1-2. এদিকে শৌল প্রভুর উম্মতদের হত্যা করবেন বলে ভয় দেখাচ্ছিলেন। দামেস্ক শহরের মজলিস-খানাগুলোতে দেবার জন্য তিনি মহা-ইমামের কাছে গিয়ে চিঠি চাইলেন। যত লোক ঈসার পথে চলে, তারা পুরুষ হোক বা স্ত্রীলোক হোক, তাদের পেলে যেন তাদের বেঁধে জেরুজালেমে আনতে পারেন সেই ক্ষমতার জন্যই তিনি সেই চিঠি চেয়েছিলেন।
3. পথে যেতে যেতে যখন তিনি দামেস্কের কাছে আসলেন তখন আসমান থেকে হঠাৎ তাঁর চারদিকে আলো পড়ল।
4. তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন এবং শুনলেন কে যেন তাঁকে বলছেন, “শৌল, শৌল, কেন তুমি আমার উপর জুলুম করছ?”
5. শৌল জিজ্ঞাসা করলেন, “প্রভু, আপনি কে?”
6. তিনি বললেন, “আমি ঈসা, যাঁর উপর তুমি জুলুম করছ। এখন তুমি উঠে শহরে যাও। কি করতে হবে তা তোমাকে বলা হবে।”
7. যে লোকেরা শৌলের সংগে যাচ্ছিল তারা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তারা কথা শুনেছিল কিন্তু কাউকে দেখতে পায় নি।
8. পরে শৌল মাটি থেকে উঠলেন, কিন্তু চোখ খুললে পর কিছুই দেখতে পেলেন না। তখন তাঁর সংগীরা হাত ধরে তাঁকে দামেস্কে নিয়ে গেল।
9. তিন দিন পর্যন্ত শৌল চোখে দেখতে পেলেন না এবং কিছুই খেলেন না।
10. দামেস্ক শহরে অননিয় নামে একজন উম্মত ছিলেন। প্রভু তাঁকে দর্শন দিয়ে বললেন, “অননিয়।”জবাবে তিনি বললেন, “প্রভু, এই যে আমি।”
11-12. প্রভু তাঁকে বললেন, “সোজা নামে যে রাস্তাটা আছে তুমি সেই রাস্তায় যাও। সেখানে এহুদার বাড়ীতে শৌল বলে তার্ষ শহরের একজন লোকের তালাশ কর। সে মুনাজাত করছে এবং দর্শনে দেখেছে যে, অননিয় নামে একজন লোক এসে তার গায়ে হাত রেখেছে যেন সে আবার দেখতে পায়।”
13. অননিয় বললেন, “প্রভু, আমি অনেকের মুখে এই লোকের বিষয় শুনেছি যে, জেরুজালেমে তোমার বান্দাদের উপর সে কত জুলুম করেছে।
14. এছাড়া যারা তোমার নামে মুনাজাত করে তাদের ধরবার জন্য প্রধান ইমামদের কাছ থেকে অধিকার নিয়ে সে এখানে এসেছে।”
15. কিন্তু প্রভু অননিয়কে বললেন, “তুমি যাও, কারণ অ-ইহুদীদের ও তাদের বাদশাহ্দের এবং বনি-ইসরাইলদের কাছে আমার সম্বন্ধে তবলিগ করবার জন্য আমি এই লোককেই বেছে নিয়েছি।
16. আমার জন্য কত কষ্ট যে তাকে পেতে হবে তা আমি তাকে দেখাব।”
17. তখন অননিয় গিয়ে সেই বাড়ীর মধ্যে ঢুকলেন আর শৌলের গায়ে হাত দিয়ে বললেন, “ভাই শৌল, এখানে আসবার পথে যিনি তোমাকে দেখা দিয়েছিলেন তিনি হযরত ঈসা। তিনিই আমাকে পাঠিয়েছেন যেন তুমি তোমার দেখবার শক্তি ফিরে পাও এবং পাক-রূহে পূর্ণ হও।”
18-19. তখনই শৌলের চোখ থেকে আঁশের মত কিছু একটা পড়ে গেল এবং তিনি আবার দেখতে পেলেন। এর পরে তিনি উঠে পানিতে তরিকাবন্দী নিলেন এবং খাওয়া-দাওয়া করে শক্তি ফিরে পেলেন।শৌল দামেস্কের উম্মতদের সংগে কয়েক দিন রইলেন।
20. তার পরে সময় নষ্ট না করে তিনি ভিন্ন ভিন্ন মজলিস-খানায় এই কথা তবলিগ করতে লাগলেন যে, ঈসাই ইব্নুল্লাহ্।
21. যারা তাঁর কথা শুনত তারা আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করত, “জেরুজালেমে যারা ঈসার নামে মুনাজাত করে তাদের যে জুলুম করত এ কি সেই লোক নয়? এখানেও যারা তা করে তাঁদের বেঁধে প্রধান ইমামদের কাছে নিয়ে যাবার জন্যই কি সে এখানে আসে নি?”
22. শৌল কিন্তু আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে লাগলেন এবং ঈসাই যে মসীহ্ তা প্রমাণ করলেন। এতে দামেস্কের ইহুদীরা বুদ্ধিহারা হয়ে গেল।
23. এর অনেক দিন পরে ইহুদীরা তাঁকে হত্যা করবার ষড়যন্ত্র করতে লাগল,
24. কিন্তু শৌল তাদের ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পারলেন। তাঁকে হত্যা করবার জন্য ইহুদীরা শহরের দরজাগুলো দিনরাত পাহারা দিতে লাগল।
25. কিন্তু একদিন রাতের বেলা শৌলের শাগরেদেরা একটা ঝুড়িতে করে দেয়ালের একটা জানালার মধ্য দিয়ে তাঁকে নীচে নামিয়ে দিল।
26. শৌল জেরুজালেমে এসে উম্মতদের সংগে যোগ দিতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু তারা সবাই তাঁকে ভয় করতে লাগল। তারা বিশ্বাস করতে পারল না যে, শৌল সত্যিই একজন উম্মত হয়েছেন।
27. কিন্তু বার্নাবাস তাঁকে সংগে করে সাহাবীদের কাছে নিয়ে গিয়ে তাঁদের জানালেন, দামেস্কের পথে শৌল কিভাবে হযরত ঈসাকে দেখতে পেয়েছিলেন এবং ঈসা তাঁর সংগে কিভাবে কথা বলেছিলেন, আর দামেস্কে ঈসার সম্বন্ধে তিনি কিভাবে সাহসের সংগে তবলিগ করেছিলেন।
28. এর পরে শৌল জেরুজালেমে উম্মতদের সংগে রইলেন এবং তাঁদের সংগে চলাফেরা করতেন ও প্রভুর বিষয়ে সাহসের সংগে তবলিগ করে বেড়াতেন।
29. যে ইহুদীরা গ্রীক ভাষা বলত তাদের সংগে তিনি কথা বলতেন ও তর্ক করতেন, কিন্তু এই ইহুদীরা তাঁকে হত্যা করবার চেষ্টা করতে লাগল।
30. ঈমানদার ভাইয়েরা এই কথা শুনে তাঁকে সিজারিয়া শহরে নিয়ে গেলেন এবং পরে তাঁকে তার্ষ শহরে পাঠিয়ে দিলেন।
31. সেই সময় এহুদিয়া, গালীল ও সামেরিয়া প্রদেশের জামাতগুলোতে শান্তি ছিল, আর সেই জামাতগুলো গড়ে উঠছিল। ফলে প্রভুর প্রতি ভয়ে ও পাক-রূহের উৎসাহে তাদের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছিল।
32. পিতর সব জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে লুদ্দা গ্রামে আল্লাহ্র যে বান্দারা ছিলেন তাঁদের কাছে আসলেন।
33. সেই গ্রামে ঐনিয় বলে একজন লোক ছিল। সে অবশ রোগে আট বছর ধরে বিছানায় পড়ে ছিল।
34. পিতর তাকে দেখে বললেন, “ঐনিয়, ঈসা মসীহ্ তোমাকে ভাল করলেন। ওঠো, তোমার বিছানা তুলে নাও।” আর তখনই ঐনিয় উঠে দাঁড়াল।
35. তখন লুদ্দা ও শারোণ গ্রামের সমস্ত লোক ঐনিয়কে দেখে প্রভুর দিকে ফিরল।
36. জাফা শহরে টাবিথা নামে একজন উম্মত ছিলেন। গ্রীক ভাষায় এই নামের অর্থ দর্কা। তিনি সব সময় অন্যদের উপকার করতেন ও গরীবদের সাহায্য করতেন।
37. তিনি অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছিলেন, আর লোকেরা তাঁকে গোসল করিয়ে উপরের কামরায় রেখেছিল।
38. জাফা ছিল লুদ্দার কাছে; এইজন্য উম্মতেরা যখন শুনল যে, পিতর লুদ্দাতে আছেন তখন তারা দু’জন লোক তাঁর কাছে পাঠিয়ে তাঁকে এই অনুরোধ জানাল, “আপনি তাড়াতাড়ি করে আমাদের কাছে আসুন।”
39. তখন পিতর তাদের সংগে গেলেন। তিনি সেখানে পৌঁছালে পর সেই উপরের কামরায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল। সমস্ত বিধবারা তখন পিতরের চারদিকে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগল এবং দর্কা বেঁচে থাকতে যে সব কোর্তা ও অন্যান্য কাপড়-চোপড় তৈরী করেছিলেন তা পিতরকে দেখাতে লাগল।
40. তখন পিতর তাদের সবাইকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে হাঁটু পেতে মুনাজাত করলেন। তারপর সেই মৃত স্ত্রীলোকটির দিকে ফিরে বললেন, “টাবিথা, ওঠো।” তাতে দর্কা চোখ খুললেন এবং পিতরকে দেখে উঠে বসলেন।
41. পিতর তখন তাঁর হাত ধরে তাঁকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করলেন। পরে তিনি আল্লাহ্র বান্দাদের ও বিধবাদের ডেকে তাদের দেখালেন যে, দর্কা বেঁচে উঠেছেন।
42. এই কথা জাফা শহরের সবাই জানতে পারল এবং অনেকেই প্রভুর উপর ঈমান আনল।
43. পিতর জাফাতে শিমোন নামে একজন লোকের বাড়ীতে বেশ কিছু দিন কাটালেন। এই শিমোন চামড়ার কাজ করত।