অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12
  13. 13
  14. 14
  15. 15
  16. 16
  17. 17
  18. 18
  19. 19
  20. 20
  21. 21
  22. 22

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

১ বাদশাহ্‌নামা 18 কিতাবুল মোকাদ্দস (BACIB)

হযরত ইলিয়াস ও আল্লাহ্‌ভক্ত ওবদিয়

1. অনেক দিনের পরে, বৃষ্টি না হওয়ার তৃতীয় বছরে, ইলিয়াসের কাছে মাবুদের এই কালাম উপস্থিত হল, তুমি গিয়ে আহাবকে দেখা দাও; পরে আমি ভূতলে বৃষ্টি প্রেরণ করবো।

2. তাতে ইলিয়াস আহাবকে দেখা দিতে গেলেন। সেই সময় সামেরিয়ায় ভারী দুর্ভিক্ষ হয়েছিল।

3. আর আহাব রাজপ্রাসাদের নেতা ওবদিয়কে ডাকলেন। ওবদিয় মাবুদকে অতিশয় ভয় করতেন;

4. আর যে সময়ে ঈষেবল মাবুদের নবীদেরকে উচ্ছেদ করছিল, সেই সময়ে ওবদিয় এক শত নবীকে নিয়ে পঞ্চাশ পঞ্চাশ জন করে গহ্বরের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর তিনি খাবার ও পানি দিয়ে তাদেরকে প্রতিপালন করতেন।

5. আহাব ওবদিয়কে বললেন, দেশের মধ্যে যত পানির ফোয়ারা ও স্রোতমার্গ আছে, তুমি সেগুলোর কাছে যাও; হয় তো আমরা কিছু ঘাস পেতে পারি এবং তাতে ঘোড়া ও খচ্চরগুলোর প্রাণ রক্ষা হবে, নতুবা সমস্ত পশু হারাতে হবে।

6. আর তাঁরা দেশে পরিভ্রমণ করার জন্য তাদের মধ্যে দেশ দু’ভাগ করে নিলেন; আহাব স্বতন্ত্র এক পথে গেলেন এবং ওবদিয় স্বতন্ত্র অন্য পথে গেলেন।

7. ওবদিয় পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন, এমন সময়ে দেখ, ইলিয়াস তাঁর সম্মুখে উপস্থিত; তখন ওবদিয় তাঁকে চিনতে পেরে ভূমিতে উবুড় হয়ে পড়ে বললেন, আপনি কি আমার প্রভু ইলিয়াস?

8. জবাবে তিনি বললেন, আমি সেই; যাও, তোমার প্রভুকে বল, দেখুন ইলিয়াস উপস্থিত।

9. তিনি বললেন, আমি কি গুনাহ্‌ করলাম যে, আপনি আপনার গোলাম আমাকে হত্যা করার জন্য আহাবের হাতে তুলে দিতে চান?

10. আপনার আল্লাহ্‌ জীবন্ত মাবুদের কসম, এমন কোন জাতি কি রাজ্য নেই, যার কাছে আমার প্রভু আপনার সন্ধানে দূত পাঠান নি; আর যখন তারা বললো, সে ব্যক্তি নেই; তখন তারা আপনাকে পায়নি বলে তিনি সেসব রাজ্যের ও জাতির লোকদেরকে শপথও করিয়েছেন।

11. এখন আপনি বলছেন, যাও, তোমার প্রভুকে বল, দেখুন, ইলিয়াস উপস্থিত।

12. আর আমি আপনার কাছ থেকে গেলেই মাবুদের রূহ্‌ আমার অজ্ঞাত কোন স্থানে আপনাকে নিয়ে যাবেন, তাতে আমি গিয়ে আহাবকে সংবাদ দিলে যদি তিনি আপনার উদ্দেশ না পান, তবে আমাকে হত্যা করবেন; কিন্তু আপনার গোলাম আমি বাল্যকাল থেকে মাবুদকে ভয় করে আসছি।

13. ঈষেবল যখন মাবুদের নবীদেরকে হত্যা করছিলেন, তখন আমি যা করেছিলাম, তা কি আমার প্রভু শোনেন নি? আমি পঞ্চাশ পঞ্চাশ জন করে মাবুদের এক শত নবীকে গহ্বরে লুকিয়ে রেখে খাবার ও পানি দিয়ে প্রতিপালন করেছি।

14. আর এখন আপনি বলছেন, যাও, তোমার প্রভুকে বল, দেখুন, ইলিয়াস উপস্থিত; তিনি তো আমাকে হত্যা করবেন।

15. ইলিয়াস বললেন, আমি যাঁর সাক্ষাতে দণ্ডায়মান, সেই বাহিনীগণের জীবন্ত মাবুদের কসম, আমি আজ অবশ্য তাঁকে দেখা দেব।

কর্মিল পর্বতে হযরত ইলিয়াস

16. তখন ওবদিয় আহাবের সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলেন ও তাঁকে সংবাদ দিলেন; তাতে আহাব ইলিয়াসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেন।

17. ইলিয়াসের দেখা পাওয়ামাত্র আহাব তাঁকে বললেন, হে ইসরাইলের কাঁটা, এ কি তুমি?

18. ইলিয়াস বললেন, আমি ইসরাইলের কাঁটা নই, কিন্তু আপনি ও আপনার পিতৃকুল ইসরাইলের কাঁটা; কেননা আপনারা মাবুদের সমস্ত হুকুম ত্যাগ করেছেন এবং আপনি বালদেবদের অনুগামী হয়েছেন।

19. এখন লোক পাঠিয়ে সমস্ত ইসরাইলকে কর্মিল পর্বতে আমার কাছে জমায়েত করুন এবং বালের নবী সেই চার শত পঞ্চাশজন ও আশেরার নবী সেই চারশোজনকেও উপস্থিত করুন, যারা ঈষেবলের সঙ্গে একই মেজে ভোজন করে থাকে।

20. তাতে আহাব সমস্ত বনি-ইসরাইলের কাছে লোক পাঠালেন এবং সেই নবীদেরকে কর্মিল পর্বতে একত্র করলেন।

21. পরে ইলিয়াস সমস্ত লোকের কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন, তোমরা কতকাল দুই নৌকায় পা দিয়ে থাকবে? মাবুদ যদি আল্লাহ্‌ হন, তবে তাঁর অনুগামী হও; আর বাল যদি আল্লাহ্‌ হয়, তবে তাঁর অনুগামী হও। কিন্তু লোকেরা তাঁকে কোন জবাব দিল না।

22. তখন ইলিয়াস লোকদেরকে বললেন, আমি, কেবল একা আমিই, মাবুদের নবী অবশিষ্ট আছি; কিন্তু বালের নবীরা চার শত পঞ্চাশ জন আছে।

23. আমাদেরকে দু’টি ষাঁড় দেওয়া হোক; তারা তাদের জন্য একটি ষাঁড় মনোনীত করুক ও খণ্ড খণ্ড করে কাঠের উপরে রাখুক, কিন্তু তাতে আগুন না দিক; পরে আমি অন্য ষাঁড়টি প্রস্তুত করে কাঠের উপরে রাখবো, কিন্তু তাতে আগুন দেব না।

24. পরে তোমরা তোমাদের দেবতার নামে ডেকো এবং আমি মাবুদের নামে ডাকব; আর যে আল্লাহ্‌ আগুনের দ্বারা উত্তর দেবেন, তিনিই আল্লাহ্‌ হোন। সকলে জবাবে বললো, বেশ ভাল কথা।

25. পরে ইলিয়াস বালের নবীদেরকে বললেন, তোমরা তো অনেকে আছ, প্রথমে তোমরাই তোমাদের জন্য একটা ষাঁড় নির্বাচন করে প্রস্তুত কর এবং তোমাদের দেবতার নামে ডাক, কিন্তু আগুন দিও না।

26. পরে তাদেরকে যে ষাঁড় দেওয়া হল, তা নিয়ে তারা প্রস্তুত করলো এবং সকাল থেকে মধ্যাহ্নকাল পর্যন্ত এই বলে বালের নামে ডাকতে লাগল, হে বাল, আমাদেরকে উত্তর দাও। কিন্তু কোন বাণী হল না এবং কেউই উত্তর দিল না। আর তারা যে কোরবানগাহ্‌ তৈরি করেছিল তার কাছে খোঁড়ার মত নাচতে লাগল।

27. পরে মধ্যাহ্নকালে ইলিয়াস তাদেরকে বিদ্রূপ করে বললেন, উচ্চৈঃস্বরে ডাক; কেননা সে দেবতা; সে ধ্যান করছে, বা কোথাও গেছে, বা পথে চলছে, কিংবা হয়তো ঘুমিয়ে গেছে, তাকে জাগানো চাই।

28. তখন তারা উচ্চৈঃস্বরে ডাকল এবং তাদের রীতি অনুসারে শরীর রক্তের ধারা বহন পর্যন্ত ছুরিকা ও শলাকা দ্বারা নিজেদের ক্ষতবিক্ষত করলো।

29. আর মধ্যাহ্নকাল অতীত হলে তারা বিকাল বেলা কোরবানীর সময় পর্যন্ত ভাবোক্তি প্রচার করতে থাকল, তবুও কোন বাণীও হল না, কেউ জবাবও দিল না, কেউ মনোযোগও করলো না।

30. পরে ইলিয়াস সমস্ত লোককে বললেন, আমার কাছে এসো; তাতে সমস্ত লোক তাঁর কাছে এল। আর তিনি মাবুদের ভেঙ্গে-পড়া কোরবানগাহ্‌ সারালেন।

31. কারণ ‘তোমার নাম ইসরাইল হবে,’ এই বলে মাবুদের কালাম যে ইয়াকুবের কাছে উপস্থিত হয়েছিল, তাঁর সন্তানদের বংশ-সংখ্যা অনুসারে ইলিয়াস বারোটি পাথর গ্রহণ করলেন।

32. আর তিনি সেই পাথরগুলো দিয়ে মাবুদের নামে একটি কোরবানগাহ্‌ তৈরি করলেন এবং কোরবানগাহ্‌র চারদিকে দুই কাঠা বীজ ধরতে পারে, এমন একটি প্রণালী খনন করলেন।

33. পরে তিনি কাঠ সাজিয়ে ষাঁড়টি খণ্ড খণ্ড করে কাঠের উপরে রাখলেন। আর বললেন, চার জালা পানি ভরে এই পোড়ানো-কোরবানীর ও কাঠের উপরে ঢেলে দাও।

34. পরে তিনি বললেন, দ্বিতীয় বার সেটি কর; তারা দ্বিতীয় বার তা করলো। পরে তিনি বললেন, তৃতীয় বার কর; তারা তৃতীয় বার তা করলো।

35. তখন কোরবানগাহ্‌র চারদিকে পানি গেল এবং তিনি ঐ প্রণালীও পানিতে পরিপূর্ণ করলেন।

36. পরে বিকাল বেলা কোরবানী সময়ে ইলিয়াস নবী কাছে এসে বললেন, হে মাবুদ, ইব্রাহিম, ইস্‌হাক ও ইসরাইলের আল্লাহ্‌, আজ জানিয়ে দাও যে, ইসরাইলের মধ্যে তুমিই আল্লাহ্‌ এবং আমি তোমার গোলাম ও তোমার কালাম অনুসারেই এসব কাজ করলাম।

37. হে মাবুদ, আমাকে উত্তর দাও, আমাকে উত্তর দাও; যেন এই লোকেরা জানতে পারে যে, হে মাবুদ, তুমিই আল্লাহ্‌ এবং তুমিই এদের অন্তর ফিরিয়ে এনেছ।

38. তখন উপর থেকে মাবুদের আগুন পড়লো এবং পোড়ানো-কোরবানী, কাঠ, পাথর ও ধূলি গ্রাস করলো এবং প্রণালীস্থিত পানিও চেটে খেল।

39. তা দেখে সমস্ত লোক উবুড় হয়ে পড়ে বললো, মাবুদই আল্লাহ্‌, মাবুদই আল্লাহ্‌।

40. তখন ইলিয়াস তাদেরকে বললেন, তোমরা বালের নবীদেরকে ধর, তাদের এক জনকেও পালিয়ে রক্ষা পেতে দিও না। তখন তারা তাদেরকে ধরলো, আর ইলিয়াস তাদেরকে নিয়ে কীশোন স্রোতোমার্গে নেমে গেলেন এবং সেখানে তাদেরকে হত্যা করলেন।

অনাবৃষ্টির অবসান

41. পরে ইলিয়াস আহাবকে বললেন, আপনি গিয়ে ভোজন পান করুন, কেননা ভারী বৃষ্টির আওয়াজ হচ্ছে।

42. তাতে আহাব ভোজন পান করতে উঠে গেলেন। আর ইলিয়াস কর্মিলের শৃঙ্গে উঠলেন; এবং ভূমির দিকে নত হয়ে তাঁর মুখ দুই জানুর মধ্যে রাখলেন।

43. আর তিনি তাঁর ভৃত্যকে বললেন, তুমি উঠে যাও, সমুদ্রের দিকে দৃষ্টিপাত কর। তাতে সে গিয়ে দৃষ্টিপাত করে বললো, কিছুই নেই। এভাবে সাত বার ইলিয়াস তাকে ফিরে গিয়ে দেখতে বললেন।

44. পরে সপ্তম বারে সে বললো, দেখুন, মানুষের হাতের মত ক্ষুদ্র একখানি মেঘ সমুদ্র থেকে উঠছে। তখন ইলিয়াস বললেন, উঠে গিয়ে আহাবকে বল, রথে ঘোড়া যুড়ে নেমে যান, নাহলে বৃষ্টিতে আপনার ফিরে যাওয়া বাধা সৃষ্টি করবে।

45. আর অমনি মেঘে ও বায়ুতে আসমান ঘোর হয়ে উঠলো ও ভারী বৃষ্টি হল; তাতে আহাব ঘোড়ার গাড়িতে আরোহণ করে যিষ্রিয়েলে গমন করলেন।

46. আর মাবুদের হাত ইলিয়াসের উপরে অবস্থান করছিল, তাই তিনি কোমরবন্ধনী পরে যিষ্রিয়েলের প্রবেশ-স্থান পর্যন্ত আহাবের আগে আগে দৌড়ে গেলেন।