অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

দানিয়াল 2 কিতাবুল মোকাদ্দস (BACIB)

বাদশাহ্‌ বখতে-নাসারের স্বপ্ন

1. বখতে-নাসারের রাজত্বের দ্বিতীয় বছরে বখতে-নাসার স্বপ্ন দেখলেন, আর তাঁর মন উদ্বিগ্ন হল ও তাঁর ঘুম ভেঙ্গে গেল।

2. পরে বাদশাহ্‌ হুকুম করলেন, যেন তাঁকে ঐ স্বপ্ন বুঝিয়ে দেবার জন্য মন্ত্রবেত্তা, গণক, মায়াবী ও কল্‌দীয়দের ডাকা হয়। তারা এসে বাদশাহ্‌র সম্মুখে দাঁড়ালো।

3. তখন বাদশাহ্‌ তাদের বললেন, আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি, সেই স্বপ্ন বুঝবার জন্য আমার মন অস্থির হয়ে উঠেছে।

4. তখন কল্‌দীয়েরা অরামীয় ভাষায় বাদশাহ্‌কে বললো, বাদশাহ্‌! চিরজীবী হোন; আপনার এই গোলামদেরকে স্বপ্নটি বলুন, আমরা তাৎপর্য জানাবো।

5. বাদশাহ্‌ জবাবে কল্‌দীয়দেরকে বললেন, আমার এই আদেশবাক্য বের হয়েছে; তোমরা যদি সেই স্বপ্ন ও স্বপ্নের তাৎপর্য আমাকে না জানাও, তবে খণ্ড-বিখণ্ড হবে এবং তোমাদের বাড়ি-ঘর ধ্বংসস্তুপ করা যাবে;

6. কিন্তু যদি সেই স্বপ্ন ও স্বপ্নের তাৎপর্য জানাও, তবে আমার কাছে উপহার, পারিতোষিক ও মহাসমাদর পাবে; অতএব সেই স্বপ্ন ও স্বপ্নের তাৎপর্য আমাকে জানাও।

7. তারা পুনর্বার জবাবে বললো, বাদশাহ্‌, আপনার গোলামদেরকে স্বপ্নটি বলুন, আমরা তার তাৎপর্য জানাবো।

8. বাদশাহ্‌ জবাবে বললেন, আমি নিশ্চয় জানলাম, আমার আদেশবাক্য বের হয়েছে দেখে তোমরা কাল বিলম্ব করতে চাইছো;

9. কিন্তু যদি তোমরা সেই স্বপ্নটি আমাকে না জানাও, তবে তোমাদের জন্য একমাত্র ব্যবস্থা রইলো; কেননা তোমরা আমার সাক্ষাতে মিথ্যা কথা ও বঞ্চনার কথা বলবার মন্ত্রণা করছো, যে পর্যন্ত না সময়ের পরিবর্তন হয়; অতএব তোমরা আমাকে স্বপ্নটি বল, তাতে জানবো, স্বপ্নের তাৎপর্যও আমাকে জানাতে পার।

10. কল্‌দীয়েরা বাদশাহ্‌র সম্মুখে জবাবে বললো, বাদশাহ্‌র স্বপ্নের কথা জানাতে পারে, দুনিয়াতে এমন কোন মানুষ নেই; বাস্তবিক মহান, বা পরাক্রান্ত কোন বাদশাহ্‌ কখন কোন মন্ত্রবেত্তাকে বা গণককে বা কল্‌দীয়কে এমন কথা জিজ্ঞাসা করেন নি।

11. বাদশাহ্‌ যে কথা জিজ্ঞাসা করছেন, তা দুরূহ; বস্তুত যাঁরা মাংসময় দেহে বাস করেন না, সেই দেবতারা ছাড়া আর কেউ নেই যে, বাদশাহ্‌র সম্মুখে তা জানাতে পারে।

12. এই কথা শুনে বাদশাহ্‌ অত্যন্ত ক্রুদ্ধ ও কোপান্বিত হয়ে ব্যাবিলনের সমস্ত বিদ্বান লোককে হত্যা করতে হুকুম দিলেন।

13. তখন এই হুকুম প্রচারিত হল যে, বিদ্বান লোকদেরকে হত্যা করতে হবে; আর লোকেরা দানিয়াল ও তাঁর সহচরদেরকে হত্যা করার জন্য তাদের খোঁজ করলো।

14. তখন যে রাজসেনাপতি অরিয়োক ব্যাবিলনীয় বিদ্বান লোকদের হত্যা করার জন্য বের হয়েছিলেন, তাঁর কাছে দানিয়াল বিবেচনা ও জ্ঞান সহকারে কথা বললেন।

15. তিনি বাদশাহ্‌র কর্মকর্তা অরিয়োককে জিজ্ঞাসা করলেন, বাদশাহ্‌র হুকুম এত প্রচণ্ড কেন? তাতে অরিয়োক দানিয়ালকে সমস্ত কথা খুলে বললেন।

16. তখন দানিয়াল বাদশাহ্‌র কাছে গিয়ে এই বিনতি করলেন, আমার জন্য সময় নির্ধারণ করতে হুকুম দিন, যেন আমি বাদশাহ্‌কে স্বপ্নটির তাৎপর্য জানাতে পারি।

আল্লাহ্‌ বখতে-নাসারের স্বপ্নের অর্থ প্রকাশ করেন

17. পরে দানিয়াল বাড়িতে গিয়ে নিজের সহচর হনানিয়, মীশায়েল ও অসরিয়কে সেই কথা জানালেন;

18. যেন তাঁরা ঐ নিগূঢ় বিষয় সম্বন্ধে বেহেশতের আল্লাহ্‌র কাছে করুণা চান; দানিয়াল ও তাঁর সহচরগণ যেন ব্যাবিলনের অন্য বিদ্বান লোকদের সঙ্গে বিনষ্ট না হন।

19. তখন রাত্রিকালীন দর্শনে দানিয়ালের কাছে ঐ নিগূঢ় বিষয় প্রকাশিত হল; তখন দানিয়াল বেহেশতের আল্লাহ্‌কে শুকরিয়া জানালেন।

20. দানিয়াল বললেন,আল্লাহ্‌র নাম যুগে যুগে চিরকাল ধন্য হোক,কেননা জ্ঞান ও পরাক্রম তাঁরই।

21. তিনিই কাল ও ঋতু পরিবর্তন করেন;বাদশাহ্‌দেরকে পদভ্রষ্ট করেন ও বাদশাহ্‌দেরকে পদস্থ করেন;তিনি জ্ঞানীদেরকে জ্ঞান দেন, বিবেচকদেরকে বিবেচনা দেন।

22. তিনিই গভীর ও গুপ্ত বিষয় প্রকাশ করেন, অন্ধকারে যা আছে,তা তিনি জানেন এবং তাঁর কাছে নূর বাস করেন।

23. হে আমার পূর্বপুরুষদের আল্লাহ্‌,আমি তোমার শুকরিয়া ও প্রশংসা করি,তুমি আমাকে জ্ঞান ও সামর্থ দিয়েছ,আমরা তোমার কাছে যা চেয়েছিলাম,তা আমাকে এখন জানালে;তুমি বাদশাহ্‌র স্বপ্ন আমাদেরকে জানালে।

হযরত দানিয়াল স্বপ্নের অর্থ প্রকাশ করেন

24. সুতরাং দানিয়াল সেই অরিয়োকের কাছে গেলেন, যাঁকে বাদশাহ্‌ ব্যাবিলনের বিদ্বান লোকদেরকে হত্যা করতে নিযুক্ত করেছিলেন; তিনি গিয়ে তাঁকে এরকম বললেন, আপনি ব্যাবিলনের বিদ্বান লোকদেরকে হত্যা করবেন না; বাদশাহ্‌র কাছে আমাকে নিয়ে চলুন; আমি বাদশাহ্‌কে স্বপ্নের তাৎপর্য জানাবো।

25. তখন অরিয়োক তাড়াতাড়ি দানিয়ালকে বাদশাহ্‌র কাছে নিয়ে গেলেন, আর বাদশাহ্‌কে এই কথা বললেন, নির্বাসিত ইহুদীদের মধ্যে এই এক ব্যক্তিকে পেলাম; ইনি বাদশাহ্‌কে তাঁর স্বপ্নের তাৎপর্য জানাবেন।

26. বাদশাহ্‌ বেল্টশৎসর নামে আখ্যাত দানিয়ালকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি যে স্বপ্ন দেখেছি, সেই স্বপ্ন ও তার তাৎপর্য তুমি কি আমাকে জানাতে পার?

27. দানিয়াল বাদশাহ্‌র সাক্ষাতে জবাবে বললেন, বাদশাহ্‌ যে নিগূঢ় কথা জিজ্ঞাসা করেছেন, তা বিদ্বান বা গণক বা মন্ত্রবেত্তা বা জ্যোতির্বেত্তারা বাদশাহ্‌কে জানাতে পারে না;

28. কিন্তু আল্লাহ্‌ বেহেশতে আছেন, তিনি নিগূঢ় বিষয় প্রকাশ করেন, আর ভবিষ্যতে যা যা ঘটবে, তা তিনি বাদশাহ্‌ বখতে-নাসারকে জানিয়েছেন। আপনার স্বপ্ন এবং বিছানার উপরে আপনার মনের দর্শন এই।

29. হে বাদশাহ্‌, বিছানায় আপনার মনে এই চিন্তা উৎপন্ন হয়েছিল যে, এর পরে কি হবে; আর যিনি নিগূঢ় বিষয় প্রকাশ করেন, তিনি আপনাকে ভাবী ঘটনা জানিয়েছেন।

30. কিন্তু আমার নিজের সম্বন্ধে বক্তব্য এই যে, অন্য কোন জীবিত লোকের চেয়ে আমার বেশি জ্ঞান আছে বলে যে আমার কাছে এই নিগূঢ় বিষয় প্রকাশিত হল তা নয়, কিন্তু অভিপ্রায় এই, যেন বাদশাহ্‌কে এর তাৎপর্য জানানো যায়, আর আপনি যেন আপনার মনের চিন্তা বুঝতে পারেন।

31. হে বাদশাহ্‌, আপনি দৃষ্টিপাত করেছিলেন, আর দেখলেন, একটি প্রকাণ্ড মূর্তি। সেই মূর্তিটি বিশাল এবং ভীষণ উজ্জ্বল; তা আপনার সম্মুখে দাঁড়িয়ে ছিল; আর তার দৃশ্য ভয়ঙ্কর।

32. সেই মূর্তির বৃত্তান্ত এই; তার মাথাটি সোনার, তার বুক ও বাহু রূপার; তার উদর ও ঊরুদেশ ব্রোঞ্জের;

33. তার জঙ্ঘা লোহার এবং তার পা কিছু লোহার ও কিছু মাটির ছিল।

34. আপনি দৃষ্টিপাত করতে থাকলেন, শেষে মানুষের হাতে কাটা হয় নি এমন একটি পাথর সেই মূর্তির লোহা ও মাটির দুই পায়ে আঘাত করে সেগুলো চুরমার করে ফেললো।

35. তখন সেই লোহা, মাটি, ব্রোঞ্জ, রূপা ও সোনা একসঙ্গে চুরমার হয়ে গ্রীষ্মকালীন খামারের তুষের মত হল, আর বায়ু সেসব উড়িয়ে নিয়ে গেল, তাদের জন্য আর কোথাও স্থান পাওয়া গেল না। আর যে পাথরখানি ঐ মূর্তিকে আঘাত করেছিল, তা বৃদ্ধি পেয়ে মহাপর্বত হয়ে উঠলো এবং সমস্ত দুনিয়া পূর্ণ করলো।

36. এটাই ছিল সেই স্বপ্ন। এখন আমরা বাদশাহ্‌র সাক্ষাতে এর তাৎপর্য প্রকাশ করবো।

37. হে বাদশাহ্‌, আপনি বাদশাহ্‌দের বাদশাহ্‌, বেহেশতের আল্লাহ্‌ আপনাকে রাজ্য, ক্ষমতা, পরাক্রম ও মহিমা দিয়েছেন।

38. আর যে কোন স্থানে মানুষ বাস করে, সেই স্থানে তিনি মাঠের পশু ও আসমানের পাখিদেরকে আপনার হাতে তুলে দিয়েছেন এবং তাদের সকলের উপরে আপনাকে কর্তৃত্ব দিয়েছেন; আপনিই সেই সোনার মাথা।

39. আপনার পিছনে আপনার চেয়ে ক্ষুদ্র আর একটি রাজ্য উঠবে; তারপর ব্রোঞ্জের তৃতীয় একটি রাজ্য উঠবে, তা সমস্ত দুনিয়ার উপরে কর্তৃত্ব করবে।

40. আর চতুর্থ রাজ্য লোহার মত দৃঢ় হবে; কারণ লোহা যেমন সমস্ত কিছু ভেঙ্গে চুরমার করে তেমনি সেই রাজ্য অন্য সমস্ত রাজ্যকে ভেঙ্গে চুরমার করবে।

41. আর আপনি দেখেছেন, দুই পা ও পায়ের আঙ্গুল সকল কিছু কুমারের মাটির ও কিছু লোহার, এতে বিভক্ত রাজ্য বুঝায়; কিন্তু সেই রাজ্যে লোহার দৃঢ়তা থাকবে, কেননা আপনি কাদায় মিশানো লোহা দেখেছেন।

42. আর পায়ের আঙ্গুলগুলো যেমন কিছু লোহার ও কিছু মাটির ছিল, তেমনি রাজ্যের একাংশ দৃঢ় ও একাংশ ভঙ্গুর হবে।

43. আর আপনি যেমন দেখেছেন, লোহা কাদায় মিশানো হয়েছে, তেমনি সেই লোকেরা মানুষের বীর্যে পরস্পর মিশ্রিত হবে; কিন্তু যেমন লোহা মাটির সঙ্গে মিশে যায় না, তেমনি তারা পরস্পর মিশ্রিত থাকবে না।

44. আর সেই বাদশাহ্‌দের সময়ে বেহেশতের আল্লাহ্‌ একটি রাজ্য স্থাপন করবেন, তা কখনও বিনষ্ট হবে না এবং সেই রাজত্ব অন্য জাতির হাতে তুলে দেওয়া হবে না; তা ঐ সমস্ত রাজ্যগুলোকে চুরমার করে বিনষ্ট করে নিজে চিরস্থায়ী হবে।

45. কারণ আপনি তো দেখেছেন, পর্বত থেকে একখানি পাথর যা মানুষের হাতে কাটা হয় নি এবং ঐ লোহা, ব্রোঞ্জ, মাটি, রূপা ও সোনাকে চুরমার করলো; মহান আল্লাহ্‌ বাদশাহ্‌কে ভাবী ঘটনা জানিয়েছেন; স্বপ্নটি নিশ্চিত ও তার তাৎপর্য সত্য।

হযরত দানিয়াল ও তাঁর তিন বন্ধুর পদোন্নতি

46. তখন বাদশাহ্‌ বখতে-নাসার উবুড় হয়ে দানিয়ালকে সেজ্‌দা করলেন এবং তাঁর উদ্দেশে নৈবেদ্য ও সুগন্ধি দ্রব্য উৎসর্গ করতে হুকুম দিলেন।

47. বাদশাহ্‌ দানিয়ালকে বললেন, সত্যিই তোমাদের আল্লাহ্‌ দেবতাদের আল্লাহ্‌, বাদশাহ্‌দের প্রভু ও নিগূঢ়তত্ত্ব প্রকাশক, কেননা তুমি এই নিগূঢ়তত্ত্বের বিষয় প্রকাশ করতে সমর্থ হয়েছ।

48. তখন বাদশাহ্‌ দানিয়ালকে মহান করলেন, তাঁকে অনেক বহুমূল্য উপহার দিলেন এবং তাঁকে ব্যাবিলনের সমস্ত প্রদেশের কর্তা ও ব্যাবিলনের সমস্ত বিদ্বান লোকের প্রধান অধিপতি নিযুক্ত করলেন।

49. পরে দানিয়াল বাদশাহ্‌র কাছে নিবেদন করলে বাদশাহ্‌ শদ্রক, মৈশক ও অবেদ-নগোকে ব্যাবিলন প্রদেশের রাজকার্যে নিযুক্ত করলেন; কিন্তু দানিয়াল রাজদ্বারে থাকতেন।