পুত্র বনায়কে সেনাপতি করলেন এবং বাদশাহ্‌ অবিয়াথরের পদ ইমাম সাদোককে দিলেন।

36. আর বাদশাহ্‌ লোক পাঠিয়ে শিমিয়িকে ডেকে এনে বললেন, তুমি জেরুশালেমে তোমার জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ করে এই স্থানে বাস কর, এই স্থান থেকে বের হয়ে অন্য কোন স্থানে যেও না।

37. তুমি যেদিন বের হয়ে কিদ্রোণ স্রোত পার হবে, সেদিন অবশ্যই হত হবে; এই কথা নিশ্চিতভাবে জেনে নাও; তোমার রক্তপাতের অপরাধ তোমারই মাথায় বর্তাবে।

38. তাতে শিমিয়ি বাদশাহ্‌কে বললো, এই কথা ভাল; আমার মালিক বাদশাহ্‌ যেমন বললেন, আপনার এই গোলাম তা-ই করবে। পরে শিমিয়ি অনেক দিন পর্যন্ত জেরুশালেমে বাস করলো।

39. কিন্তু তিন বছর পরে শিমিয়ির দুই গোলাম পালিয়ে গিয়ে মাখার পুত্র আখীশ নামে গাতীয় বাদশাহ্‌র কাছে গেল। তাতে কেউ শিমিয়িকে বললো, দেখ, তোমার গোলামেরা গাতে রয়েছে।

40. তখন শিমিয়ি গাধা সাজিয়ে তার গোলামদের সন্ধানে গাতে আখীশের কাছে গেল, গিয়ে শিমিয়ি গাৎ থেকে তার গোলামদেরকে ফিরিয়ে আনলো।

41. পরে সোলায়মানকে কেউ সংবাদ দিল, শিমিয়ি জেরুশালেম থেকে গাতে গিয়েছিল, এখন ফিরে এসেছে;

42. বাদশাহ্‌ লোক পাঠিয়ে শিমিয়িকে ডেকে এনে বললেন, আমি কি তোমাকে মাবুদের কসম দিয়ে তোমার বিপক্ষে এই সাক্ষ্য দিই নি যে, নিশ্চিতভাবে জেনে নাও তুমি যেদিন বাইরে যাবে, স্থানান্তরে ভ্রমণ করবে, সেদিন তোমার মৃত্যু হবেই? আর তুমি আমাকে বলেছিলে, আমি যে কথা শুনলাম, তা ভাল কথা।

43. তবে তুমি মাবুদের কসম ও তোমাকে দেওয়া আমার হুকুম কেন পালন কর নি?

44. বাদশাহ্‌ শিমিয়িকে আরও বললেন, আমার পিতা দাউদের প্রতি তোমার কৃত যে সমস্ত নাফরমানীর বিষয়ে তোমার মন সাক্ষ্য দেয়, তা তুমি জান; অতএব মাবুদ তোমার সেই কাজের ফল তোমার মাথায় বর্তাবেন।

45. কিন্তু বাদশাহ্‌ সোলায়মানের উপর দোয়া থাকবে হবে ও মাবুদের সম্মুখে দাউদের সিংহাসন যুগ যুগ অক্ষুণ্ন থাকবে।

46. পরে বাদশাহ্‌ যিহোয়াদার পুত্র বনায়কে হুকুম করলে তিনি গিয়ে তাকে আক্রমণ করে হত্যা করলেন। আর সোলায়মানের হাতে রাজ্য সুস্থির হল।