অধ্যায়

  1. 1
  2. 2
  3. 3
  4. 4
  5. 5
  6. 6
  7. 7
  8. 8
  9. 9
  10. 10
  11. 11
  12. 12

ওল্ড টেস্টামেন্ট

নববিধান

দানিয়াল 4 Kitabul Mukkadas (MBCL)

গাছের বিষয়ে স্বপ্ন

1. পরে বাদশাহ্‌ বখতে-নাসার দুনিয়ার সমস্ত জাতির, দেশের ও ভাষার লোকদের কাছে এই সংবাদ পাঠালেন:তোমাদের প্রচুর উন্নতি হোক।

2. আল্লাহ্‌তা’লা আমার জন্য যে সব অলৌকিক চিহ্ন ও কুদরতি দেখিয়েছেন তা আমি খুশী হয়েই তোমাদের জানাচ্ছি।

3. তাঁর চিহ্ন-কাজগুলো কত মহান, তাঁর কুদরতি কাজগুলো কত শক্তিশালী! তাঁর রাজ্য অনন্তকালের রাজ্য, আর তাঁর রাজত্ব যুগের পর যুগ স্থায়ী।

4. আমি বখতে-নাসার আরাম ও সফলতায় পূর্ণ হয়ে আমার রাজবাড়ীতে ছিলাম।

5. আমি যখন বিছানায় শুয়ে ছিলাম তখন একটা স্বপ্ন দেখে ভয় পেলাম; সেই স্বপ্নে আমি যা যা দেখলাম তা আমার মনে ভয় ধরিয়ে দিল।

6. সেইজন্য আমার স্বপ্নের অর্থ ব্যাখ্যা করবার জন্য আমি ব্যাবিলনের সমস্ত রাজ-পরামর্শদাতাদের আমার সামনে আনবার হুকুম দিলাম।

7. জাদুকর, ভূতের ওঝা, জ্যোতিষী ও গণকেরা আমার কাছে আসলে পর আমি তাদের কাছে স্বপ্নটা বললাম, কিন্তু তারা তার অর্থ বলতে পারল না।

8. শেষে দানিয়াল আমার সামনে আসলে পর আমি তাকে স্বপ্নটা বললাম। আমার দেবতার নাম অনুসারে তাকে বেল্টশৎসর নাম দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে পবিত্র এমন কিছু রয়েছে যা এই দুনিয়ার নয়।

9. আমি বললাম, “হে জাদুকরদের প্রধান বেল্টশৎসর, আমি জানি তোমার মধ্যে পবিত্র এমন কিছু রয়েছে যা এই দুনিয়ার নয় এবং কোন গোপন বিষয় জানা তোমার কাছে খুব কঠিন নয়। আমার এই স্বপ্নটার অর্থ তুমি বলে দাও।

10. বিছানায় শুয়ে আমি এই দর্শন দেখেছিলাম। আমি তাকিয়ে দেখলাম একটা গাছ দুনিয়ার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে; সেটা খুবই উঁচু।

11. গাছটা বেড়ে উঠে বিরাট ও শক্তিশালী হল এবং তার মাথাটা গিয়ে আকাশ ছুঁলো; দুনিয়ার শেষ সীমা থেকেও গাছটা দেখা যাচ্ছিল।

12. তার পাতাগুলো ছিল সুন্দর ও ফল ছিল প্রচুর এবং তা থেকে সকলেই খাবার পেত। তার নীচে মাঠের পশুরা আশ্রয় পেত এবং আকাশের পাখীরা তার ডালে বাস করত; সমস্ত প্রাণীই তা থেকে খাবার পেত।

13. “বিছানায় শুয়ে সেই দর্শনের মধ্যে আমি তাকিয়ে দেখলাম যে, একজন পবিত্র পাহারাদার বেহেশত থেকে নেমে আসলেন।

14. তিনি জোর গলায় বললেন, ‘গাছটা কেটে ফেল ও তার ডালগুলো ছেঁটে ফেলে দাও; তার পাতাগুলো ঝেড়ে ফেল এবং ফলগুলো ছড়িয়ে দাও। তার তলা থেকে পশুরা ও ডালপালা থেকে পাখীরা পালিয়ে যাক,

15. কিন্তু তার গোড়া ও শিকড়গুলো লোহা ও ব্রোঞ্জ দিয়ে বাঁধা অবস্থায় মাটিতে মাঠের ঘাসের মধ্যে থাকুক। আকাশের শিশিরে সে ভিজুক এবং দুনিয়ার গাছপালার মধ্যে পশুদের সংগে সে বাস করুক।

16. তার আর মানুষের স্বভাব না থাকুক এবং সাত বছর পর্যন্ত তাকে পশুর স্বভাব দেওয়া হোক।

17. “ ‘যে রায় দেওয়া হল তা পাহারাদারেরা, অর্থাৎ পবিত্র ফেরেশতারা ঘোষণা করছেন, যাতে জীবিত লোকেরা জানতে পারে যে, মানুষের রাজ্যগুলোর উপরে আল্লাহ্‌তা’লা কর্তৃত্ব করেন এবং তিনি যাকে খুশী তাকে রাজ্য দান করেন ও মানুষের মধ্যে সবচেয়ে যে নীচু তাকেই তার উপরে বসান।’

18. “এটা সেই স্বপ্ন যা আমি বাদশাহ্‌ বখতে-নাসার দেখেছি। এখন হে বেল্টশৎসর, তুমি বল এর অর্থ কি? আমার রাজ্যের কোন পরামর্শদাতাই এর অর্থ আমাকে বলে দিতে পারে নি; কিন্তু তুমি পারবে, কারণ তোমার মধ্যে পবিত্র এমন কিছু রয়েছে যা এই দুনিয়ার নয়।”

স্বপ্নের অর্থ

19. তখন দানিয়াল, অর্থাৎ বেল্টশৎসর স্বপ্নের কথা চিন্তা করে ভয় পেল এবং কিছু সময়ের জন্য হতভম্ব হয়ে রইল। এতে বাদশাহ্‌ বললেন, “হে বেল্টশৎসর, স্বপ্ন কিংবা তার অর্থ তোমাকে চিনি-ত না করুক।”বেল্টশৎসর জবাব দিলেন, “হে হুজুর, এই স্বপ্ন এবং তার অর্থ আপনার শত্রুদের উপর ঘটুক।

20. আপনি যে গাছটা দেখেছিলেন, যেটা বিরাট ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল, যার মাথা আকাশ ছুঁয়েছিল ও যেটা দুনিয়ার সবাই দেখতে পেয়েছিল,

21. যাতে সুন্দর পাতা ও প্রচুর ফল ছিল, যা সকলকে খাবার যোগাত, যা মাঠের পশুদের আশ্রয় দিত এবং যার ডালে আকাশের পাখীরা থাকবার জায়গা পেত-

22. আপনি, হে মহারাজ, আপনিই সেই গাছ। আপনি মহান ও বলবান হয়েছেন; আপনার শক্তি বেড়ে গিয়ে আকাশ পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং আপনার রাজ্য দুনিয়ার শেষ সীমা পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে।

23. “আপনি, হে মহারাজ, একজন পবিত্র পাহারাদারকে বেহেশত থেকে নেমে আসতে দেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘গাছটা কেটে ধ্বংস করে ফেল, কিন্তু তার গোড়া ও শিকড়গুলো লোহা ও ব্রোঞ্জ দিয়ে বেঁধে মাটিতে মাঠের ঘাসের মধ্যে ফেলে রেখে দাও। সে আকাশের শিশিরে ভিজুক; সাত বছর পর্যন্ত সে পশুদের সংগে বাস করুক।’

24. “হে মহারাজ, আমি এখন যা বলছি তা হল আমার প্রভু মহারাজের স্বপ্নের অর্থ এবং তাঁর বিরুদ্ধে আল্লাহ্‌তা’লার রায়।

25. আপনাকে লোকদের কাছ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং আপনি পশুদের সংগে বাস করবেন; আপনি ষাঁড়ের মত ঘাস খাবেন এবং আকাশের শিশিরে ভিজবেন। এইভাবে সাত বছর চলে যাবে, যে পর্যন্ত না আপনি মেনে নেবেন যে, মানুষের রাজ্যগুলোর উপরে আল্লাহ্‌তা’লা কর্তৃত্ব করেন এবং তিনিই সেই সব রাজ্য যাকে ইচ্ছা তাকে দেন।

26. শিকড়সুদ্ধ গাছটার গোড়া রেখে দেওয়ার হুকুমের মানে হল, আপনি যখন মেনে নেবেন যে, বেহেশতের আল্লাহ্‌ কর্তৃত্ব করেন তখন আপনার রাজ্য আপনাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

27. কাজেই হে মহারাজ, আপনি আমার পরামর্শ গ্রহণ করুন। আপনি ন্যায় কাজ করে এবং গরীবদের প্রতি দয়ালু হয়ে আপনার গুনাহ্‌ ও অন্যায় ত্যাগ করুন। তাহলে হয়তো আপনার ভাল অবস্থা স্থির থাকবে।”

28-30. এই সমস্তই বাদশাহ্‌ বখতে-নাসারের উপর ঘটল। বারো মাস পরে তিনি যখন ব্যাবিলনের রাজবাড়ীর ছাদে বেড়াচ্ছিলেন তখন বললেন, “আমার মহাশক্তির দ্বারা এবং আমার জাঁকজমকের গৌরব প্রকাশের জন্য রাজধানী হিসাবে যেটা আমি তৈরী করেছি এ কি সেই মহান ব্যাবিলন নয়?”

31. কথাগুলো তাঁর মুখে থাকতে থাকতেই বেহেশত থেকে কেউ বললেন, “হে বাদশাহ্‌ বখতে-নাসার, তোমাকে বলা হচ্ছে যে, তোমার রাজ্য তোমার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়েছে।

32. তোমাকে লোকদের কাছ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং তুমি পশুদের সংগে বাস করবে; ষাঁড়ের মত তুমি ঘাস খাবে। যে পর্যন্ত না তুমি মেনে নেবে যে, আল্লাহ্‌তা’লা মানুষের রাজ্যগুলোর উপরে কর্তৃত্ব করেন এবং সেই সব রাজ্য যাকে ইচ্ছা তাকে দেন সেই পর্যন্ত সাত বছর চলে যাবে।”

33. বখতে-নাসারের সম্বন্ধে যা বলা হয়েছিল তখনই তা পূর্ণ হল। মানুষের কাছ থেকে তাঁকে তাড়িয়ে দেওয়া হল এবং তিনি ষাঁড়ের মত ঘাস খেতে লাগলেন। তাঁর শরীর আকাশের শিশিরে ভিজতে লাগল; তাঁর চুলগুলো ঈগল পাখীর পালখের মত হয়ে উঠল আর তাঁর নখগুলো পাখীর পায়ের নখের মত হয়ে গেল।

34. সেই সময় শেষ হয়ে গেলে পর আমি বখতে-নাসার বেহেশতের দিকে চোখ তুললাম এবং আমার মনের সুস্থতা ফিরে আসল। তখন আমি আল্লাহ্‌তা’লার গৌরব করলাম; যিনি চিরকাল জীবিত আছেন আমি তাঁকে সম্মান দেখালাম ও তাঁর প্রশংসা করলাম। আমি বললাম, “আল্লাহ্‌র রাজ্য অনন্তকালের রাজ্য; তাঁর রাজত্ব যুগের পর যুগ স্থায়ী।

35. দুনিয়ার সমস্ত লোক তাঁর কাছে যেন কিছুই নয়। তিনি ফেরেশতাদের ও দুনিয়ার লোকদের নিয়ে তাঁর ইচ্ছামত কাজ করেন। এমন কেউ নেই যে, তাঁর হাত থামিয়ে দিতে পারে কিংবা তাঁকে বলতে পারে, ‘তুমি কি করছ?’ ”

36. যখন আমার মনের সুস্থতা ফিরে আসল তখন আমার রাজ্যের সম্মানের জন্য আমার জাঁকজমক ও গৌরব আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হল। আমার মন্ত্রীরা ও প্রধান লোকেরা আমাকে খুঁজে বের করল এবং আমাকে আবার সিংহাসনে বসানো হল আর আমি আগের চেয়েও বেশী মহান হলাম।

37. এখন আমি বখতে-নাসার সেই বেহেশতের বাদশাহ্‌র প্রশংসা, সম্মান ও গৌরব করি, কারণ তিনি যা কিছু করেন তা ঠিক, আর তাঁর সব পথই ন্যায়ে পূর্ণ। যারা অহংকারের বশে চলে তাদের তিনি নীচু করতে পারেন।